সুজাউলের ফাঁদে বন্ধি জমি অভিযোগ করেও সেচ পেল না বিধবা জাহানারা
(জয়পুরহাট) প্রতিনিধিঃ
উত্তরের জেলা জয়পুরহাটের অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাদের জীবিকার প্রধান উৎস কৃষি জমি। সরকারিভাবে নির্দেশনা আছে কোথাও এক শতক জমি অনাবাদি রাখা যাবেনা। অথচ চলতি মৌসুমে সেচের পানির অভাবে ২২ শতক কৃষিজমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
প্রভাবশালী সেচ মালিক সুজাউল ইসলাম জোরপূর্বক ওই কৃষি জমিতে সেচের পানি বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন এক বিধবা নারী । এ বিষয়ে ওই ভুক্তভোগী বিধবা নারী প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এরপরেও মিলেনি তার জমিতে সেচের পানি। এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বড়তারা ইউনিয়নের উত্তর হাট শহর গ্রামে।
অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, উপজেলার উত্তর হাট শহর গ্রামের মৃত নূর মোহাম্মদ এর ২২ শতক কৃষি জমিতে কয়েক যুগ ধরেই সেচের পানি দিচ্ছিলেন একই গ্রামের সেচ মালিক সুজাউল ইসলাম। এ পর্যন্ত কোন ঝামেলার সৃষ্টি হয়নি। তবে স্বামীর মৃত্যুর পর যখন থেকে তার ওই বিধবা স্ত্রী চাষাবাদ করছেন সেই থেকেই বিভিন্ন সময় সেচের পানি নিয়ে ঝামেলা করে আসছেন ওই সেচ মালিক। চলতি মৌসুমে তার ওই জমিতে সেচের পানি না দেওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত ফসল ফলাতে পারেনি ওই বিধবা নারী ।
এ কারণে প্রতিকার চেয়ে গত ৩ (মার্চ) উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন ওই ভুক্তভোগী বিধবা বারী । অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অতিঃ দাঃ জিন্নাতুল আরা উভয় পক্ষকেই ডেকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেন এবং ওই সেচ মালিককে জমিতে সেচের পানি দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন। তার পরেও কি এমন পেশিশক্তির ক্ষমতা বলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই বিধবা মহিলার জমিতে সেচের পানি দেয়নি সেচ মালিক সুজাউল ইসলাম৷
সরেজমিনে উত্তর হাট শহর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অভিযুক্ত ওই সেচ মালিকের শ্যালো মেশিন হতে প্রায় ২০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত ভুক্তভোগীর ওই কৃষি জমি সেচের পানির অভাবে অনাবাদি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। চারপাশের সকল জমিতে রোপণ করা ধানের চারা বড় হয়ে উঠলেও সেচের পানির অভাবে অনাবাদি পড়ে রয়েছে জাহানারর ওই ২২ শতক জমি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ওই শ্যালো মেশিনের মালিক সুজাউল ইসলাম বলেন, আমার বড় ভাইয়ের মেয়ে তার স্বামীর কাছ থেকে ওই জমিটি কটকবলা নিয়েছে। তার স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে ওই জমি নিয়ে ঝামেলা চলছে। জমিতে পানি দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হতে পারে এজন্য পানি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে ওই বিধবা নারী বলেন, আমার স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় ওই জমিতে সেচের পানি নিয়ে কখনো সমস্যা হয়নি। স্বামী মারা গেছেন এক বছর। তখন থেকেই ওই সেচ মালিক সুজাউল আমার জমিতে সেচের পানি নিয়ে ঝামেলা করছে। চলতি মৌসুমে আমার জমিতে সেচের পানি বন্ধ করে দেওয়ার কারণে এখন পর্যন্ত ফসল ফলাতে পারিনি। আমি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি কোন প্রতিকার না পেয়ে ইউএনও স্যার বরাবর আবেদন করি। ইউএনও স্যার জমিতে পানি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে তারপরও আমার জমিতে পানি দেইনি সেচ মালিক সুজাউল। তিনি আরো বলেন, আমার স্বামী জীবিত থাকা অবস্থায় কেউ বলেনি যে ওই জমি কটকবলা নিয়েছে। তবে স্বামী মারা যাওয়ার পর দাবি তুলছে। তারপরেও আমি তাদের বলেছি জমি বিক্রয় করে টাকা দিবো।
অথবা তারা বিক্রি করে তাদের টাকা কেটে নিয়ে বাকিটা আমাকে দিতে পারে। যেহেতু একটি মাত্রই জমি তাদের দখল ছেড়ে দিলে আমি বিধবা মানুষ কি করে খাবো? তবে এ সমস্যা অন্যের সাথে। যেহেতু জমি এখনো আমার দখলে সুতরাং জমিতে সেচের পানি দিতে সেচ মালিক সুজাউলের কি সমস্যা?
এ বিষয়ে বড়তারা ৪ নং ওয়ার্ড সদস্য এমদাদুল বলেন, ওই জমিতে পানি দেওয়ার বিষয় নিয়ে আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তুু সেচ মালিক সুজাউল ইসলাম বলে দিয়েছেন সে কোনভাবেই তার জমিতে পানি দিবে না।
এ বিষয়ে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার অতিঃ দাঃ জিন্নাতুন আরা বলেন, জমিতে সেচের পানি না দেওয়ার অভিযোগটি পেয়েছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সেচ মালিক কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ এখন পর্যন্ত কেন ওই জমিতে সেচের পানি দেওয়া হয়নি বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
জানা গেছে, উপজেলায় চলতি মৌসুমে ইরি ধান আবাদে জমিতে সেচ বাবদ অগভীর নলকূপ মালিকেরা মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য করে চুক্তিতে পানি দিচ্ছেন। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে সেচ বাবদ নলকূপ মালিকদের টাকা নেওয়ার পরিপত্র জারির পর উপজেলা সেচ কমিটি জমিতে সেচ বাবদ একটি ফ্রি নির্ধারণ করে দিয়েছে। বিদ্যুৎ কিংবা ডিজেল চালিত গভীর ও অগভীর নলকূপে বোরো ধান আবাদে জমিতে পানি সেচ বাবদ বিঘাপ্রতি হারে দর বেধে দেওয়া হয়েছে।
সেখানে উপজেলার প্রায় এলাকাতেই গভীর ও অগভীর নলকূপ মালিকেরা সেচ বাবদ টাকা নিয়ে বিভিন্ন সিন্ডিকেট করে যাচ্ছে। টাকা চুক্তিতে জমিতে পানি সেচ দিচ্ছেন। তাও আবার আগেই সেচের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে কৃষকদের। সরকারি নীতিমালা মোতাবেক বোরো ধান আবাদে জমিতে পানি সেচ বাবদ সব ধরনের সেচ মালিকরা কৃষকদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারের টাকা নেবেন। মাঠ পর্যায়ে স্থানীয় বিএডিসি থেকে সেচ মেশিন মালিক ও কৃষকদের মাঝে এ বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।