ফরিদপুর প্রতিনিধি :
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়ন ভূমি অফিসে সেবা নিতে হলে দিতে হচ্ছে ঘুষ কিংবা করতে হচ্ছে অপ্রকাশ্য “চুক্তি”—এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক সেবাপ্রত্যাশী। জমির নামজারি (মিউটেশন) থেকে শুরু করে খাজনা আদায় বা অনলাইন আইডি খোলা—সব কাজেই নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।
একাধিক অভিযোগে উঠে এসেছে, সরকারি ফি ১১৭০ টাকার জায়গায় নেওয়া হচ্ছে ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। অফিস সংশ্লিষ্ট একটি দালালচক্র নিয়মিত এসব ঘুষ আদায়ে ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা
এহরামুজ্জামান নামের এক সেবাপ্রত্যাশী জানান,
“বাবার মৃত্যুর পর সম্পত্তির মিউটেশন করতে গিয়ে তিন-চার দিন অফিসে ঘোরাঘুরির পর তহসিলদার বললেন, ‘অফিস খরচ না দিলে ফরওয়ার্ডিং হবে না’। বাধ্য হয়ে ১ হাজার টাকা দিয়ে কাজ করিয়েছি।”
চাপলডাঙ্গার সৌদি প্রবাসী নাজমুল হোসেন জানান,
“৮ শতাংশ জমির মিউটেশন করতে অফিস থেকে ১০ হাজার টাকা চাওয়া হয়েছে।”
সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আহসান হাবিব হাসান ও মিলন শেখ বলেন,
“কোনো কাজই ৫-৬ হাজার টাকার নিচে হয়নি। ঘুষ না দিলে ফাইল উপজেলার এসিল্যান্ড অফিসেও পাঠানো হয় না।”
তহসিলদারের প্রতিক্রিয়া: ‘চলতেছে’
বারবার ফোন করার পর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা জহিরুল হক ফোন রিসিভ করে শুধু বলেন,
“চলতেছে।”
তার কাছে জানতে চাইলে সংক্ষেপে বলেন,
“যা বলেছি তাই। এখন আর কিছু বলবো না।”
অফিস ঘিরে দালালচক্র ও কম্পিউটার দোকান
ভূমি অফিসটির চারপাশে রয়েছে কম্পিউটার দোকান—যেমন সেলিম মুন্সি, পান্নু শেখ, জাহিদ ঠাকুর ও রবিউল ইসলাম। স্থানীয় সূত্র মতে, এ দোকানগুলো ভূমি সেবার নামে অতিরিক্ত টাকা তুলে দিচ্ছে ভূমি কর্মকর্তাদের হাতে।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া ও অবস্থান
সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন,
“অনলাইনে সেবার কারণে অনেক দুর্নীতি কমেছে। কিন্তু কিছু মানুষ না বুঝে তৃতীয়পক্ষের মাধ্যমে কাজ করায় প্রতারিত হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সুশাসনের পক্ষে অবস্থান
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব মাসুদ রানা বলেন,
“সরকারের তৃণমূল সেবা নিশ্চিতকরণে যারা বাধা সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলনে যাব।”
সুজনের জেলা সম্পাদক অ্যাডভোকেট গাজী শাহিদুজ্জামান লিটন বলেন,
“ডিজিটালাইজেশন হলেও মনিটরিং দুর্বল। কর্মকর্তাদের সেবামূলক মানসিকতা না থাকলে ডিজিটাল সেবা অর্থহীন।”
দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাসানউজ্জামান বলেন,
“দুর্নীতিপ্রবণ দপ্তরগুলো নিয়মিত তদারকি করতে হবে। সচেতনতা ও প্রতিবাদ এখন জরুরি।”