হাউসের একদল রিপাবলিকান বিদ্রোহী অবশেষে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে অবস্থান নেন এবং তার এজেন্ডা ভোটে ওঠাতে সম্মত হন—যদিও কয়েক দিন ধরেই তারা বিলটিকে চূড়ান্ত ভোটে ঠেকাতে হুমকি দিচ্ছিলেন।
এই দলটিতে আছেন কিছু কঠোরপন্থী রিপাবলিকান, যারা বলছেন বিলটি পরবর্তী দশকে বাজেটে অতিরিক্ত ৩.৩ ট্রিলিয়ন ডলার ঘাটতি তৈরি করবে, আবার আছেন মাঝামাঝি অবস্থানের সদস্যরাও, যারা মেডিকেইড কাটছাঁট নিয়ে উদ্বিগ্ন।
হাউস বৃহস্পতিবার ভোরে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়াগত ভোটে বিলটিকে এগিয়ে নিতে ভোট দেয়—যেখানে রিপাবলিকান নেতৃত্ব দীর্ঘ সময় ধরে “না” ভোটারদের রাজি করানোর চেষ্টা করে। ভোটের ফলাফল ছিল ২১৯-২১৩; মাত্র একজন রিপাবলিকান—রিপ. ব্রায়ান ফিটজপ্যাট্রিক—“না” ভোট দেন।
গণনা অনুযায়ী, এখন রিপাবলিকান নেতৃত্ব বিশ্বাস করছেন যে চূড়ান্ত পূর্ণাঙ্গ ভোটে তারা বিলটি পাস করাতে পারবেন, যদিও এটি এখনও নিশ্চিত নয়। বৃহস্পতিবার সকালে চূড়ান্ত ভোটের সম্ভাবনা রয়েছে, তবে সময় এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই ট্রাম্প ও তার দল কংগ্রেস রিপাবলিকানদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তারা শেষ পর্যন্ত কঠোরপন্থীদের রাজি করাবেন। এই সময়টাতে ট্রাম্প ও তার ঘনিষ্ঠরা বারবার হোয়াইট হাউসে রিপাবলিকান সদস্যদের ডেকে এনে আলোচনা করেছেন, তাদের অভিযোগ শুনেছেন, বিশেষ করে সিনেট পাসকৃত সংস্করণ নিয়ে।
মাঝারি অবস্থানের রিপাবলিকানদের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প ছিলেন ‘সৌহার্দ্যপূর্ণ’, এক সদস্য জানান। এই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন ড. মেহমেত ওজ, যিনি মেডিকেইড সংশ্লিষ্ট এজেন্সির প্রধান। তিনি সিনেট বিলের বিভিন্ন দিক যেমন হাসপাতাল ফান্ডিং, কর কাঠামো, ও প্রোভাইডার ট্যাক্স নিয়ে ব্যাখ্যা দেন।
রিপ. ডাসটি জনসন বৈঠক শেষে বলেন, “এই বৈঠকগুলোর বড় প্রভাব পড়ছে, অনেকেই এখন ‘হ্যাঁ’ ভোটে ফিরছেন।”
হাউস মেজরিটি হুইপ স্টিভ স্কালিস বলেন, “প্রেসিডেন্ট প্রথম দিন থেকেই আমাদের সেরা ‘ক্লোজার’। তিনিই আমাদের সেরা ভরসা আজকেও।”
ট্রাম্প ও স্পিকার জনসন চাচ্ছেন, এই বিল ৪ঠা জুলাইয়ের আগেই পাস হোক, যাতে সেই দিনে ট্রাম্প এতে স্বাক্ষর করতে পারেন। তাই আর আলোচনার সময়ও নেই, ভুল করার সুযোগও নেই—কারণ পুরো উপস্থিতি থাকলে মাত্র তিনটি ভোট হারানো যাবে।
এই সপ্তাহটি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক টার্নিং পয়েন্ট হতে চলেছে। যদিও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, ঘাটতির আশঙ্কা ও সামাজিক সুরক্ষা খাতে কাটছাঁটের কারণে অনেক রিপাবলিকানই বিলটি নিয়ে দ্বিধায় রয়েছেন, তবে ট্রাম্প বিশ্বাস করেন এটি তার সীমান্ত নিরাপত্তা, করনীতি ও ফেডারেল ব্যয়ের সংস্কারে চূড়ান্ত পদক্ষেপ হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তবে হাউস ফ্রিডম ককাস (কট্টরপন্থী ডানপন্থীদের দল) নতুন একটি মেমো প্রকাশ করে জানায়, তারা এখনো বিলটির সিনেট সংস্করণ নিয়ে আপত্তি জানায়। তাদের মতে, বিলটিতে এনার্জি ট্যাক্স ক্রেডিটে শিথিলতা, বাজেট ঘাটতির বৃদ্ধির মতো বিষয় রয়েছে।
এই দলের চেয়ারম্যান, রিপ. অ্যান্ডি হ্যারিস বলেন, তিনি হোয়াইট হাউসের বৈঠকে যাননি এবং এখনো বিলের বিরুদ্ধে ভোট দেবেন।
টেক্সাসের রিপ. কিথ সেলফ বলেন, “আমাকে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোই হয়নি।”
বিলটি সিনেটেও কঠিন লড়াইয়ের পর পাস হয়—যেখানে ট্রাম্প বহু রিপাবলিকানকে রাজি করাতে দিনরাত কাজ করেন। এই বিলটি ট্রিলিয়ন ডলারের ট্যাক্স কাটছাঁট ও প্রতিরক্ষা-বর্ডার খাতে ব্যয় বৃদ্ধির কথা বললেও, এটি দেশের সামাজিক সুরক্ষা খাতের অন্যতম বড় কাটছাঁটেরও সূচনা করেছে।
তবে হাউস নেতৃত্ব মনে করছে তারা বিলটি পাস করাতে পারবে। স্পিকার জনসনকে এখনও মধ্যপন্থী ও কঠোরপন্থীদের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হচ্ছে।
গত সপ্তাহান্তে একটি নাটকীয় ঘটনা ঘটে: রিপাবলিকান সিনেটর থম টিলিস ঘোষণা দেন, তিনি পুনরায় নির্বাচন করবেন না, কারণ তিনি ট্রাম্পের বিপক্ষে গিয়ে বিলটি ব্লক করতে ভোট দিয়েছিলেন। ট্রাম্প প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করায় পরদিনই তিনি সরে দাঁড়ান।
এখনও চূড়ান্ত ভোটের আগে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ বাকি আছে—“ভোট অন দ্য রুল” নামক প্রক্রিয়াগত ভোট। কিছু রিপাবলিকান এটি ঠেকানোর হুমকি দিচ্ছেন।
তবে একটি প্রাথমিক বাধা পেরিয়েছে বিলটি: হাউস রুলস কমিটি প্রায় ১২ ঘণ্টার বৈঠক শেষে বিলটি এগিয়ে নিতে সম্মত হয়। তবে দুই কট্টরপন্থী রিপাবলিকান—রিপ. র্যাল্ফ নরম্যান ও চিপ রয়—ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে মিলে এর বিরোধিতা করেন।
রিপ. থমাস ম্যাসি, যিনি বিলের ঘাটতি বৃদ্ধির কারণে বরাবরই এর বিরুদ্ধে ছিলেন, বলেন, “৪ জুলাইয়ের সময়সীমা একটি ‘মনগড়া সময়সীমা’। বাজেট ডুবিয়ে আতশবাজি ফোটানোর কোনো মানে হয় না।”