সৈয়দপুরে বিনা নোটিশে কর্মচারী ছাটাইয়ের অভিযোগে সূর্যের হাসি ক্লিনিকে তালা
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ
বিনা নোটিশে হঠাৎ করে চাকুরীচ্যুতির অভিযোগে নীলফামারীর সৈয়দপুরে সূর্যের হাসি ক্লিনিকের মূল গেটে তালা লাগিয়েছে ৪ কর্মচারী। রোববার (৭ জুলাই) সকাল ১১ টায় শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের মুকুল স’মিল এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। এতে ক্লিনিকের ভিতরে গুরুতর অসুস্থ্য রোগীসহ তাদের স্বজন ও কর্মকর্তা-কর্মচারূীরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
খবর পেয়ে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে, গেটে তালা লাগানোর সাথে জড়িত আয়া উম্মে কুলসুম পারভীন বলেন, আমাকেসহ শিউলি বেগম ও কামরুন নেসা নামে দুইজন আয়া এবং সিকিউরিটি গার্ড সামসুর রহমানকে আগাম কোন নোটিশ না দিয়ে গতকাল রাতে হঠাৎ করে জানানো হয়েছে যে আমাদের আর চাকরি নাই। আজ সকালে আসলে ম্যানেজারসহ অন্যান্যরা কাজে যোগদানে বাধা দেয়। ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে গেলে বলে হেড অফিস থেকে নিষেধ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, চুক্তি শেষ তাতে কি? কমপক্ষে একমাস আগে জানালে আমরা অন্যত্র কাজ সংগ্রহ করে নিতাম। এখন হঠাৎ করে কোথাও কাজ পাবোনা। এই উপার্জনের উপর পুরো পরিবারের ব্যয় নির্ভর করে। এমন পরিস্থিতিতে ছেলে মেয়েদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। এখন আমরা কি করবো? তাই বাধ্য হয়ে এই উদ্যোগ নিয়েছি। কমপক্ষে এমাস কাজ করার সুযোগ দেয়া হোক।
তারা আরও বলেন, আমরা দীর্ঘ ১৪ বছর যাবত এই কাজ করছি। আমাদের মত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন কর্মী আর পাবেনা। তবুও জানিনা কি কারণে আমাদেরকে বাদ দেয়া হলো। এবছর আর আমাদের চুক্তি নবায়ণ করছেন না কর্তৃপক্ষ। এবিষয়ে কোন লিখিত পত্রও দেয়নি। শুধু স্থানীয় ম্যানেজার মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। এটা কোন নিয়মের মধ্যে পড়েনা। নতুন কর্মী নিয়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেই এই পলিসি নিয়েছে তারা।
সৈয়দপুর শাখার ম্যানেজার সাজেদুর রহমান বলেন, আমিও মূলতঃ এই চাকুরীচ্যুত কর্মীদের মতই চুক্তিবদ্ধ কর্মচারী। আমাকে যে নির্দেশ দিয়েছে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ আমি তাই জানিয়ে দিয়েছি। অথচ এই ৪ জন অহেতুক আমাকে দোষারোপ করছে। আমার এক্ষেত্রে কোন হাত নেই। এই ব্যাপারে প্রকৃত হেড অফিসই বলতে পারবে।
এব্যাপারে সূর্যের হাসি ক্লিনিকের হেড অফিসের জেনারেল ম্যানেজার কর্ণেল (অব:) ইফতেখার আহমেদের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, চাকুরীচ্যুত, বরখাস্ত বা বাদ দেয়া হয়নি। বরং তারা চুক্তিবদ্ধ কর্মী। প্রতি এক বছর পর পর এই চুক্তি নবায়ন করা হয়। কিন্তু এবার পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চুক্তি নবায়ন করা হবেনা। কেননা এই কর্মীদের বয়স ৫৫ পেরিয়ে গেছে।
আর আগাম নোটিশ না দেয়ার যে অভিযোগ করেছে তা সঠিক নয়। কেননা চুক্তি অনুযায়ী এবং লেবার এ্যাক্ট অনুযায়ী চুক্তিবদ্ধ কর্মীদের দুইভাবে জানানো হবে যে তাদের কাজ শেষ। একটা হলো লিখিত নোটিশ প্রদান। আর অন্যটি হলো চুক্তির শেষ মাসের বেতনের সাথে আরও একমাসের বেতন সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত প্রদান করা। আমরা দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুসরন করে তাদের অগ্রীম বেতন দিয়েছি।
দীর্ঘ ৩ ঘন্টা পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তালা প্রদানকারী কর্মীদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে চলমান জুলাই মাস পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ দেয়ার প্রেক্ষিতে ক্লিনিকের অবরুদ্ধ অবস্থার অবসান ঘটে। এই সময়ে ক্লিনিকের সামনে উৎসুক জনতা ও সংবাদকর্মীদের ভীড় জমে এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করে।