বিশেষ প্রতিবেদক, রাঙ্গামাটি :
রাঙ্গামাটি জেলা রাজস্থলী উপজেলা দীর্ঘদিন ধরে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকা এবং শিক্ষক সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা চরম দুরবস্থার মুখে পড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলেও।
২০২৫ সালের পরীক্ষায় উপজেলার পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ৬২৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিলেও পাস করেছে মাত্র ২১২ জন। ফলে অকৃতকার্য হয়েছে ৩৬৭ জন শিক্ষার্থী, যা পাসের হার প্রায় ৩৫.০৫ শতাংশ।
রাজস্থলী উপজেলার চারটি সাধারণ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং একটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফলাফল বিশ্লেষণ করে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
বিদ্যালয়ভিত্তিক ফলাফল:
রাজস্থলী ডাইংপাড়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়: পরীক্ষার্থী ১৩৩, পাস ৫৯, পাসের হার ৪৪.৩৫%
বাঙালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (মূল শাখা): পরীক্ষার্থী ২২১, পাস ৮৪, পাসের হার ৩৮.০৫%
গাইন্দা উচ্চ বিদ্যালয়: পরীক্ষার্থী ১২২, পাস ৩৪, পাসের হার ২৭.৮৭%
উপজাতীয় আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়: পরীক্ষার্থী ৪১, পাস ১১, পাসের হার ২৬.৮৩%
বাঙালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (কারিগরি শাখা): পরীক্ষার্থী ৭০, পাস ২৪, পাসের হার ৩৪.২৮%
২০১৯ সাল থেকে রাজস্থলী উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার (এসইও) পদটি শূন্য রয়েছে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম মনিটরিং ও দিকনির্দেশনার ঘাটতি লক্ষ করা যাচ্ছে। শিক্ষকরা বলছেন, প্রশাসনিক নির্দেশনা ও তদারকি না থাকায় বিদ্যালয়গুলোতে শৃঙ্খলা ও মান বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিদ্যালয়গুলোতে গণিত, ইংরেজি, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষক ঘাটতি রয়েছে। একই শিক্ষককে একাধিক বিষয়ের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানেই বছরের পর বছর একটি বা একাধিক বিষয় শিক্ষকবিহীন রয়েছে। ফলস্বরূপ, শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় পাঠ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বললেন, অভিভাবক এবং সচেতন মহল বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুতরভাবে দেখছেন। তাঁদের মতে, শিক্ষাক্ষেত্রে এমন অব্যবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার মান ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশাসনিক কার্যক্রম শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
শিক্ষার্থী অভিভাবক বললেন,শিক্ষক সংকট এবং শিক্ষার মান কমে যাওয়ায় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পর্যাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় তারা পিছিয়ে পড়ছে। এই সমস্যা সমাধানে, সরকারের উচিত দ্রুত শিক্ষক সংকট নিরসনে পদক্ষেপ নেয়া এবং শিক্ষকদের নিয়মিতভাবে মনিটর করার ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে তারা শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা প্রদানে উৎসাহিত হন।
রাজস্থলী উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বছরের পর বছর ধরে শিক্ষক নিয়োগ নেই, এসইও নেই, এমন পরিস্থিতিতে ভালো ফলাফল আশা করা বাস্তবসম্মত নয়। অথচ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ এভাবেই ধ্বংস হচ্ছে দ্বায়ভার কে নিবে ।
উপজেলার শিক্ষা খাত নিয়ে বছরের পর বছর নানা অভিযোগ থাকলেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ফলে সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করেছে।
রাজস্থলী একটি দুর্গম, পাহাড়ি এলাকা। এখানে শিক্ষার আলো পৌঁছাতে আরও বেশি মনোযোগ, প্রশাসনিক উদ্যোগ এবং শিক্ষকের উপস্থিতি জরুরি। শিক্ষক সংকট ও নেতৃত্বের অভাব দূর করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, রাজস্থলীর শিক্ষা ব্যবস্থায় স্থায়ী বিপর্যয় নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা শির্ক্ষাথীরা অভিভাবক সহ সচেতন স্থানীয় মহলবৃন্দ ।