সৈয়দপুর লায়ন্স কলেজে জোর করে কোচিং ফি আদায়ের অভিযোগ, ফেরত দাবী
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি :
নীলফামারীর সৈয়দপুরে লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে কোচিং ফি বাবদ জোরপূর্বক অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। কোচিং ফি না দিলে ফরম পূরণ করতে দেয়া হয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে অভিভাবকরা
এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ইউএনও’র কাছে লিখিত আবেদন করেছেন অভিভাবকরা। কিন্তু ১০ দিন পেরিয়েও কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় বুধবার (১২ জুন) ভুক্তভোগী অভিভাবকরা উপজেলা চত্বরে গিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। বাধ্য হয়ে ওইদিন অভিযোগের কপিতে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন এবং বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) নিজ অফিসে কলেজ অধ্যক্ষকে ডেকে নেন।
প্রায় ২০ জন অভিভাবক স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত বেতন নেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। সেই সাথে সরকারি কোন নির্দেশনা না থাকলেও কোচিং ফি এর নামে ৩ হাজার ৫শ’ টাকা জোরপূর্বক সুকৌশলে আদায় করা হয়েছে। এই দুর্মূল্যের বাজারে আমরা অনেকে ধার দেনা করে কোচিং ফি এর টাকা জমা দিতে বাধ্য হয়েছি। তাই অনৈতিক ভাবে জোর করে আদায়কৃত কোচিং ফি এর টাকা ফেরত দিতে ব্যবস্থা নেয়ার আবেদন করছি।
অভিযোগকারী অভিভাবকদের প্রতিনিধি মো. আসফাক আকতার বলেন, কোন প্রকার কোচিং না করিয়েই মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কোচিং ফি না দিলে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে দেয়া হয়নি। এতে কোচিং করা যাদের প্রয়োজন বা আগ্রহী দূর্বল শিক্ষার্থীদের সাথে যাদের প্রয়োজন বা সামর্থ্য নেই এমন ছাত্র ছাত্রীদেরও বাধ্য হয়ে কোচিং ফি দিতে হয়েছে। এভাবে একদিকে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করেছেন এবং অন্যদিকে শিক্ষা নিয়ে চরম বাণিজ্য করে অর্থগুলো নিজেদের পকেটস্থ করেছেন। শিক্ষকরা যদি এমন দূর্নীতি ও অনিয়ম করে তাহলে আমরা যাবো কোথায়? আমরা এর সুবিচার দাবী করছি।
আরেক অভিভাবক আরজিনা খাতুন বলেন, যে কোচিং করানোর কথা বলে এত টাকা ফি নেয়া হয়েছে। সেই কোচিং কখন করানো হয়েছে? স্কুল টাইমের পর বাড়তি সময় নিয়ে অথবা ক্লাস টাইমেও তো এক্সট্রা কোন কোচিং করানো হয়নি। তাহলে শিক্ষার্থী প্রতি সাড়ে ৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত কেন দিবো? এভাবে শিক্ষকরা প্রায় ১৫ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছে। এটা কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায়না। সরকার যেখানে শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে সেখানে স্কুল কর্তৃপক্ষ টাকাকে। এর সুরাহা প্রয়োজন।
এব্যাপারে কলেজের অধ্যক্ষ মশিয়ার রহমানের সাথে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে দেখা করলে তিনি বলেন, ছাত্র ছাত্রীদের সম্মতি নিয়েই তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কোচিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়। সে অনুযায়ী ৩ হাজার ৫শ’ টাকা করে ফি আদায় করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আবেদন দেখতে চাইলে তিনি বলেন আজ থেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তাই এখন দেখানো সম্ভব নয়। ঈদের পর আসেন। শিক্ষার্থীরা কোচিং করতে চেয়েছে কিন্তু অভিভাবকরা জোরপূর্বক কোচিং ফি আদায়ের অভিযোগ করছেন কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেউ ষড়যন্ত্র করে অভিযোগ করিয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সাইফুল ইসলাম প্রামানিকের অফিস বন্ধ পেয়ে তাঁর মুঠোফোনে কল দিলে তিনি বলেন, এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। স্কুল বা কলেজে কোচিং করানো বাবদ কোন অর্থ আদায় করা যাবেনা। কেউ করলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে তাদের পরামর্শ ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নুর-ই আলম সিদ্দিকীর সাথে তাঁর অফিসে গেলে সাংবাদিক এসেছে জেনেও তিনি সাক্ষাৎ দেননি এবং তাঁর মুঠোফোনে বার বার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই এই বিষয়ে তাঁর কোন মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লায়ন্স ক্লাব সৈয়দপুর এর একজন জেষ্ঠ সদস্য জানান, সম্প্রতি লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজে চরম অনিয়ম দূর্নীতি হচ্ছে। অধ্যক্ষ মশিয়ার রহমান দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বেপরোয়া লুটপাট শুরু হয়েছে। নানা অভিযোগে জর্জরিত হয়ে পড়েছে সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানটি। পরিচালনা কমিটির সভাপতি মারা যাওয়ার পর থেকে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ মিলে অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে। যাচ্ছেতাইভাবে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েছে।
তিনি বলেন, লায়ন্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠান হলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ ক্লাবের কোন পরামর্শ বা সুপারিশ গায়ে লাগাচ্ছেন না। এমনকি কোন তোয়াক্কাই করছেন না প্রতিষ্ঠাতাদের। ইতোপূর্বে ক্লাসরুমের বৈদ্যুতিক পাখা নষ্ট ও লোডশেডিংয়ের সময় বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী তাপদাহে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অভিভাবকরা এনিয়ে বার বার ধর্ণা দিলেও কোন সুরাহা করা হয়নি। অথচ জেনারেটর কেনার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয়েছে। তিনি এই সমস্যাগুলো সমাধানে লায়ন্স ক্লাব নেতৃবৃন্দকে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। (ছবি আছে)