সালমান শাহ হত্যার বিচার শেখ হাসিনা করেনি

 

ঢালিউড মডেল ও অভিনেতা সালমান শাহর ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। এ মহানায়কের মৃত্যু নিয়ে একটি গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকারে লন্ডন থেকে টেলিফোনে তার মা নীলা চৌধুরী বলেছেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন— সালমান শাহ হত্যার বিচার হবে, আমি এটার বিচার করব। কিন্তু শেখ হাসিনা বিচার করলেন কোথায়?

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটনের বাসা থেকে সালমান শাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম প্রতিভাবান, জনপ্রিয়, সফল এবং কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ওই সময় অপমৃত্যুর মামলা করেন সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। তবে সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন বলে এটি মানতে পারেননি তার মা নীলা চৌধুরী।

পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই অভিযোগটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করা হয়। তার দাবি— তার ছেলে আত্মহত্যা করেনি, আত্মহত্যার কোনো আলামত নেই। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আর এর জন্য তার স্ত্রী সামিরা ও আজিজ মোহাম্মদ ভাই জড়িত বলে জানান নীলা চৌধুরী। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী সালমান হত্যার বিচার করার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনি বিচার করলেন না।

নীলা চৌধুরী বলেন, আমি জানতাম শেখ হাসিনার আমলে আমার ছেলের বিচার হবে না। আমরা শেখ হাসিনা সরকারের পরিবর্তন চেয়েছিলাম, পতন চেয়েছিলাম। আর নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী সরকারের বিদায় দরকার ছিল। অবশেষে তাদের বিদায় হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা নতুন সরকারের কাছে শুধু সালমান শাহ হত্যার বিচার না, সাগর-রুনি হত্যার বিচারও চাই।’ তিনি বলেন, ‘দেশের ১৮ কোটি মানুষের চাওয়া সালমান শাহ হত্যা মামলার বিচার হোক। হত্যার পেছনে তার স্ত্রী সামিরা, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ফিল্মের অনেকে রয়েছে। সালমান শাহর জন্য ৪১ জন ভক্ত-অনুরাগী মারা গেছে। আমি মা তো মরতে পারলাম না। আমি যদি মরেও যাই, ভক্ত-অনুরাগীরা এ মামলার বিচার চালিয়ে নেবে।’
অভিযোগ করে নীলা চৌধুরী বলেন, ‘বনজ কুমার অনেক টাকা খেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন। আমাদের কাছে বারবার টাকা চাওয়া হয়েছে। সালমান শাহর অডিও রেকর্ডের ক্যাসেট পিবিআইতে দিয়েছিলাম, কিন্তু সেটা ফেরত পাইনি। এ মামলার বিচার চাইতে গিয়ে আইনমন্ত্রী, পিপি আব্দুল্লাহ আবু, আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আমাকে অনেক হেনস্তা করেছে। আব্দুল্লাহ আবু রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হয়েও তিনি সালমান শাহ হত্যা মামলার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।’

এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, আগামী ২ জানুয়ারি রিভিশন মামলার বিষয়ে শুনানি হবে। আমরা সঠিক তদন্তের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাব। যাতে প্রকৃত আসামিরা আইনের আওতায় আসে। এ হত্যার বিচার যেন সালমান শাহর মা দেখে যেতে পারেন, সেটাই প্রত্যাশা করি।

উল্লেখ্য, সালমান শাহ ছিলেন একাধারে ঢালিউড অভিনেতা ও মডেল। তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসের অন্যতম প্রতিভাবান, জনপ্রিয়, সফল এবং কিংবদন্তি ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার প্রকৃত নাম ছিল চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন। গণমাধ্যমে তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের রাজপুত্র, নায়কদের নায়ক, আধুনিক ঢালিউডের প্রথম সুপারস্টার, অমর মহানায়ক এবং স্বপ্নের নায়ক উপাধিতে ব্যক্ত করা হয়।

টেলিভিশন নাটক দিয়ে তার অভিনয়জীবন শুরু হলেও ১৯৯০-এর দশকে তিনি চলচ্চিত্রে অন্যতম জননন্দিত শিল্পী হয়ে উঠেন। ১৯৯৩ সালে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত মুক্তি পায়। একই ছবিতে নায়িকা মৌসুমী ও গায়ক আগুনের অভিষেক হয়। সাড়ে তিন বছরের মতো স্বল্প সময়ের ক্যারিয়ারে তিনি ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, যার অধিকাংশই ছিল ব্যবসাসফল। জনপ্রিয় এ নায়ক নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশে সাড়া জাগানো অনেক চলচ্চিত্র যেমন— বিক্ষোভ, সুজন সখি, কন্যাদান, স্বপ্নের ঠিকানা, মায়ের অধিকার, এই ঘর এই সংসার, সত্যের মৃত্যু নেই, আনন্দ অশ্রু ইত্যাদিতে অভিনয় করার মাধ্যমে দেশের শীর্ষ তারকায় পরিণত হন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * সালমান শাহ হত্যার বিচার শেখ হাসিনা করেনি