যশোরে ফুলকপি চাষিদের মাথায় হাত, বাজারদরে হতাশ
অনেক স্বপ্ন নিয়ে শীতকালীন সবজি ফুলকপি চাষ করেছিলেন। কিন্তু এখন উৎপাদন খরচই মিটছে না। এতে লোকসানের শঙ্কা আর ঋণের বোঝা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন যাচ্ছে যশোরের চাষিদের।
জানা গেছে, স্বল্প খরচে বেশি মুনাফা পাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে রোপণ করা ফুলকপি এবার লোকসানে ফেলেছে চাষিদের।শীতের সবজি হিসেবে প্রথম দিকে বাজারে চাহিদা থাকায় মুনাফা ভালো পেলেও দিন দিন ফুলকপির বাজারে দরপতন ঘটছে। ফলে পারিশ্রমিক তো দূরের কথা, উৎপাদন খরচও জুটছে না চাষিদের।উৎপাদন খরচের প্রায় অর্ধেক দামে বিক্রি হচ্ছে চাষিদের ফসল। যার কারণে ঋণের বোঝা নিয়ে দুশ্চিন্তায়ও পড়েছেন যশোরের কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, প্রতি বছর শীতকালীন সবজি হিসেবে ফুলকপি ও বাঁধাকপির চাহিদা থাকে। চাহিদা থাকায় দামও ভালো পান তারা। লাভের আশায় চলতি মৌসুমেও অনেকেই ফুলকপি ও বাঁধা কপির চাষাবাদ করেছেন। কিন্তু এ বছর নানান জাতের সবজিতে বাজার ভরে যাওয়ায় উৎপাদন ভালো হলেও মুনাফার অংক শূন্যের ঘরে। প্রতিটি কপির উৎপাদন খরচ পড়ে ৮/১০ টাকা। সেখানে বর্তমান বাজারে চাষিদের ক্ষেতে প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫/৬ টাকা দামে। ফলে উৎপাদন খরচের অর্ধেকও উঠছে না। এছাড়া চাষিদের পারিশ্রমিকও প্রায় শূন্য। যারা ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করেছেন তারা তা কীভাবে শোধ করবেন তা নিয়ে পড়েছেন দুর্ভাবনায়।
যশোরের চুরামনকাঠি,সাহাজাদপুর,পোলতাডাঙ্গা,সাতমাইল সবজি গ্রাম নামে খ্যাত। সেখানেও কপির চাষ করেছেন চাষিরা। এ জেলার চাহিদা মিটিয়ে যশোরের চাষিদের উৎপাদিত ফুলকপি রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়। জেলার চাষিরা ক্ষেতেই এসব ফসল বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। তারা ট্রাক বোঝাই করে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করেন।
পোলতাডাঙ্গার চাষি আলীকদর বলেন, ২৪শতাংশ জমিতে ফুলকপির চাষ করেছি। এ জমিতে রোপণ করা৪ হাজার ৩ শ চারায় উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রতি পিস ৮/১০ টাকা। এখন ফুলকপির দাম প্রতি পিস ক্ষেতে বিক্রি করতে হচ্ছে ৪/৬ টাকা দামে। এটা এমন ফসল, পরিপক্ক হলে আর ক্ষেতে রাখা যায় না। রাখলে ক্ষেতেই নষ্ট হয়। উৎপাদন খরচই পাচ্ছি না। এর ওপর ঋণের বোঝা রয়েছে। ঋণ পরিশোধ করব কী দিয়ে, আবার পরিবারের খরচসহ আগামীতে ফসল উৎপাদনের টাকাও রইল না। বেশি দামে বীজ-সার কিনে কম দামে ফসল বিক্রি করলে তো মূলধন হারিয়ে যাচ্ছে।
১ই গ্রামের প্রান্তিক চাষি মোঃজুব্বার আলী বলেন, মাত্র ১৭শতাংশ জমি তাতে ফুলকপির চাষ করেছি। স্বপ্ন ছিল এর মুনাফা দিয়ে পরে আলু ও মরিচ চাষ করব। কিন্তু ফসল বিক্রি করে দেড় হাজার টাকা লোকসান। পারিশ্রমিক তো নেই। এখন আলু বা মরিচের চাষাবাদ কেমনে করব জানি না। পরিবারের খরচই বা মিটাব কী দিয়ে। গরিব কৃষকের মরণ চার দিকে। চাষাবাদ না করলে না খেয়ে মরতে হয়, করলে আবার লোকসান গুনতে হয়।
চুড়ামনকাটি বাজারে এক পাইকার ব্যবসায়ী বলেন, মানুষ এখন আর ফুলকপি খেতে চাইছেন না। যে কারণে বাজারে কপির চাহিদা নেই। ফলে তারা ফুলকপি কিনছেন না। ভুক্তভোগী সবজি চাষিরা জানিয়েছেন, খুচরা বাজারে ফুলকপির এখনো বেশ চাহিদা রয়েছে। তারা পাইকার ব্যবসায়ীদের কারসাজির শিকার হয়েছেন। খুচরা বাজারে ৮ থেকে ১০ টাকা দামে ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে। অথচ পাইকার বাজারে ফুলকপি মূল্যহীন। পাইকার ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ইচ্ছে করে কপি কিনতে চাইছে না। যে কারণে তারা পানির দরে কপি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারিভাবে সঠিক বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা চালু থাকলে পাইকাররা ইচ্ছামতো সিন্ডিকেট করতে পারতো না।