মাদ্রাসার অনিয়ম দুর্নীতির তদন্তে এসে স্থানীয়দের তোপের মুখে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা
জয়পুরহাট প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের কালাইয়ে শিকটা এ জি দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসার ল্যাব সহকারী পদে গোপনে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে ওই পদে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি, স্থানীয় আওয়ামী নেতা ও পুনট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট পদে আবেদন করা ছাড়াও নিয়োগ পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এলাকার আগ্রহী প্রার্থীরা। এবিষয়ে ভুক্তভোগী একজন প্রার্থী স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। সে অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করতে এসে স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মো. মনোয়ারুল হাসান ও মাদ্রাসা সুপার কাইয়ুম আলী। আজ বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বেলা ১১টায় উপজেলার শিকটা এ জি দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসার মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১১ মার্চে দুটি ভুঁইফোড় পত্রিকায় ল্যাব সহকারী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও স্থানীয়রা জানতে পারে না এবং প্রতিষ্ঠানের নোটিশ বোর্ডেও দেওয়া হয় নাই। গত ১৯ জুলাই নিয়োগ পরীক্ষার শুরুর দেড় ঘণ্টা আগে মাদ্রাসার সুপার এবং সভাপতি মিলে মোট ৮ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩ জন প্রার্থীর নিয়োগ বোর্ড ও পরীক্ষা স্থগিত করেন। পরবর্তীতে পরীক্ষার সময় জানিয়ে দেয়ার কথা বলে তাদেরকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়ার পর সেই দিনই সকাল সাড়ে ১০টায় অন্য ৫ জনকে নিয়ে নিয়োগ বোর্ডের কাজ সম্পন্ন করেন ওই মাদ্রাসার সভাপতি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এবং ইউপি পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোরশেদুল ইসলামের স্ত্রীকে নিয়োগ দেয়া হয়।
এছাড়াও মাদ্রাসার সুপার এবং সভাপতি দুজনে গত কয়েক বছরের মধ্যে মাদ্রাসার কয়েকটি নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা মাদ্রাসা সংস্কারের নামে অনুদানের টাকা ও আত্মসাৎ করেছেন।
অভিযোগকারী মুক্তা বানু বলেন, যে পত্রিকায় নিয়োগের সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে সে পত্রিকাগুলো এলাকায় আসেনা এবং মাদ্রাসার বোর্ডে ঝুলানো হয় নাই। মাদ্রাসার এক শিক্ষকের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেয়ে আমরা আবেদন করি। আমরা পরীক্ষার দিন মাদ্রাসায় সকাল ৯টার দিকে উপস্থিত হলে মাদ্রাসার সুপার এবং সভাপতি দুজনেই দেশের পরিস্থিতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে খারাপের কারণে কারফিউ চলমান অবস্থায় তাদেরকে ফেরত পাঠিয়ে দিয়ে সেই দিনই মাদ্রাসার সভাপতি ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তার স্ত্রী তাজমিনা খাতুনকে নিয়োগ দেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্ত করবেন আসবে জেনে সকাল থেকে মাদ্রাসার মাঠে স্থানীয়রা জড়ো হতে শুরু করে। একপর্যায়ে মাদ্রাসার সুপার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েন।
স্থানীয় বাসিন্দা মুজিবর হক বলেন, গত ১৫ বছর ধরে এই মাদ্রাসার নিয়োগ বাণিজ্য ও অনুদানের টাকা-পয়সা লুট করেছে মাদ্রাসার সুপার ও বিগত কমিটিররা।
আরেক বাসিন্দা হাসিবুল ইসলাম বলেন, দ্বীন ইসলামী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ক্লাস করার জন্য রুম পায় না। অথচ সব টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে গেছে সুপার ও সভাপতি। সুপারের কাছে ১৫ বছরের আয় ব্যয়ের হিসেব চাই।
শিকটা এ জি দ্বিমুখী দাখিল মাদ্রাসার সুপার আব্দুল কাইয়ুম বলেন, দীর্ঘদিন থেকেই আমি মাদ্রাসার সুপারের দায়িত্বে রয়েছি। দলীয় সরকারের আমলে যারা সভাপতি হয়েছেন তারা এসব করেছে৷ আমি কোন দুর্নীতি অনিয়ম করিনি৷
এ বিষয়ে কালাই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মো. মনোয়ারুল হাসান বলেন, এক প্রার্থীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তের জন্য মাদ্রাসায় এসেছিলাম।মাদ্রাসার অনেক অনিয়ম, দুর্নীতি বিষয়ে স্থানীয়রাও অভিযোগ করেছেন। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