জনবল সংকট সত্বেও সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় ট্রেনের উৎপাদন কার্যক্রম বৃদ্ধি

সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
ব্যাপক জনবল সংকট ও বাজেটের সীমাবদ্ধতা সত্বেও দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। দিনে ৩ ইউনিট মেরামত লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও কোচ মেরামতের ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা (টার্গেট) ৪ ইউনিট ছাড়িয়ে গেছে।
নতুন নতুন রেলরুট চালু ও পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ চালু হওয়ায় যেমন কোচের চাহিদা বেড়েছে তেমনি নতুন ট্রেন চালু করতেও অনেক কোচের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এ কারণে পুরাতন ট্রেন মেরামত ও নতুন ট্রেন সংযোজনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে জোগান দিতে কারখানায় এই কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
রেলের সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার রেলবান্ধব। ফলে সারাদেশে রেলপথ বাড়ানো হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ চালুর পর পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতে বেশ কিছু নতুন ট্রেন চালু হয়েছে। দিতে হচ্ছে কোচের জোগান। ফলে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার উপর চাপ বেড়েছে।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ক্যারেজ শপের (উপ-কারখানা) ইনচার্জ ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোমিনুল ইসলাম বলেন, এখানে প্রতিদিন ৩ ইউনিট কোচ মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। প্রতিদিন দুই ইউনিটে একটি পূর্ণাঙ্গ কোচ বুঝানো হয়। সেক্ষেত্রে আমরা চলতি অর্থ বছরে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে ৩১৭টি কোচ মেরামত করেছি। অর্থাৎ প্রতিদিন ৪ ইউনিট মেরামত কাজ হয়েছে।
কারখানা সূত্র জানায়, সৈয়দপুর কারখানায় চরম লোকোবল সংকট রয়েছে। এখানে দুই হাজার ৮৫৯ জনের স্থলে লোকোবল রয়েছে মাত্র ৮২০ জন। কারখানার ২৮টি উপ-কারখানায় (শপ) উৎপাদন চলছে সীমিত সংখ্যক লোক নিয়ে। মাত্র ২৮ শতাংশ লোক কর্মরত আছেন ১১০ একর জমির উপর গড়ে ওঠা বিশাল ওই কারখানাটিতে।
এছাড়াও কারখানায় বাজেট স্বল্পতা রয়েছে। চলতি বছরে মাত্র ২০ কোটি টাকা বাজেট মিলেছে। বাজেটের টাকায় মেরামত কাজে ব্যবহৃত উৎপাদন ও উপকরণ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন দেয়া হয় রাজস্ব খাত থেকে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে শূন্যপদে লোক নিয়োগ জরুরি। সেইসাথে বাজেট দ্বিগুন করা না হলে উৎপাদন ব্যহত হতে পারে।
কারখানা সূত্রে জানা যায়, উপরের চাহিদা অনুযায়ী অবিশ্রান্ত কাজ করছেন কারখানার শ্রমিক-কর্মচারিরা। রেলপথে চলাচলের পর অনুপোযোগী হয়ে পড়া কোচগুলো সৈয়দপুর কারখানায় এনে প্রয়োজনে মেরামত সেরে পূনরায় পাঠিয়ে দেয়া হয় রেলপথে।
সরজমিনে দেখা যায়, ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায়। ক্যারেজ শপে চলছিল ভারি মেরামত কাজ। একটি ক্যারেজের বগির ওপর (আন্ডারফ্রেম) ক্রেনের মাধ্যমে স্থাপন করা হচ্ছে সুপার স্ট্রাকচার। পাশেই বগি শপে চলছিল চ্যাচিজ মেরামতের কাজ। এছাড়া ক্যারেজ শপে চলছে রেলকোচে রংয়ের প্রলেপ। ১২ হাজার রকম যন্ত্রাংশ তৈরি হয় মেশিনসহ কয়েকটি শপে। যা রেলকোচ, ওয়াগণ ও ইঞ্জিনে ব্যবহার করা হয়। একটি শপে ট্রেনের ব্রেক তৈরি হচ্ছিল। একটিতে তৈরি হচ্ছিল একটি কোচের সাথে অপর কোচকে জুড়ে দেওয়ার কাপলিং যন্ত্র। এছাড়া ঢাকায় পুড়ে যাওয়া ৩টি কোচও আনা হয়েছে কারখানায়। যেগুলো মেরামত করছিলেন শ্রমিকরা।
এ নিয়ে কথা হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্বাবধায়ক (ডিএস) সাদিকুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, এখন কাজে তৎপরতা অনেক বেশি। দেশের রেলপথ বাড়ছে। তাই আমাদের ওপর চাপও বেড়েছে। কারখানাটিতে লোকবল সংকট নিরসনের ওপর গুরুত্ব দেন তিনি। তবে সীমাবদ্ধতার মাঝেও কারখানার গতি নজীরবিহীনভাবে ধরে রাখায় তিনি শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী মুহাম্মদ কুদরত ই খুদা জানিয়েছেন, এখন ম্যানেজমেন্ট লেভেল অনেক ভালো। মূলত ব্যবস্থাপনার কারণেই সৈয়দপুর কারখানায় উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। অবিলম্বে রেলওয়ের সব রকম সীমাবদ্ধতা দুর করতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সজাগ আছে বলে জানান তিনি।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা
সর্বশেষ সংবাদ