শরীয়তপুর জমি দখলের অভিযোগ কথিত মাদ্রাসার সেক্রেটারি আমির হোসেন কোটারির বিরুদ্ধে
শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
শরীয়তপুর আটং গ্রামে ফোরকানীয়া মাদ্রাসার নাম ভাংগিয়ে জমি দাতার জমি দখলের পায়তারার অভিযোগ কথিত মাদ্রাসার সেক্রেটারি আমির হোসেন কোটারি বিরুদ্ধে।
২৪ আগষ্ট শনিবার বিকেলে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, আটং উচ্চ বিদ্যালয়ের বাউন্ডারির ভেতর এক চালা ছোট একটি টিনের ঘর রয়েছে। তাতে চাল নেই। জরাজির্ণ টিনের বেড়া। তাতে মরিচা ধরে গেছে। দেখে বোঝার উপায় নাই। আসলে এটা মাদ্রাসা না মসজিদ।
এসময় এলাকার ছৈয়দ জাকারিয়া ও নুরুল ইসলাম মুন্সি বলেন, এটা মাদ্রাসা ছিলো। এটা ঝড়ে পরে যাওয়ার পরে আর সংস্কার করা হয় নাই। ৬-৭ মাস এভাবেই আছে। এখানে মাদ্রাসার ১৫ শতাংশ জায়গা আছে। মাদ্রাসাটি আবার করা হবে।
এদিকে মাদ্রাসা জমি দাতা দক্ষিন আটং গ্রামের আব্দুল মালেক বেপারি ছেলে দেলোয়ার বেপারী অভিযোগ করে বলেন, আটং স্কুল মাঠের কাছে দক্ষিণ আটং ফোরকানীয়া মাদ্রাসা। এই মাদ্রাসার আয় উন্নতির জন্য সাড়ে ৪০ শতাংশ জমি দলিল করে দিয়েছিল। সাড়ে ৪০ শতাংশ জায়গার ভেতরে যা উৎপাদন হবে তা ফোরকানীয়া মাদ্রাসা জন্য অর্পণ করলাম। আমার জমি আমার থাকবে,আমার জমির খাজনা আমি নিজে বাহন করবো। আর কোন কারণে যদি মাদ্রাসা না থাকে। তাহলে আমার সম্পত্তি আমার অনুকূলে থাকিবে। এতে যদি মাদ্রাসা কমিটির লোক বাঁধা সৃষ্টি করে তাহলে সর্ব আদালতে অগ্রাহ্য হইবে। এভাবে দলিল করে দেবার পর এখানে এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় নাই। প্রতিষ্ঠিত না হওয়াতে মাদ্রাসার যে কমিটি আছিল এরা চুরি কইরা আমার বাপে দিছিল ফসল, আর তারা এই জায়গাটাই রেকর্ড কইরা নিয়া গেছে। আমরা তখন চিকন্দি কোর্টে যায়। আমরা একটা মামলা করি। মামলাটি ২০১৪ সালে রায় পাই। রায় পাওয়ার পর রেকর্ড সংশোধনীর জন্য শরীয়তপুর ল্যান্ডসার্ভে ট্রাইবুনালে মামলা করি। সেখানে ৪ জুলাই ২০২৩ সালে আমরা একটা ডিগ্রি পাই।
ভূমি দ্যসু আমির হোসেন কোটারি মাদ্রাসার সেক্রেটারি সাজ দিয়া চিকন্দি কোর্টে যাইয়া আমরা যে রায় ও ডিগ্রি পায়ছিলাম। সেইটার বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলা কইরা আজ ১২ বছর ঘুরাইতেছে আমাদের। আমরা অসহায়, আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
জমিদাতা আব্দুল মালেক বলেন, আমি ফসল দিছি জমি দেই নেই। মাদ্রাসা চলবো ফসল নিবো। মাদ্রাসা না চলবো তা হলে আমারটা আমারে দিয়া দিবো। এখন মাদ্রাসা চলে না। আমার জমিতে বাঁধা দেয়। ফোরকানিয়া মাদ্রাসা বাড়ির পাশে দেখিয়ে বলেন এই জায়গায় ছিলো। এখন এই জায়গায় নাই। এরা বলে জায়গা কিনছে মাদ্রাসা বানাবে, তাও কত বছর হয়ে গেলো,বানাইওতো না। আমি ফসল দিছি,জমি দেই নাই।
