কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) অধিকতর সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন নতুন ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে সেখানে পরিদর্শনে যান কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগের শিক্ষক ও নবীন শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের দাবি, তাদের এই বিষয়ে অবহিত করা হয়নি। ঘটনাটি সামনে আসার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে সিএসই বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা সেখানে ঘুরতে গেলে এ বিতর্কের সৃষ্টি হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন বিভাগের ছাত্র পরামর্শক ও প্রভাষক মো. জাহিদুর রহমান, প্রভাষক জহিরুল ইসলাম বাবর এবং মো. আতিকুর রহমান।
এর আগে ১ জুলাই বিভাগীয় প্রধান ড. মাহমুদুল হাসানের স্বাক্ষরে পরিবহন পুলে একটি বাসের জন্য আবেদন করা হয়। বাস বরাদ্দের পর ৩ জুলাই তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসযোগে নির্মাণাধীন নতুন ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জারি করা পূর্ববর্তী বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, উন্নয়ন প্রকল্প এলাকার নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহিনীর অনুমতি ব্যতীত সেখানে কারও প্রবেশ নিষিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর ১২ মে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
ঘটনাটি জানাজানির পর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেকের অভিযোগ, মানবিক ও জরুরি মুহূর্তে বাস বরাদ্দ না দেওয়া হলেও, নবীন শিক্ষার্থীদের জন্য তৃতীয় দিনেই বাসের ব্যবস্থা করা হলো—যা স্পষ্ট বৈষম্যের উদাহরণ।
আইন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বায়েজিদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের এক সহপাঠী তিন্নি আক্তারের মৃত্যুর পর জানাজায় অংশ নিতে গভীর রাতে বাস চাইলেও পাওয়া যায়নি। আমরা নিজের খরচে প্রাইভেট কার ভাড়া করে যেতে বাধ্য হই। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে নবীনদের নিয়ে বাসে করে ক্যাম্পাস ট্যুর হচ্ছে।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফরহাদ কাউসার বলেন, ‘ঢাকা-ক্যাম্পাস বাস চালুর দাবিতে মাসের পর মাস ঘুরেও আমরা কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। অথচ মাত্র ক্যাম্পাসে পা রাখা ব্যাচের জন্য বাস বরাদ্দ দেওয়া হলো। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি এটি চরম বৈষম্য।’
ভিসির মেয়ের নাম জড়িয়ে সমালোচনা
জানা গেছে, সিএসই বিভাগে সদ্য ভর্তি হয়েছেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলীর মেয়ে। অনেক শিক্ষার্থীর দাবি, তাকে বিশেষ সুবিধা দিতে গিয়েই এই বাস বরাদ্দ ও ভ্রমণের আয়োজন করা হয়েছে। তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ভিসির মেয়ে ওই সফরে উপস্থিত ছিলেন না।
প্রশাসনের ব্যাখ্যা ও বিভ্রান্তি
পরিবহন পুলের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. মোশারফ হাসান ভুঁইয়া বলেন, ‘বিভাগীয় প্রধানের স্বাক্ষরিত চিঠির ভিত্তিতে, শিডিউল ফাঁকা থাকায় বাস বরাদ্দ দেওয়া হয়। গন্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানার এখতিয়ার আমার নেই।’
তবে বিভাগীয় প্রধান ড. মাহমুদুল হাসান জানান, ‘নবীনদের সিনিয়রদের উৎপাত থেকে দূরে রাখতেই ক্যাম্পাসের আশপাশে ঘোরাঘুরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। নতুন ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না।’
সিএসই বিভাগের ফেসবুক পেজে বলা হয়েছে, ‘আমরা শুধুমাত্র বাসের সামনে ছবি তুলে ফিরে এসেছি।’ তবে বিভাগের ছাত্র পরামর্শক জাহিদুর রহমান স্বীকার করেন, তারা ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে ঘুরে দেখেছেন।
Administration response
প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম বলেন, ‘বাস ব্যবহারের বিষয়টি পরিবহন পুল ব্যাখ্যা করবে। তবে নতুন ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ—এই তথ্য আগেই সকল বিভাগকে জানানো হয়েছিল।’
রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাস ব্যবহারের বিষয়ে পরিবহন পুলকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। বিভাগীয় প্রধানের কাছ থেকেও লিখিত জবাব চাওয়া হবে।’
পরিবহন পুলের সেকশন অফিসার মো. আতিকুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।