১০০ আসনে স্বতন্ত্রদের সাথে আওয়ামী লীগের বিরোধ বাড়ছে

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের যে সমস্ত নেতারা মনোনয়ন পাননি, স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন এবং যারা নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা যারা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন, তাদের বিরোধ ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
তাছাড়া, যারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে তারাও আওয়ামী লীগের ভেতরে নতুন করে বিভক্তি এবং কোন্দল তৈরি করছেন।
সারাদেশে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের বিরোধ কোন্দল পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।বরিশালের কথাই যদি ধরা যায় সেখানে, আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হয়েছিলেন দলটি আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়।
সেখানে আওয়ামী লীগেরই আরেক নেতা পঙ্কজ দেবনাথ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। পঙ্কজ দেবনাথ ২০১৮ সংসদেও এমপি ছিলেন। এবার মনোনয়ন না পেলেও এলাকায় তার একটি প্রভাব রয়েছে, তার নিজস্ব কর্মী সমর্থক রয়েছে। এবার শাম্মী আহমেদ আবার সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন। এখন তিনি আবার নতুন করে সংগঠিত হচ্ছেন। ফলে এলাকায় আওয়ামী লীগের স্পষ্ট দুটি গ্রুপ বিভক্ত অবস্থায় রয়েছে। যে কোন সময় তাদের মুখোমুখি অবস্থান সহিংসতায় রূপ নিতে পারে।
একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে গাজীপুরে। সেখানে ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র ভাবে নির্বাচন করেছিলেন। আর আওয়ামী লীগের নেতা মেহের আফরোজ চুমকি নির্বাচন করেছিলেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। কিন্তু শেষপর্যন্ত চুমকি পরাজিত হন।পরাজিত হলে কী হবে, তিনিই আবার সংরক্ষিত আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে এলাকায় আওয়ামী লীগ আবার দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
ফরিদপুরের একটি আসনে এ কে আজাদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করেন। সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন আরেক ব্যবসায়ী শামীম।কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পরাজিত হন। পরাজিত হলেও আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ তিনি রাখতে চাইছেন।
 আওয়ামী লীগের কেউ কেউ এ কে আজাদের পক্ষে কাজ করছেন। কেউ কেউ শামীমের পক্ষে কাজ করছেন। ফলে ফরিদপুরের আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি নির্বাচনের পরে আরও বেড়েছে।এভাবে উদাহরণ দিয়ে দিয়ে বলা যায়, যে সমস্ত নির্বাচনী এলাকাগুলোতে স্বতন্ত্ররা বিজয়ী হয়েছেন সেখানে, পরাজিত আওয়ামী লীগ নেতারা এখন আওয়ামী লীগ সংগঠনকে আকড়ে ধরে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছেন।
বিশেষ করে প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তারা অনেকটাই বেপরোয়া ভূমিকা পালন করছেন।অন্যদিকে, সংসদ সদস্যরা যেহেতু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সেজন্য তারাও এখন নতুন করে এলাকায় তাদের অবস্থান দৃঢ় করতে চাইছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মধ্যে তাদের অবস্থানকে পোক্ত করার জন্য তারা সব ধরনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করছেন।
ফলে কার্যত দুটো করে আওয়ামী লীগ বিরাজ করছে এরকম অন্তত ১০০টি আসনে। যে আসনগুলোতে যে কোন সময় সন্ত্রাস-সহিংসতা দেখা দিতে পারে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, স্বতন্ত্র যারা বিজয়ী হয়েছেন, তারা উপজেলা নির্বাচনকে টার্গেট করেছেন। তাদের নিজেদের সমর্থকদেরকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তুতি গ্ৰহণ করেছেন।
আওয়ামী লীগের নেতারা যারা নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারেননি স্বতন্ত্রদের কাছে পরাজিত হয়েছেন, তারাও উপজেলা নির্বাচনে নিজস্ব প্রার্থী দিয়েছেন।আর এর ফলে উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে জেলার নিয়ন্ত্রণ দখলের একটা নীরব যুদ্ধ ইতোমধ্যে প্রকাশ্য রূপ নিতে শুরু করেছে। আর এই লড়াই শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটি ভবিষ্যতই বলে দেবে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * ১০০ আসনে * আওয়ামী লীগের বিরোধ বাড়ছে * স্বতন্ত্র
সর্বশেষ সংবাদ