বাংলা এফএম ডেস্ক
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী) তার দায়িত্ব গ্রহণের পর অষ্টম মাসে এসে নিজের কাজের খতিয়ান প্রকাশ করেছেন। তাছাড়াও অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে দেশে কী পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে- এনিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে চলছে আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিও এসব বিষয়ে নানা আলোচনা করছে। এদিকে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) কাছে ‘গত ৮ মাসের আমলনামা’ চেয়েছেন।
এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন আশিক চৌধুরী। গত ৮ মাসের আমলনামা প্রকাশ করেছেন তিনি। শুক্রবার (৬ জুন) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে ‘আমাদের আমলনামা’ শিরোনামে একটি বিশদ স্ট্যাটাসে তিনি বিডা-বেজার অধীনে গৃহীত নীতিমালা, বাস্তবায়ন অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য তুলে ধরেন।
তিনি উল্লেখ করেন, “তথ্য প্লিজ ভেরিফায়েড সোর্স থেকে নেবেন। ভুল তথ্যের শিকার হবেন না। আমাদের জিজ্ঞেস করুন। আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।”
বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে ৩০টি উদ্যোগ, এগিয়ে ১৮টিতে
দায়িত্ব গ্রহণের শুরুতেই দেশি-বিদেশি ২০০-এর বেশি বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আলোচনা করে বিডা ৩০টি কার্যক্রম চিহ্নিত করে। এর মধ্যে ১৮টি পরিকল্পনার চেয়ে এগিয়ে আছে, ৭টি অন ট্র্যাক এবং ৫টি পিছিয়ে রয়েছে বলে জানান তিনি।
অগ্রসর প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে:
ফোকাসড ইকোনমিক জোন: ১০০টির বদলে ৫টি জোনে বিশেষায়িত অবকাঠামো উন্নয়ন
ডিফেন্স ইকোনমিক জোন: সামরিক শিল্পে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষ উদ্যোগ
ওয়ান স্টপ সার্ভিস (OSS): পরিসংখ্যানসহ সেবাদানের অগ্রগতি ওয়েবসাইটে প্রকাশ
স্টার্টার প্যাক: ব্যবসা শুরুতে প্রয়োজনীয় অনুমোদন ডিজিটাল ফর্মে রূপান্তর
FDI হিটম্যাপ ও সেমিকন্ডাক্টর টাস্কফোর্স: খাতভিত্তিক বিনিয়োগ কৌশল নির্ধারণ
পিছিয়ে থাকা ৫টি খাত
যেসব উদ্যোগ এখনো কাঙ্ক্ষিত গতি পায়নি, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল গঠন
পুঁজি প্রত্যাবর্তন নীতি সংস্কার
ট্যাক্স সংক্রান্ত নিয়মে স্পষ্টতা
বিডার কাঠামোগত সংস্কার
জ্বালানি নিরাপত্তা কৌশল নির্ধারণ
অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও বিনিয়োগ স্থিতিশীল
আশিক চৌধুরী বলেন, “অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ গত বছরের সমপর্যায়ের কাছাকাছি ছিল। এটি স্থিতিশীলতার বার্তা দেয়।” তিনি এ সময়ের অর্থনৈতিক সূচকের যেমন রিজার্ভ বৃদ্ধি ও মুদ্রা বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকার দিকেও ইঙ্গিত করেন।
বিনিয়োগকারীদের জন্য কেস বাই কেস সমাধান ও পলিসি অ্যাডভোকেসি
চেয়ারম্যানের মতে, শুধু নতুন বিনিয়োগ আনাই নয়, আগত বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধান ও নীতিগত সহায়তা করাও বিডার অন্যতম দায়িত্ব। ইতিমধ্যে ইয়ংওয়ান গ্রুপ, মেটলাইফ, শেভ্রন, লাফার্জসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের সমস্যা সমাধান হয়েছে।
পলিসি অ্যাডভোকেসির মাধ্যমে কিছু প্রভাব চলতি বাজেটেও পড়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। যেমন: বন্ডেড ওয়্যারহাউস লাইসেন্সিং নীতির সংস্কার, আমদানি শুল্ক হ্রাস এবং ইনসেন্টিভ প্রক্রিয়ার সহজীকরণ।
বিনিয়োগ সামিট ও সম্ভাব্য প্রভাব
বিডা আয়োজন করে দুটি ইনভেস্টমেন্ট সামিট, যার একটি ছিল চীনকেন্দ্রিক। এতে অংশগ্রহণ করে ৬৭৫ জন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং অনুষ্ঠিত হয় ৩০০+ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক।
এরইমধ্যে গার্মেন্টস, এয়ারলাইন্স অ্যামেনিটি কিট ও ঘড়ি উৎপাদন খাতে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার তিনটি নতুন বিনিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে। এতে সম্ভাব্য কর্মসংস্থান হবে প্রায় ১০ হাজার মানুষের।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অঙ্গীকার
তিনি বলেন, “আমরা কোনো বাহবা চাচ্ছি না, কেবল গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী কাজ করতে চাই। আমাদের অ্যাকাউন্টেবল করুন, প্রশ্ন করুন।”
পোস্টের শেষাংশে তিনি সকলকে বিভ্রান্তিকর তথ্য থেকে দূরে থাকার এবং প্রমাণিত সোর্স থেকে তথ্য নেওয়ার আহ্বান জানান।
সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন:
সমন্বিত উদ্যোগে অগ্রগতি: আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী কাঠামো গড়ে তোলার প্রচেষ্টা দৃশ্যমান।
স্বচ্ছতা ও নিজস্ব ব্যাখ্যার জোর: ব্যক্তিগতভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ একটি স্বচ্ছতা অনুশীলনের দৃষ্টান্ত।
চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে: কাঠামোগত সংস্কার, ক্যাপিটাল রিপেট্রিয়েশন নীতি ও এনার্জি স্ট্র্যাটেজিতে গতি আনা এখনো চ্যালেঞ্জ।
তথ্যসূত্র: আশিক চৌধুরীর ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ‘আমাদের আমলনামা’ স্ট্যাটাস, জুন ২০২৫।