বাফুফে কি এখন আওয়ামি লীগের পুনর্বাসন কেন্দ্র!
ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দেশ থেকে স্বৈরশাসক বিদায় নিলেও তার অনুসারীরা রয়ে গেছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাচনে ভোল পালটে বিএনপি নামধারীদের সঙ্গে এসব অনুসারীরা জোট বেঁধেছে। ১৭ বছর ধরে ফুটবলকে বেচে খাওয়া বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন দম্ভোক্তি করে এবারও নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু চরম পরাজয় আঁচ করতে পেরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বাফুফের কোটি কোটি টাকা লোপাটকারী সালাউদ্দিন। নির্বাচন থেকে সরে গেলেও সহযোগীদের পুনর্বাসনের কূটকৌশল করেছেন তিনি। বাফুফের আরেক দুর্নীতিবাজ মাহফুজা আক্তার কিরনের নেতৃত্বে সালাউদ্দিনের ছায়াসঙ্গীরা একজোট বেঁধে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। সরাসরি আওয়ামী লীগের পদ-পদবিধারীদের সঙ্গে এক প্যানেলে থাকছেন কতিপয় বিএনপি নামধারীরা। ২৬ অক্টোবর নির্বাচনের জন্য বাফুফে যে ১৩৩ জন কাউন্সিলরের তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে অধিকাংশেরই স্বৈরাচারের দোসরদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। হত্যা মামলার আসামি সাবেক হুইপ সামশুল হক চৌধুরী চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে আবারও কাউন্সিলর হয়েছেন। খুলনা বিভাগ থেকে এসেছেন অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান। মাগুরার বাসিন্দা জিল্লুর বাফুফের আইন কর্মকর্তা হিসাবে রয়েছেন। মাগুরার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামানের নামে ফুটবল একাডেমি পরিচালনা করতেন এই জিল্লু। ওই একাডেমির কাউন্সিলরশিপ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে সাবেক ফুটবলার ও বিএনপির সমর্থক সাইফুর রহমান মনির কাছে। সাবেক ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের ছোট ভাই প্রয়াত জাবিদ আহসান সোহেলের নামের ক্লাব থেকে কাউন্সিলরশিপ কিনেছেন সাবেক ফুটবলার জালালউদ্দিন।
উত্তরা ক্লাব ফুটবল লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক রাইসুল ইসলাম লিটনের স্ত্রী হাজেরা বেগমকে বানানো হয়েছে কাউন্সিলর। মোহামেডানের ফুটবল ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব বাংলাদেশ বয়েজের এবং মঞ্জুর করিম মঞ্জু নবাবগঞ্জ ক্রীড়া চক্রের কাউন্সিলরশিপ কিনেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ বয়েজের সভাপতি ছিলেন সাবেক কমিশনার আওয়ামী লীগের মইনুল হক মঞ্জু।
একজন এক্টিভিস্ট ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘বাফুফে কি এখন আওয়ামি লীগের পুনর্বাসন কেন্দ্র! যারা এবার নির্বাচনে ফর্ম তুলেছে এদের মধ্যে অনেকেই আওয়ামিলীগের লুটপাটে সহযোগী। সাকিবের মতো একজন অসাধারণ খেলোয়ারকে আমরা প্রতিরোধ করলাম কারন সে ডামি এবং অবৈধ ইলেকশনের এমপি। সে যতোই ভালো খেলুক এটা আমাদের কাছে মুখ্য নয়। সেখানে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি, ২০২৪ সালের ডামি ইলেকশনের এমপি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে ইলেকশনের ফর্ম তুলেছে।
যেখানে ডামি এমপিদের গ্রেফতার হওয়ার কথা, সেখানে তারা বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদেরকে পুনর্বাসন করছে কারা? আমাদের ছাত্র প্রতিনিধি উপদেস্টাদের কাছে আমরা দাবি জানাই এই সমস্ত দুর্বৃত্ত যেন আর সুযোগ না পায় পরিবর্তন নতুন বাংলাদেশে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এক প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় সালাউদ্দিন-কিরন গংরা তাদের অনুসারীদের বৈতরণী পার করানোর জোর চেষ্টা করছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক তারকা ফুটবলার আবদুল গাফফার বলেন, ‘গত ১৫ বছর বাফুফের নির্বাচনে কাউন্সিলরদের টাকা দিয়ে প্রভাবিত করে ও ভোট কিনে লোক দেখানো নির্বাচন হয়েছে। তখন নির্বাচন মানে কাউন্সিলরদের পকেট ভারী করা, বিগত চারটি নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের লোককে কাউন্সিলর বানানোর মহোৎসব চলছে। ফুটবল নিয়ে পরিকল্পনা না করে তাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন জেলা থেকে ডিএফএ ফোরাম এবং ঢাকার ক্লাবগুলো থেকে নিজের পছন্দের লোককে কাউন্সিলর বানানো। এমনো দেখা গেছে, ভোট কেনা-বেচার টাকা নিয়ে কাউন্সিলরা প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ভাই মাত্র ২০ হাজার টাকা দিলেন? তাই আমরা আর আগের মতো ভোট কেনা-বেচার নির্বাচন চাই না।’
সাবেক এই তারকা ফুটবলার যোগ করেন, ‘একজন ভালো ফুটবল খেলোয়াড় মানেই একজন ভালো ক্রীড়া সংগঠক নন। আবাহনী লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, মোহামেডানের প্রবাদপ্রতীম পুরুষ মনিরুল হক চৌধুরী, প্রয়াত মেয়র, সাবেক যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী সাদেক হোসেন খোকা, রহমতগঞ্জের কর্মকর্তা প্রয়াত মো. আমিন-এদের প্রত্যেকেরই রাজনৈতিক পরিচয় ছিল। কিন্তু বাফুফে পরিচালনায় তারা রাজনৈতিক প্রভাবকে ব্যবহার করেননি, যা আমাদের জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। কিন্তু আমরা সেই শিক্ষাকে মনে রাখিনি বা ধারণ করেনি।’ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পাওয়া এই ফুটবলার আরও বলেন, ‘ওয়ারী ক্লাবের মান্নান ভাই ও বাচ্চু ভাই, ভিক্টোরিয়া ক্লাবের কচি ভাই, ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবের মালু ভাই, সালাম ভাই, রহিম ভাই, আরামবাগের সুলতান ভাই, বেবী ভাই, কাশেম ভাই, সাবেক ট্রেজারার শামীমুজ্জামান বসুনিয়া ও জোহা ভাই, রাজশাহীর জাফর ইমাম, খুলনার অধ্যাক্ষ রহমান, ধানমন্ডি ক্লাবের পেয়ারু ভাই-এদের প্রত্যেকেরই রাজনৈতিক পরিচয় বা আদর্শ ছিল। কিন্তু ফুটবল ফেডারেশন পরিচালনায় তারা রাজনৈতিক প্রভাবকে ব্যবহার করেননি। তারা রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে থেকে ফুটবল ফেডারেশন পরিচালনা করেছেন, যা আমাদের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হতে পারে।’