আত্মগোপনে কমলগঞ্জের শীর্ষ আওয়ামী লীগ নেতারা
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার):
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় গত ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের কয়েক জন নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে ভাঙচুর করা হয়েছে।
মামলার আসামী হয়েছেন অনেক নেতাকর্মী। হামলা-মামলায় জর্জরিত হয়ে চরম বিপর্যয়ে তারা। বিশেষ করে দলের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে যারা ছিলেন তারাই বেশী রোষানলে পড়েছেন। ফলে উপজেলার দুই-তৃতীয়াংশ শীর্ষ নেতা এখন বাড়ী-ঘর ছাড়া। শীর্ষ নেতা-কমর্ীরা আত্মগোপনে চলে যাওয়ার ফলে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনের তৃনমূলের কর্মীরা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। তারা অভিভাবক শূন্যতায় পড়ে দিশেহারা অবস্থায় এখন । এই অবস্থায় তারা স্থানীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্ধের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়ছেন।
জানা যায়, বিগত ৫ আগস্ট সদ্য সাবেক কৃষিমন্ত্রী উপাধ্যক্ষ ড.মো.আব্দুস শহীদের কাাঁঠালকান্দী গ্রামে অবস্থিত বাগান বাড়ী,ছাত্রলীগ সভাপতি হামিম মাহমুদ জয়ের ব্যক্তিগত কার্যালয়, মাধবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আসিদ আলীর ব্যক্তিগত কার্যালয় সহ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার আরো কয়েকটি স্থানে বিক্ষুদ্ধ নাগরিকরা ভাঙচুর করে। অপরদিকে, মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার তোফায়েল আহমেদ শরীফ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় কমলগঞ্জের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আসামী করা হয়েছে। মামলা আসামী ও হামলার আশংকায় এখন কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ তার অঙ্গ-সংগঠনের শীর্ষ নেতারা ঘর-বাড়ী ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। আরো জানা যায়, মৌলভীবাজার মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় সাবেক কৃষি মন্ত্রী উপাধ্যক্ষ ড.মো.আব্দুস শহীদের ছোট ভাই ও কমলগঞ্জ উপজেলার সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল, কৃষি মন্ত্রীর আরেক ছোট ভাই ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ বদরুল,পৌরসভার মেয়র জুয়েল আহমদ,ইউপি চেয়ারম্যান আশিদ আলী,সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাদশা,সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাব্বির আহমেদ ভঁইয়া, ছাত্রলীগ সভাপতি হামিম মাহমুদ জয়, কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি শাহিন মাহমুদ জয় সহ তাদের সাথে স্থানীয় অসংখ্য নেতাকর্মী এবং মাঠ পর্যায়ের সাধারণ কর্মী-সমর্থক মামলার নামীয় আসামি হয়েছেন।
এছাড়া নাম উল্লেখ্য ছাড়াও অজ্ঞাত আসামি রয়েছেন অনেকে। মামলার আসামি হওয়ায় নেতাকর্মীরা ঘরবাড়ি ছেড়ে নানা জায়গায় তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমন অবস্থায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূলের বঞ্চিত এবং এখন হয়রানীর শিকার কেউ কেউ সংবাদকর্মীদের কাছে চরম হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন,বিগত সময়ে যারা দুই হাতে অর্থ সম্পদ কামিয়েছেন তারা এখন কোথায় ? দুঃসময়ে তারা এখন আমাদের পাশে নেই কেন ? কেউ বালু মহাল দিয়ে কামিয়েছেন,কেউ পরিবহণ সেক্টর দিয়ে,মনোনয়ন বাণিজ্য করে,তদবির করে এবং দলের পদবি বিক্রি করে কামিয়েছেন, কেউ ঠিকাদারি করে, ঠিকাদারি সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করে কামিয়েছেন।
আবার কেউ কেউ দখলবাণিজ্য করে,ভূমিদস্যুতা দিয়েও অঢেল ধন সম্পদ গড়েছেন। আইন প্রণেতা হয়েও একচেটিয়া প্রভাব খাটিয়ে অর্থ সম্পদ গড়েছেন। দলের অসহায় সাধারণ নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে তারা এখন তাদের পাশে নেই কেন ? অথচ ওইসব নেতাদের জন্যই সাধারণ কর্মী-সমর্থকরা জীবন দিতেও প্রস্তুুত থাকতেন। দিনে রাতে যখনি সেসব নেতা কল দিতেন নেতার ইচ্ছে পূরণে সচেষ্ট থাকতেন। সকল সুযোগ-সুবিধা,ভাগ-বাটোরার সময় দূরে,বঞ্চিতদের কাতারে।এসব বিষয়ে জানতে কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ,যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সিনিয়র কয়েকজন নেতাকে ফোন দিলে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।