সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ‘সামগ্রিক পুনর্গঠনের’ অংশ হিসেবে ভিসা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক-বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। একই সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও জনগণের চলাচল-সংক্রান্ত পারস্পরিক সদিচ্ছা ও বিশ্বাস গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফেডারেল অথরিটি ফর আইডেন্টিটি, সিটিজেনশিপ, কাস্টমস অ্যান্ড পোর্টস সিকিউরিটির (আইসিপি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সুহেইল সাঈদ আল খাইলির সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন লুৎফে সিদ্দিকী। এ সময় তিনি দুবাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন।
নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেওয়া পোস্টে লুৎফে সিদ্দিকী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আরব আমিরাতের ভিসা বা আবাসন নীতিমালার সবচেয়ে বড় সংখ্যক লঙ্ঘনকারী হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছেন বাংলাদেশিরা। এখানকার মোট ভিসা লঙ্ঘনকারীর মধ্যে ২৫ শতাংশেরও বেশি বাংলাদেশি।”
তিনি জানান, এই সমস্যার মূল কারণ সম্ভবত বাংলাদেশে কর্মী নিয়োগের প্রাথমিক পর্যায়েই নিহিত, যা এক ধরনের ‘দুষ্ট চক্র’ সৃষ্টি করেছে। অভিবাসন ব্যয় অত্যন্ত বেশি হওয়ায় কর্মীরা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন এবং বৈধতা হারান। বছরের পর বছর সরকার অপরাধমূলক আচরণের মূল কারণগুলো উপেক্ষা করে এসেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
বিশেষ দূত আরও বলেন, “ভিসা নীতিতে কিছু সময়ের জন্য শিথিলতা আসার পর এর অপব্যবহার বেড়ে গেলেও সরকার তার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। অনেকে ওভারস্টে করে, আবার কেউ কেউ ভুয়া সনদও ব্যবহার করেন, যা অনেক সময় আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিসহ পেশ করা হয়।”
তিনি জানান, আমিরাতে একটি আন্তর্জাতিক রিক্রুটমেন্ট ফার্মের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন, যারা আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করে থাকে। তারাও বাংলাদেশিদের ঘিরে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চলতি বছরের মার্চে ভিসা আংশিকভাবে চালু হওয়ার পর মধ্যস্বত্বভোগীদের (দালালদের) কিছু ‘উদ্বেগজনক’ আচরণের কথাও উঠে এসেছে তার পর্যবেক্ষণে।
লুৎফে সিদ্দিকী জানান, বিভিন্ন ধরনের ভিসার বিষয়ে পৃথকভাবে বিশ্লেষণ করে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে, যেমন—পরিবার, দম্পতি, গৃহকর্মী স্থানান্তর, পর্যটক, দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক, নাবিক ইত্যাদি।
তিনি বলেন, “এই সময়ে আমাদের সবাইকে অনিয়ম ও এর মূল কারণ দমনে আরও সক্রিয় হতে হবে। এসব অনিয়মের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব আমরা ইতোমধ্যেই দেখতে পাচ্ছি।”