আদালত প্রতিবেদক:
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু অভিযোগ করেছেন, আদালতের অনুমতি ছাড়াই গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কারাগারে গিয়ে তার কণ্ঠস্বর পরীক্ষা করেছেন।
তিনি দাবি করেন, এটি একটি ‘চক্রান্ত’ এবং এর পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে।
রোববার (২০ জুলাই) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে তিনি নিজেই এই অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘ভয়েস টেস্টের সময় আমাকে কোনো ট্রাইব্যুনালের আদেশ দেখানো হয়নি।’
তবে এই অভিযোগ নাকচ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাইব্যুনালের অনুমোদন নিয়েই তদন্ত কর্মকর্তারা ইনুর কণ্ঠস্বর পরীক্ষা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘তদন্তের প্রয়োজনে তদন্ত সংস্থা যেকোনো আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ বা কণ্ঠ পরীক্ষা করতে পারে। ইনুর ক্ষেত্রেও তাই করা হয়েছে।’
এ সময় ইনু বিচারককে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত হচ্ছে, আমাকে আদালতের কোনো নির্দেশনা না দিয়েই কণ্ঠস্বর পরীক্ষা করা হয়েছে।’
প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম এরপর বলেন, ‘আসামি বারবার নিজের পক্ষ থেকে কথা বলে বিচার কাজকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন, অথচ তার পক্ষে আইনজীবী রয়েছেন।’
জবাবে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা বলেন, ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে প্রয়োজনে আমরা আসামি ও তাদের আত্মীয়স্বজনের বক্তব্যও শুনব।’
এর আগে এদিন সকালে, জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি মামলায় অভিযুক্ত ৩৯ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
অভিযুক্তদের মধ্যে আছেন—সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, আমির হোসেন আমু, জুনাইদ আহমেদ পলক, সালমান এফ রহমানসহ সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও উপদেষ্টা।
ট্রাইব্যুনাল এই মামলাগুলোর তদন্ত আগামী তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রসিকিউশনের পক্ষে সময়ের আবেদন করেছিলেন চিফ প্রসিকিউটর।
প্রসঙ্গত, গত বছর ১৭ ডিসেম্বর ছাত্র আন্দোলনের সময়কার হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের দুই মামলায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ নেতা ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করতে নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। এর পর কয়েকবার সময় বাড়ানো হয়।
এই মামলার পটভূমিতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে গুলি চালিয়ে বহু ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে। এরপর সেই আন্দোলন রূপ নেয় গণঅভ্যুত্থানে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে এবং শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। ইউনূস সরকারই জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার শুরু করে।