উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন: বাড়তে পারে আওয়ামী লীগের কোন্দল

আওয়ামী লীগ তাদের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করবে না।
দলীয় প্রতীক ছাড়া উপজেলা নির্বাচন করাটা আওয়ামী লীগের একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত। আওয়ামী লীগ মনে করেছে, এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে দলের ভিতরে অভ্যন্তরীণ কোন্দল সৃষ্টি হয়েছিল তা কমে আসবে।
কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করলে কোন্দল আরও বাড়বে এবং বিভক্ত গ্রুপগুলো তারা একে অন্যের সঙ্গে সহিংসতায় জড়িয়ে পড়বে।
২০১৮ নির্বাচনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের উপদলীয় কোন্দল এবং বিভক্তি প্রকাশ্যে রূপ পেতে শুরু করে। জেলায় জেলায় আওয়ামী লীগের মধ্যে গ্রুপ উপগ্রুপের কোন্দল দেখা যায়। এসময় আওয়ামী লীগের চেইন অব কমান্ডও ভেঙে পড়ে।
অনেক স্থানীয় পর্যায়ের নেতা কেন্দ্রীয় নেতাদের সম্বন্ধে কটূক্তি এবং নানা রকম অপমানসূচক বক্তব্য করলেও আওয়ামী লীগ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেননি।
২০২৪ এর ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যখন মনোনয়ন দেয় সেই মনোনয়ন সঙ্গত কারণে সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। কিন্তু বিএনপি যেহেতু এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি তাই আওয়ামী লীগ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার জন্য যারা মনোনয়ন পাননি তাদেরকেও নির্বাচন করার ব্যাপারে এক ধরনের সবুজ সঙ্কেত দেয়।
সেই সবুজ সঙ্কেত পেয়ে আওয়ামী লীগের যারা মনোনয়ন পাননি তাদের প্রার্থী হওয়ার হিড়িক পড়ে যায় এবং স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার একটি প্রতিযোগিতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিতদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়।
আর এর ফলে সারা দেশে আওয়ামী লীগের বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিতে শুরু করে। অন্তত দেড়শোটি আসনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
 এদের মধ্যে ৫৮ টি আসনে আওয়ামী লীগের নেতারা বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু এই বিজয়ের পর যারা জিতেছেন বা যারা হেরেছেন তারা একে অন্যের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন।
 কার্যত সব জেলায় এখন দুটো করে আওয়ামী লীগ রয়েছে বলেই দৃশ্যমান হচ্ছে। প্রকাশ্যে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে গালমন্দ করছে, সমালোচনা করছে, নিন্দা জানাচ্ছে। এ রকম বাস্তবতাই আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কিন্তু বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করলে কোন্দল আরও বাড়বে। উভয় দলই নিজেদেরকে শক্তিশালী মনে করবে। দলীয় প্রতীক ব্যবহার করার সময় যারা নৌকা পেত তারা নিজেদেরকে শক্তিশালী মনে করত।
প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের প্রতি একটা প্রচ্ছন্ন সমর্থন ছিল। কিন্তু যখন দলীয় প্রতীক দেওয়া হবে না তখন সকলেই সমান মনে করবে। এক্ষেত্রে দলে যারা শক্তিশালী তারা অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালীদের ওপর চড়াও হবে।
ফলে উপজেলা নির্বাচন সহিংসতাপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন দিলে মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্ব বাড়তো। এবার যে যার মতো করে নির্বাচন করবে সেটি আস্তে আস্তে কোন্দল প্রশমিত করতে পারে।
 কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন নির্বাচনী দ্বন্দ্ব এমন একটি দ্বন্দ্ব যা বংশ পরম্পরায় চলে, যুগ যুগ ধরে চলে। এই দ্বন্দ্ব সহসায় মিটবে না।
 উন্মূক্ত উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগের কোন্দল কমাবে না, বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়াবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * আওয়ামী লীগের কোন্দল * উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন
সর্বশেষ সংবাদ