ইউপি সদস্য হানিফ শিকদার বলেন, এখানে অনেক আগে একটা মাদ্রাসা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাদ্রাসা হয় নাই। দাতা তখন বলছিল যদি মাদ্রাসা হয়,তাহলে আমি এই জমির ফসল অর্পণ করবো। মাদ্রাসা না হলে কাগজে লেখা আছে যার জমিন সেই ফেরত পাবে। অথবা ফেরত নিবে। কিছু অসাধু লোক আছে তারা মালিকানা রেকর্ড করে নিয়ে গেছে। মাদ্রাসা নাই। মাদ্রাসার নামে একটা জমি রেকর্ড করাইছে মিথ্যা ভাবে। প্রকাশ্যে কোন মাদ্রাসা নাই। এখন তাদের জমি নিয়া ঘুরাঘুরি করতেছে। এই জমিটা আত্মসাৎ করার জন্য এই চক্রটা অনেক বছর ধরে লেগে আছে। এই চক্রের আছে আমির হোসেন কোটারি। ওনার বাড়ি নশাসন। উনি এখানে এসে থাকে। আ.লীগ সরকারের আমলে অনেক প্রভাব দেখায়ছে। মাদ্রাসার কথা কইয়া সব কিছু লুটপাট করে খাচ্ছে। আমরা এখানে ত্রিশ বছর যাবৎ দেখতেছি এখানে মাদ্রাসা নাই। এরা মিথ্যা ভাবে মাদ্রাসার কথা কইয়া জমিটা রেকর্ড করাইয়া নিছে। আমরা ১২ বছর মিথ্যা মামলা দিয়া আদালতে ঘুরাইতেছে। তারা হুমকিধামকি দিতেছে। বলে তোরা এই জায়গায় আসতে পারবি না৷ এই জমি নিতে পারবি না। আমরা ডিগ্রি পায়ছি তারা আবার এই ডিগ্রির বিরুদ্ধে মামলা দিয়া আমাদের হয়রানি করতেছে। আমরা এই তত্বাবধোক সরকারের কাছে আকুল আবেদন, আইনের মাধ্যমে যাতে করে আমাদের জমিটা ফেরত পাই।
এলাকার ছৈয়দ জাকারিয়া ও নুরুল ইসলাম মুন্সি বলেন, এটা মাদ্রাসা ছিলো। এটা পড়ে যাওয়ার পরে আর সংস্কার করা হয় নাই। ৬-৭ মাস এভাবেই আছে। এখানে মাদ্রাসার ১৫ শতাংশ জায়গা আছে। এটা আবার করা হবে।
আটং বাজার ব্যবসায়ীর কাছে জানা যায়,ছোট এই ঘরটিতে আগে নামাজ পড়তাম মসজিদ ছিলো। আর ফোরকানীয়া মাদ্রাসা ছিল ৪০বছর আগে।
এবিষয়ে মাদ্রাসার সেক্রেটারি আমির হোসেন কোটারী বলেন,মাদ্রাসা ঝড়ে ভেঙ্গে গেছিল। পরে রিপেয়ার করার জন্য ভাংগ ছিলাম। পরে স্কুলের ঝামেলা। স্কুলের জায়গাটি ছিল মাদ্রাসার জায়গা। আর মাদ্রাসা যেখানে আছে সেটা হলো স্কুলের জায়গা। এই ঝামেলার কারণে মাদ্রাসা উঠানো হয় নাই। মালেক বেপারি মাদ্রাসা জমি দলিল করে দিয়ে। আবার ২০১২ সালে গোপনে গোপনে ডিগ্রি করায়ছে। যখন আমরা জানতে পারছি। তখন আমরা ডিগ্রির বিরুদ্ধে আপিল করায়ছি। সেই আপিল গত সপ্তাহে মঞ্জুর হইছে। মামলা এখন রানিং হইছে। যদি জমি পাই তাহলে নিয়ে যাবে।
আপনাদের জমির ফসল দিছে, জমি কিভাবে রেকর্ড করে নিলেন? এমন প্রশ্নে আমির হোসেন কোটারী বলেন, না-না এটা তাদের জিঙ্গাসা করেন। তখন তো আমি ছিলাম না। এলাকার লোক ছিল। চিকন্দি কোর্টে যে রায় হইছে সেটা বাতিল। মূল মামলা চলছে। শরীয়তপুর কোর্টে যে রেকর্ড সংশোধনী দিছে। মূল মামলা হেরে গেলে রেকর্ড সংশোধনী থাকবে না। আমি ১১-১২ সালে এই মাদ্রাসায় এসেছি। এলাকার আরও লোক আছে তাদের কাছে যান।