জাপানে চলতি বছরের জুন মাসে চালের দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৯ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, চলমান খাদ্য মূল্যবৃদ্ধি দেশটির সাধারণ জনগণের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। এর প্রভাব পড়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনেও—আগামী রোববার অনুষ্ঠিতব্য উচ্চকক্ষ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা চরম চাপের মুখে রয়েছেন।
জাপানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়, জুন মাসে সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতি কমে ৩.৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা মে মাসে ছিল ৩.৭ শতাংশ। তবে পচনশীল খাদ্য বাদ দিয়ে ভোক্তা মূল্যসূচক বেড়েছে ৩.৪ শতাংশ, যা মে মাসের চেয়ে সামান্য বেশি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চালের বাজারে এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ। দুই বছর আগে দেশব্যাপী ভয়াবহ খরা ও তীব্র গরমে ধানের উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর পাশাপাশি কিছু ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে চাল মজুত করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে।
অন্যদিকে, ‘ভয়াবহ ভূমিকম্প’ সংক্রান্ত একটি গুজবের পর গত বছর সাধারণ মানুষ হঠাৎ চাল কিনে মজুত করতে থাকে, যার ফলে বাজারে আরও চাপ পড়ে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জরুরি মজুদ বাজারে ছাড়তে শুরু করেছে, যা সাধারণত কেবল প্রাকৃতিক দুর্যোগে করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা দায়িত্ব নেন ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিশেষ করে চালের মতো প্রধান খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কেলেঙ্কারির অভিযোগ তার জনপ্রিয়তায় বড় ধরনের ধস নামিয়েছে।
গত অক্টোবরে তার দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়—যা গত ১৫ বছরের মধ্যে দলের সবচেয়ে বাজে ফলাফল। রোববারের নির্বাচনে উচ্চকক্ষেও হার হলে ইশিবা এক বছরের মধ্যেই পদত্যাগে বাধ্য হতে পারেন, এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জুলাই শেষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন ২৫% শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে জাপানের গাড়ি, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চান, জাপান যেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও গ্যাস, তেল, গাড়ি ও চাল আমদানি করে এবং জাপানি কোম্পানিগুলো যেন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন বাড়ায়, যাতে ৭০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো যায়।
এই অবস্থায় ইশিবা প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে মরিয়া। ইতোমধ্যে তার বিশেষ দূত রিওসেই আকাজাওয়াকে ওয়াশিংটনে পাঠানো হয়েছে সাতবার।
টোকিওর অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “চালের মতো প্রধান খাদ্যপণ্যের মূল্য যদি এইভাবে বেড়েই চলে, তাহলে শুধু রাজনৈতিক নয়—সামাজিক অস্থিরতাও দেখা দিতে পারে।”
জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ইশিবার জনপ্রিয়তা নিচের দিকে তলিয়ে যাচ্ছে, এবং এই নির্বাচনের ফলাফল তার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক অবস্থান নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।