২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় পলাতক আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী জুলাইয়ের শেষ ভাগে কিংবা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, “জুলাই মাসের শেষের দিকে কিংবা আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে শেখ হাসিনার মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে বলে আমরা প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আশা করছি।”
এর আগে, গত ১ জুলাই বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ মামলাটির অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন ট্রাইব্যুনালের সামনে চিফ প্রসিকিউটর শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে পাঁচটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তুলে ধরেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সারা বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে সুনির্দিষ্ট ও পদ্ধতিগতভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এই অপরাধ সংঘটিত হয়েছে একটি ‘চেইন অব কমান্ড’ অনুসরণ করে, যার নেতৃত্বে ছিলেন শেখ হাসিনা।” তিনি আরও বলেন, “সব জায়গায় একই পদ্ধতিতে একই ধরনের প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে। এটা স্পষ্টভাবে দেখায়, পুরো অপরাধটি ছিল পরিকল্পিত এবং সিস্টেমেটিক।”
তিনি ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন জানান, পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আটক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হোক।
এসময় রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে দুই সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন করলে ট্রাইব্যুনাল পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী সোমবার (৮ জুলাই) দিন ধার্য করেন। ওই শুনানিতে গ্রেফতারকৃত আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, মামলাটির অভিযোগ গঠন বিষয়ক ১ জুলাইয়ের শুনানিটি বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি) সরাসরি সম্প্রচার করে, যা দেশের ইতিহাসে বিরল নজির।
এর আগে, ১৬ জুন ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালকে সাত দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের জন্য জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেও পলাতক দুই আসামি ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় তাদের অনুপস্থিতিতেই শুনানি শুরু হয়।
এই মামলার ফর্মাল চার্জ আমলে নেওয়া হয় গত ১ জুন, যা ছিল পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম আনুষ্ঠানিক মামলা। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র ও সাধারণ মানুষের ওপর সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, গুমসহ পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়।
এছাড়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। একটি মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের অভিযোগ এবং অন্যটি ২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলাম সমাবেশে পুলিশের অভিযান ও হতাহতের ঘটনা কেন্দ্র করে দায়ের করা হয়েছে।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র ও জনতার ওপর দমন-পীড়ন চালাতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতা, নির্বিচার গুলি, হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এরই প্রেক্ষিতে সাবেক সরকার প্রধানসহ শীর্ষ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর দাবি ওঠে।
বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই বিষয়ে একাধিক মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলমান।