জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের ভূমিকা এবং করণীয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে তিনি পুলিশকে নিরপেক্ষভাবে ও আইনের ভেতরে থেকে কাজ করার নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, নির্বাচন আসলে নানা সমস্যা ও চাপ সৃষ্টি হতে পারে, তাই পুলিশকে শক্ত থাকতে হবে এবং আইনের শাসন বজায় রাখতে হবে।
বৈঠকে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, পুলিশ বাহিনীকে সেবামুখী করতে এবং পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে স্বাধীন কমিশন গঠনের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় পুলিশ কমিশন রয়েছে এবং বাংলাদেশেও এটি প্রয়োজন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পুলিশকে নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে, যাতে সমাজের শক্তিশালীরা সাধারণ মানুষকে হয়রানি করতে না পারে। তিনি নারীর নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখার নির্দেশনা দেন।
বৈঠকে পুলিশের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়েও আলোচনা হয়। পুলিশের যানবাহন সংকট, অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এবং দক্ষ জনবলের অভাবের কথা কর্মকর্তারা তুলে ধরেন। চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ জানান, থানাগুলোর জন্য পর্যাপ্ত যানবাহন সরবরাহ করা জরুরি, কারণ বর্তমানে অনেক থানা যানবাহনের অভাবে ভুগছে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন না হলে দেশ এগোতে পারবে না। তিনি পুলিশের টিমওয়ার্কের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, পুলিশ হলো দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিমগুলোর একটি। তাই এই বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।
বৈঠকে আইজিপি বলেন, অতীতে ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় পুলিশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে, যা পুলিশের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এখন সেই নেতিবাচক ভাবমূর্তি দূর করার জন্য পুলিশ কমিশন গঠন করা জরুরি।
আইজিপি আরও বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের কারণে জনগণের মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে পুলিশের নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে হবে এবং দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
পুলিশ সংস্কারের বিষয়ে আলোচনার সময়, রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম পুলিশে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রতিটি থানায় কমপক্ষে ২০ শতাংশ নারী পুলিশ নিয়োগ করা উচিত এবং নারীদের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রামাগার ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বৈঠকের দ্বিতীয় পর্বে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পুলিশের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে আলোচনা করেন। পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, যারা পরিবেশ দূষণে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
বৈঠকের শেষে আইজিপি বলেন, এখনই সময় চাপমুক্ত থেকে দায়িত্ব পালন করার। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব।