পৌর মেয়র সাথে ইউপি মেম্বার দেবরের পরকীয়া, প্রতিবাদ করায় গৃহবধূকে নির্যাতন
সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
বড় ভাইয়ের স্ত্রী নীলফামারীর সৈয়দপুর পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান বেবীর সাথে নীলফামারী সদর উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার ফিরোজ আলম বুলুর দীর্ঘ দিনের পরকিয়া। ভাই মারা যাওয়ার পর যা প্রকাশ্য বেলেল্লাপনায় রুপ নিয়েছে। বিয়ে না করেও দুইজন একসাথে রাত যাপন করছেন। আর এর প্রতিবাদ করায় উভয়ে মিলে বুলুর স্ত্রী দুই সন্তানের জননী ইতি আক্তারকে বেদম নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। নির্যাতিত গৃহবধূ এখন সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রবিবার (৭ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ৪ টায় হাসপাতালের বিছানায় বসে স্বামী ও বড় জায়ের অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক ও তার উপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন ইতি আক্তার। এসময় দুই মেয়ে প্রভা (৬) ও মাওয়া (৪) মায়ের পাশে মলিন মুখে অবস্থান করছিল। পাশে ছিলেন, ননদ আঞ্জুয়ারা বেগম ও আরেক দেবর ফুলুর স্ত্রী।
ইতি আক্তার সংবাদ কর্মীদের বলেন, গত ২০১৪ সালে বুলুর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পরই জানতে পারি আমার বড় ভাসুর সাবেক পৌর মেয়র আখতার হোসেন বাদলের স্ত্রীর সাথে আমার স্বামীর অবৈধ সম্পর্ক আছে। কিছু দিনের মধ্যে বিষয়টা আমি নিজে হাতে নাতে প্রমাণ পাই।
সেই সময় বিষয়টা ভাসুর আখতার বাদলসহ পরিবারের লোকজনকে জানালে পারিবারিক ভাবে বসলে তারা স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ায় শাসন করে সমাধান করা হয়। এরপর আমাদের সংসারে দুইটি মেয়ে এসেছে। কিন্তু রাফিকা ও বুলু তাদের অবৈধ সম্পর্ক গোপনে বজায় রাখে। যা নিয়ে প্রায়ই আমি খবর পাই। বাদল ভাইয়ের অনুপস্থিতির সুযোগে তারা সৈয়দপুর শহরের বাসায় মেলামেশা অব্যাহত রেখেছিল। যা নিয়ে আমার অন্য দেবর ও ননদেরা একাধিকবার অভিযোগ তুললেও গায়ের জোরে অস্বীকার করে ধামাচাপা দিয়েছে।
কিন্তু ২০২২ সালে আখতার হোসেন বাদল মারা যাওয়ার পর রাফিকা আকতার জাহান বেবী পৌর মেয়র হলে তাদের পরকীয়া বেপরোয়া আকার ধারণ করে এবং প্রতিবাদ করায় আমার উপর নেমে আসে নির্যাতন। সম্প্রতি এর মাত্রা চরম পর্যায়ে পৌছেছে। প্রায়ই তারা শহরের বাবুপাড়ায় মরহুম আখতার বাদল ভাইয়ের বাসায় একত্রে রাতযাপন করে। কিছু দিন আগে এলাকাবাসী তাদের হাতে নাতে ধরে ফেললে কৌশলে আমার স্বামী পালিয়ে রক্ষা পায়। কিন্তু বিষয়টি বেশ চাউর হয়ে পড়ে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মেয়রের অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হয় পর পর দুই বার। এতে তার বিকৃত যৌনাকাঙ্ক্ষার নগ্ন রুপ প্রকাশ হয়ে পড়ে। ফলে তারা শহরের বাসা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে আমার ঘরে এসে মেলামেশায় লিপ্ত হচ্ছে। আমাকে পাশের ঘরে দুই শিশু সন্তানসহ বন্দি করে রেখে তারা বেলেল্লাপনায় মেতে উঠে। সর্বশেষ গত শনিবার শবে ক্বদরের রাতেও তারা মিলিত হয় আমারই ঘরে। আমি নিরুপায় হয়ে অসহায়ের মতো রাত কাটিয়েছি। বাচ্চা দুটোর মুখের দিকে তাকিয়ে আত্মহত্যাও করতে পারছিনা।
কিন্তু সহ্যের সীমা অতিক্রম করায় সকালে স্বামীর সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মেয়র রাফিকা আমার উপর চড়াও হয়ে অশ্লীল গালিগালাজ শুরু করে। এতে প্রতিবাদ করায় রাফিকা আমাকে দুই হাত দিয়ে ধরে রাখে আর বুলু লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে। নির্যাতন সইতে না পেরে আমি চিৎকার করলে আমার মেয়ে দুটি ছুটে আসলেও তারা বিরত না হয়ে মেয়েদের সামনেই মারতে থাকে। লাঠির আঘাতে আমি খুবই অসুস্থ হয়ে পড়েছি। বাম হাত নাড়াচাড়াই করতে পারছিনা।
পরে ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে পুলিশ প্রথমে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেন। তাই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। এখানে হাতের আঘাতের কারণে বাম পাশে শুইতেই পারছিনা। পুরো শরীরে লাল ও কালচে আঘাতের চিহ্ন। প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে। এখান থেকে রিলিজ হয়েই আমি আইনের আশ্রয় নিবো।
ইতি আক্তার আরও বলেন, মেয়র রাফিকার নোংরা মানসিকতা ও ষড়যন্ত্রের কারণে আমার স্বামী অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে আমার সংসার ধ্বংস করছে। আমার নিষ্পাপ শিশুদের জীবন নষ্ট করছে। পৌরসভার লুটপাটকৃত অবৈধ টাকার জোরে অসামাজিক কাজ করে চলেছে। আমার স্বামীকে টাকার লোভ দেখিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করেছে। আমার স্বামী আমাকে ডিভোর্স দিতে চায়। তাই নির্যাতন করে সরিয়ে দিতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। আমি এর বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রী সহ সকলের কাছে এঘটনায় সহযোগিতা আশা করছি।
এবিষয়ে ইউপি মেম্বার ফিরোজ আলম বুলু এর বাড়িতে গিয়ে দেখা না পেয়ে তার মুঠোফোন নম্বর ০১৭৮০৮৫১৮৫৫ এ কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। একইভাবে পৌর মেয়রকেও তার শহরের বাসায় পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে তার মোবাইল নম্বর ০১৩২২৭৬১৯৪৪ এ কল দেয়ার পরও তিনি রিসিভ না করায় তার মন্তব্যও জানা সম্ভব হয়নি।