চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিবেশ রক্ষায় ১৩ সুপারিশ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:

চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড এবং ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ৩৩ হাজার একর জমিতে গড়ে ওঠা দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষায় ১৩ সুপারিশ করেছেন অংশীজনরা। নিয়মিত বায়ুমান পরীক্ষা, সিএসটিপি ও সিইটিপির নির্গমনস্থলে পানি মান পর্যবেক্ষণ, ভূ-গর্ভস্থ পানির বিকল্পসহ রয়েছে নানা সুপারিশ।

বুধবার (২০ নভেম্বর) জাতীয় বিশেষ ওই অর্থনৈতিক অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিবেশ ও সামাজিক মূল্যায়ন নিয়ে আয়োজিত এক জাতীয় সেমিনারে এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সেমিনারটির আয়োজন ছিল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)। সেমিনারে জানানো হয়, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে প্রায় ২শ টি কর্মশালার মাধ্যমে এসব সুপারিশ তুলে আনা হয়েছে।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, চট্টগ্রামের মিরসরাই ও সীতাকুন্ড এবং ফেনী জেলার সেনাগাজী উপজেলার ৩৩ হাজার একর জমি নিয়ে তৈরি হচ্ছে বৃহত্তর অর্থনৈতিক অঞ্চল। সেখানে এরই মধ্যে ১০৪ জন উদ্যোক্তাকে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে।

এই বিশাল অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি হলে এর সামাজিক, পরিবেশ ও অন্যান্য প্রভাব কী হবে, তা নিয়েই চলছে নানামুখী মূল্যায়ন। তারই অংশ হিসেবে অংশীজন ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে সংলাপের ভিত্তিতে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

সুপারিশে বলা হয়েছে, আঞ্চলিক পর্যবেক্ষণ তথ্য পর্যালোচনার ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদফতরকে শিল্প নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ বিবেচনা করতে হবে, যা পরিবেশগত ছাড়পত্র বা এ অঞ্চলে নতুন শিল্প স্থাপনের সিদ্ধান্তের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এ ছাড়া পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণে আঞ্চলিক পানি মান পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। পরিবেশ অধিদফতরকে সিএসটিপি ও সিইটিপির নির্গমনস্থলে পানি মান পর্যবেক্ষণের জন্য একটি সমন্বিত নিয়মিত ও অনলাইনভিত্তিক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা স্থাপন করতে হবে।

সুপারিশে আরও বলা হয়, এ অঞ্চলের ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তরের নিয়মিত পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে এবং ভূগর্ভস্থ পানি তোলার জন্য ওয়্যারপো থেকে অনুমতি নিতে হবে। বিশেষ করে ল্যান্ডফিল সাইটগুলোর জন্য এবটি ভূগর্ভস্থ পানির গুণগত মান পর্যবেক্ষণ প্রোগ্রাম চালু করা উচিত।

অর্থনৈতিক অঞ্চলের বর্জ্যের উৎসস্থল আলাদা করাকেও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে সুপারিশ করা হয়েছে। সব ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অবশ্যই দৃঢ়ভাবে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২১-এর শর্তাবলি অনুসরণ করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সুপারিশের মধ্যে আরও উঠে এসেছে- বিকল্প পানির উৎস হিসেবে এ অঞ্চলে একটি লবণাক্ততা অপসারণকারী প্ল্যান্টকে বিবেচনা করা যেতে পারে, কার্যক্রম শুরু করার আগে একটি পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন করতে হবে, ভবিষ্যৎ শিল্প উন্নয়ন ও প্রভাবিত উন্নয়ন বিবেচনা করে এ অঞ্চলের জন্য একটি ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা প্রণয়ন করে ধাপে ধাপে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।

বর্তমান সুপার ডাইকের বাইরের অংশে একটি সবুজ বেষ্টনী উন্নয়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সুপার ডাইক ও এনএসইজেডকে ঘূর্ণিঝড় ও সংশ্লিষ্ট জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষা দিতে সহায়ক হবে।

সেমিনারে তুলে ধরা সুপারিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে একটি আঞ্চলিক নিষ্কাশন পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে, বিশেষ করে বর্ষার আগে এ অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনব্যবস্থার কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বন্যা ও জলাবদ্ধতা কমাতে যথাযথ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। জাতীয় আইন ও বিশ্বব্যাংকের পরিবেশগত ও সামাজিক সুরক্ষা নীতিমালা অনুযায়ী ভূমি, জীবিকা, উপার্জন ও অন্যান্য বিনিয়োগের ক্ষতির জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

কর্মস্থল ও বাসস্থানের মধ্যে দূরত্ব বিবেচনায় শ্রমিকদের জন্য একটি টাউনশিপ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের তাগিদও দেওয়া হয়েছে সুপারিশে। বলা হয়েছে, আবাসিক সমস্যা সমাধানে মিরসরাই ও ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চলের সংযোগ সেতু নির্মাণ করতে হবে। একই সঙ্গে দ্রুত আবাসিক এলাকার উন্নয়ন কাজও শুরু করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগব্যবস্থা ও অন্যান্য সামাজিক অবকাঠামোর যথাযথ উন্নয়ন বাস্তবায়নের তাগিদও দেওয়া হয়েছে সুপারিশে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন
বিষয়: * চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিবেশ রক্ষায় ১৩ সুপারিশ