এক সপ্তাহে দেশে দুবার ভূমিকম্প অনুভূত
চলতি জানুয়ারি মাসের প্রথম সাত দিনে দেশে দুবার ভূমিকম্প অনুভূত হলো। এর মধ্যে আজ মঙ্গলবার সকালে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্প ছিল তীব্র ধরনের। আর ৩ জানুয়ারি হওয়া ভূমিকম্পটি ছিল মাঝারি মাত্রার। দুই ভূমিকম্পের অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হলো, দুটোরই উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের বাইরে। আজকেরটির উৎপত্তিস্থল চীনের জিজাং এলাকা। আর ৩ জানুয়ারির ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল মিয়ানমারের হোমালিন নামের একটি স্থান। এক সপ্তাহে দেশে দুবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার বিশেষ কোনো তাৎপর্য আছে কি?
আগেই বলা হয়েছে, দুটি ভূমিকম্পের একটিরও উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশ নয়। ৩ জানুয়ারি হওয়া ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ঢাকা থেকে ৪৮২ কিলোমিটার দূরে। আর আজ যেখানে উৎপত্তি হয়েছে, সেই চীনের জিজাংয়ের দূরত্ব ঢাকা থেকে ৬১৮ কিলোমিটার দূরে।
এত দূরে উৎপত্তি হওয়া দুটি ভূমিকম্পের আদৌ কি কোনো প্রভাব বাংলাদেশে আছে, এর উত্তরে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবায়েত কবীর আজ সকালে বলেন, এত দূরে উৎপত্তি হওয়া দুটো ভূমিকম্পের তেমন কোনো প্রভাব আমাদের এখানে নেই। শুধু কম্পন অনুভূত হয়েছে। কোনো ক্ষয়ক্ষতিও নেই। তবে আজকের ভূমিকম্পটি মানমাত্রার দিক থেকে তীব্র। তাই অনেক দূরে এর উৎপত্তি হলেও বাংলাদেশ থেকে অনুভূত হয়েছে।
আজকের ভূমিকম্পটির মাত্রা রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ১। আর গত শুক্রবারের (৩ জানুয়ারি) ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫। আজকের ভূমিকম্প শুধু চীন নয়, ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশ থেকে একযোগে অনুভূত হয়েছে। বস্তুত এর মাত্রা তীব্র হওয়ার কারণেই দূর থেকেও এটি অনুভূত হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
কিন্তু দূরে হলেও বাংলাদেশে এর ঠিক তাৎপর্য কোথায়? এর উত্তরে রুবায়েত কবীর বলছিলেন, যে দুটি ভূমিকম্প গত সাত দিনের মধ্যে হয়ে গেল, সেগুলোর উৎপত্তিস্থলগুলোর বিবেচনায় বলা যায়, ওই সব এলাকা এমনিতেই ভূমিকম্পপ্রবণ। ওই সব এলাকায় মাঝেমধ্যে এ ধরনের ভূমিকম্প হয়। হিমালয়ের এভারেস্টের উত্তর প্রান্তে আজকের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল।
অনেক আগে পৃথিবীর সব স্থলভাগ একত্রে ছিল। পৃথিবীর উপরিভাগে কতগুলো অনমনীয় প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত বলে ধীরে ধীরে তারা আলাদা হয়ে গেছে। এই প্লেটগুলোকেই বিজ্ঞানীরা বলেন টেকটোনিক প্লেট।
টেকটোনিক প্লেটগুলো একে-অপরের সঙ্গে পাশাপাশি লেগে থাকে। কোনো কারণে এগুলোর নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হলেই তৈরি হয় শক্তি। এই শক্তি সিসমিক তরঙ্গ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। যদি তরঙ্গ শক্তিশালী হয়, তাহলে সেটি পৃথিবীর উপরিতলে এসে পৌঁছায়। আর তখনো যদি যথেষ্ট শক্তি থাকে, তাহলে সেটা ভূত্বককে কাঁপিয়ে তোলে। এই কাঁপুনিই মূলত ভূমিকম্প।
তিনি আরো বলেন, গত দুই দিনে যেসব এলাকায় ভূমিকম্প উৎপত্তি হয়েছে, এলাকা দুটিতে বড় চ্যুতি আছে। গঠন বৈশিষ্ট্যের কারণেই এলাকা দুটো ভূমিকম্পপ্রবণ।