ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা শাহজাদপুর
শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:
ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা শাহজাদপুর। তীব্র শীতে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার সর্বত্র গত চার দিনে সুর্য্যর দেখা মেলেনি। ফলে শহর ও গ্রাম-গঞ্জের জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। তীব্রশীতে ও ঘন কুয়াশায় রাস্তাঘাটে যানবহণ ও মানুষ চলাচল কমে গেছে। হাতে কাজ না থাকায় অভাবি মানুষের ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। শীতবস্ত্রের অভাবে হতদরিদ্ররা চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছে। তীব্রশীতে ঠান্ডাজনিত কারণে সর্দি ও কাশির রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। মহাসড়কে গাড়িগুলো হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করার চেষ্টা করছে দিন মজুর ও খেতে খেটে খাওয়া মানুষদের।
মঙ্গলবার থেকে দিনভর ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন আছে শাহজাদপুরের জনপদ। সন্ধ্যার পর থেকে এর ঘনত্ব বাড়ে। রাত ১০টার পর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় পুরো এলাকা। ফলে শাহজাদপুর শহরের বিপণী-বিতান, বাস স্টেশন, অটোরিকশা স্ট্যান্ডসহ কোলাহলপুর্ণ স্থানগুলো মূহুর্তই জনশূন্য হয়ে পড়ে। শনিবার ভোর বেলা থেকেই সারা এলাকায় ঘন কুয়াশা ও শীত আরো তীব্র হয়। ফলে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায় শহর ও গ্রাম। ফুটপাতের সবজি, মাছ, ফলমুল ও শীতের কাপড় ব্যবসায়ীরা বেচা-কেনা না থাকায় তারা দোকান গুটিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। রিকশাচালক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরাও ভাড়ার আশায় আর বসে থাকছেন না।
এ বিষয়ে এ এইচ সি ইট ভাটায় কর্মরত মানিক, মালেক , জোসনা ও নুরুন্নাহার বলেন দুদিনের তীব্র শীতে হাত পা যেন অবস হয়ে যাচ্ছে। ভেজা ইট হাত দিয়ে ধরা যাচ্ছে না। বরফের মত ঠান্ডা হওয়ায় মাঝে মাঝে ইট ভাটায় আগুনের তাপে শরীর গরম করে আবার কাজ করতে হচ্ছে। আমরা চুক্তভিত্তিক রেটে কাজ করি। তাই আমাদের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসছে। এতে আমাদের মুজুরিও কমে যাচ্ছে। শাহজাদপুর পৌর সদরের রিকশাচালক রিপন ও হোসেন আলী শনিবার দুপুরে বলেন, গত রাতে যাওবা রিকশা চালানো গেছে ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত রিকশা চালানো সম্ভব হয়নি। বেলা ১২টার দিকে মাত্র একজন যাত্রী পরিবহণ করেছি। তালগাছি বাজারের সবজি বিক্রেতা আলম, জাহাঙ্গীর, সানোয়ার ও রইচ বলেন, কুয়াশার কারণে মানুষজন বের হচ্ছে না। এ কারণে অর্ধেক সবজিও বেঁচা হয়নি। শাহজাদপুর উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নের হরিরামপুর গ্রামের মিলন, লিটন মাস্টার, তালগাছি গ্রামের রওশন আলম বলেন,ঘন কুয়াশার কারণে পাঁচ‘দিন ধরে সুর্য্যরে দেখা নেই। ফলে আমাদের গ্রামে তীব্র শীত পড়েছে। অভাবি মানুষ ও শ্রমজীবিরা মাঠে-ঘাটে কাজে যেতে পারছেনা। শীতবস্ত্রের অভাবে হতদরিদ্র মানুষজন খরকুটা জ্বালিয়ে আগুন পোহায়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।
এদিকে যমুনা চরের সনাতনী, গালা, কৈজুরী, জালালপুর এই চারটি ইউনিয়নের বাসিন্দারা তীব্র শীতে কাজ করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। যুমুনার তীরে বসবাসকারীরা উত্তরের হিমেল হাওয়ায় জবুথবু হয়ে পড়েছে।
গবাদি পশু নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে খামিরিরা। বাথানে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে গবাদি পশু গুলো।
শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ বিল্লাল হোসেন জানান, উপজেলায় প্রায় পৌনে তিন লাখ গরু আছে। এদের বেশির ভাগই গাভী। বর্তমানে বাঁথানে কাচা খাস খাওয়ানোর জন্য গরুগুলো পৌষের শুরুতেই বাথানে নেওয়া হয়েছে। আষাঢ় মাসে ঘাস শেষ হলেই বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। তীব্র শীতে গরুগুলো নিয়ে খামারিরা খুবই কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।
উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি মোঃ আব্দুল জব্বার জানান এই মধ্যেই যুবদলের পক্ষ থেকে ৪০০ পিস কম্বল অসহায় শীতার্ত দের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান জানান এবারের শীতেপৌর সভা সহ প্রতিটি ইউনিয়নে ১০০ পিস করে ও বিভিন্ন এতিমখানায় ৮০০ পিস , সোনাতনী ইউনিয়নে উপদেষ্টা মহোদয়ের বিশেষ বরাদ্দ ১হাজার পিস সহ প্রায় তিন হাজার পিস কম্বল বিতরন করা হয়েছে। আরো বরাদ্ধ চেয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সেগুলো খুব দ্রুত বিতরন করে হবে।