মোস্তাফিজুর রহমান, গাইবান্ধা (সাঘাটা):
গাইবান্ধার সাঘাটার ভরতখালী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে পরিচালিত ‘মমতা’ প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আশপাশের চরাঞ্চলের গর্ভবতী নারীরা।
স্বল্প খরচে গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন নির্ভরযোগ্য সেবা পাওয়ার অন্যতম ভরসা ছিল এই কেন্দ্রটি। সেভ দ্য চিলড্রেন-এর অর্থায়নে ও এসকেএস ফাউন্ডেশনের বাস্তবায়নে ২০২১ সালের মে মাসে এই কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে চালু হয় নিরাপদ নরমাল ডেলিভারি সেবা।
প্রতিমাসে শত শত নারী সেবা নিতেন
প্রকল্পের আওতায় প্রতিমাসে গড়ে ৩১৬ জন নারী গর্ভকালীন (ANC), ১৭৪ জন প্রসব-পরবর্তী (PNC) সেবা নিয়েছেন। প্রতি মাসে গড়ে ৩৫টি নরমাল ডেলিভারি সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এখানে ৭২টি সফল ডেলিভারির রেকর্ড ছিল।
চরাঞ্চলের গজারিয়া, ফজলুপুর, ফুলছড়ি, মুক্তিনগর, পদুমশহর ও সাঘাটা ইউনিয়নের গর্ভবতী নারীদের একমাত্র ভরসা ছিল ভরতখালী কেন্দ্রটি। সিমা আক্তার নামের এক গর্ভবতী বলেন, “আমরা গরিব মানুষ, এতদূরে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব না। ভরতখালী কেন্দ্রে খুব ভালো সেবা মিলত। এটা বন্ধ হলে আমরা কোথায় যাবো?”
আরেক নারী সপ্না বেগম বলেন, “আমার ডেলিভারির তারিখ আসছে। এখন যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তো বড় বিপদ।”
স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন—এটা শুধু সেবা নয়, জীবন রক্ষার লড়াই
কেন্দ্রটির পরিবার কল্যাণ পরিদর্শীকা ফরিদা পারভীন বলেন, “আমরা গর্বের সঙ্গে নরমাল ডেলিভারি করে আসছিলাম। প্রকল্পটি বন্ধ হলে এই অঞ্চলের নারীরা আবার অন্ধকারে পড়ে যাবে।”
সংকটের কারণ ও আশার সম্ভাবনা
এস্কেএস ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক খন্দকার জাহিদ সারোয়ার (সোহেল) জানান, প্রকল্পের সময়সীমা ও দাতাসংস্থার অর্থসঙ্কটের কারণে এটি বন্ধ হচ্ছে। তবে তিনি আশাবাদী— “যদি স্থানীয় সরকার, ইউপি বা উপজেলা পরিষদ সহায়তা করে, তাহলে সেবাটি বিকল্পভাবে চালু রাখা সম্ভব।”
গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জেম আহমদ বলেন, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো।”
সচেতন মহলের আহ্বান
স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী ও সেবাগ্রহীতারা বলছেন, একটি সফল, নির্ভরযোগ্য ও জীবন রক্ষাকারী প্রকল্প এভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।