আব্দুল কুদ্দুস, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) থেকে:
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার করতোয়া নদীর পাড়ে দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত একটি জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া এবং গুজব ছড়িয়েছে, যা সামাজিক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ণ করার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শাহজাদপুর করতোয়া নদীর সেতুর পশ্চিম পাড়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি দখল করে “আল-জামি’আ আল-ইসলামিয়া মাদীনাতুল উলূম” নামক একটি মাদরাসার পক্ষ থেকে ঈদগাহ মাঠ সম্প্রসারণের নামে সেখানে অবৈধভাবে বালু ফেলে ভরাটের কাজ চলছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মুশকিকুর রহমান জানান, থানার ঘাট এলাকায় কেউ দখল করতে না পারে এজন্য পূর্বেই “সংরক্ষিত এলাকা” উল্লেখ করে একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু সেটি সরিয়ে ফেলে মাদরাসার লোকজন বালু ফেলে জায়গাটি ভরাট করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে আরও জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে হিন্দু সম্প্রদায় থানার ঘাটে দুর্গাপূজার প্রতিমা বিসর্জনের জন্য স্থানটি ব্যবহার করে আসছে। পুজা উদযাপন পরিষদের দাবি অনুযায়ী, এ বছর বাংলাদেশ পৌর উন্নয়ন তহবিল (এডিবি)-এর অর্থায়নে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি পাকা প্লাটফর্ম নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়, যেখানে দুর্গাপূজা চলাকালীন নিরাপত্তাকর্মী ও অতিথিদের বসার ব্যবস্থা থাকবে।
গত ২২ মে সরেজমিনে দেখা যায়, মাদরাসার কয়েকজন ব্যক্তি জায়গাটিতে টিনের বেড়া দিয়ে বালু ভরাট করছেন। মাদরাসার এক শিক্ষক আব্দুল ওয়াদুদ দাবি করেন, ঈদগাহ মাঠে স্থান সংকুলান না হওয়ায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জায়গাটি ভরাট করা হচ্ছে। তবে তিনি আরও বলেন, “ঠিকাদারের লোকজন জানিয়েছে এখানে হিন্দুদের পুজার জন্য মন্দির নির্মাণ করা হবে—এই কথা জানার পর স্থানীয়রা তাদের কাজ করতে দেয়নি।”
শাহজাদপুর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বাসু দত্ত বলেন, “গত তিন যুগ ধরে থানার ঘাট এলাকায় হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। কয়েকদিন আগে পাকা প্লাটফর্ম নির্মাণের কাজ শুরু হলেও বাধার মুখে তা বন্ধ হয়ে যায়। এখন একটি প্রভাবশালী মহল জোর করে জায়গাটি দখল করছে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান বলেন, “কেউ কেউ গুজব ছড়াচ্ছে যে শাহজাদপুর পৌরসভার অর্থায়নে ওই জায়গায় মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে—এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। ওখানে দুর্গাপূজার সময় নিরাপত্তার জন্য একটি পাকা প্লাটফর্ম নির্মাণ ছাড়া আর কিছুই হচ্ছে না।” তিনি স্থানীয়দের গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান।
ইউএনও আরও জানান, ১৬ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ মিটার প্রস্থের একটি প্লাটফর্ম নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি পূজার সময় নিরাপত্তা বাহিনী ও অতিথিদের বসার জন্য ব্যবহৃত হবে।