আয়ানের ছবি হাতে নিয়ে হৃদয়বিদারক মায়ের কান্না!
ছোট্ট শিশু আয়ানকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল খতনা করতে, কিন্তু কে জানতো, তাঁর আর বাড়িই ফেরা হবে না। ছোট্ট এই অস্ত্রোপচার করাতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রাণটাই খোয়াতে হয়েছে তাকে। পরিবারের বড় সন্তানকে হারিয়ে এখন বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন আয়ানের মা রাত্না বেগম।
আহাজারি করছেন আর বলছেন, ‘আই আল্লাহ এ কী হলো, চিকিৎসকদের অবহেলার কারণে আমার ছোট সন্তানের জীবন দিতে হলো।’ সন্তান হারানোর শোকে পাগলপ্রায় স্বজনরাও। ছোট অস্ত্রোপচার শেষে পাঁচ বছরের আয়ানের বাড়ি ফেরাটা এমন হবে কল্পনাও করতে পারেনি তারা।
গত সোমবার দুপুরে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সামনে শিশুটির পরিবারের সদস্যদের কান্না আর বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস।
গত ৩১ ডিসেম্বর আয়ানকে ফুল অ্যানেসথেসিয়া (জেনারেল) দিয়ে খতনা করায় বাড্ডার সাতারকুলে ইউনাইটেড মেডিকেল হাসপাতাল। অস্ত্রোপচারের কয়েক ঘণ্টা পরও জ্ঞান না ফেরায় সেখান থেকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয় শিশুটিকে।
সেখানে সাত দিন পিআইসিইউতে (পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট) লাইফ সাপোর্টে রাখার পর রোববার রাত ১২টার দিকে আয়ানকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। গতকাল সকালে লাশ নেওয়া হয় মর্গে। ময়নাতদন্ত শেষে দুপুর আড়াইটায় মরদেহ হস্তান্তর করা হয় পরিবারের কাছে। বাদ আসর নিজ বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে লাশটি দাফন করা হয়। শিশুটি রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলের নার্সারি শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ বলেন, চিকিৎসকদের অবহেলা ও অপচিকিৎসায় আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। আমি ন্যায়বিচার চাই। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। মৃত্যুর পর হাসপাতাল থেকে শুধু জানানো হয়েছে আয়ান মারা গেছে।
এ ঘটনায় বাড্ডা থানায় মামলা করেছি। খতনার সময় অ্যানেসথেসিয়া দেওয়ার ৩০ মিনিট পর জ্ঞান ফেরার কথা জানিয়েছিলেন দায়িত্বরত চিকিৎসক। কিন্তু ওষুধ প্রয়োগে ভুল করায় এমন সর্বনাশ হলো। এমনকি অভিভাবকদের না জানিয়ে অপারেশন টেবিলে আয়ানকে রেখে মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ঘণ্টাব্যাপী ক্লাস নেওয়া হয়।
একমাত্র ছেলের মর্মান্তিক মৃত্যুতে বাড়িতে এখনো চলছে শোকের মাতম। বরুনাজুড়েই ছড়িয়েছে সে নীরবতা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, ফুসফুসে বাতাস জমে যাওয়ায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে শিশু আয়ানের। এতে তার হার্ট, কিডনি, লিভারসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো বিকল হয়ে পড়ে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে শামীমের বক্তব্য শোনার জন্য মুগদা হাসপাতালে উপস্থিত হতে বলেছে অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটি।
এর আগে গতকাল বুধবার সকালে আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত দুই চিকিৎসকসহ দোষীদের গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা আন্দোলন নামে একটি সংগঠন। অন্যথায় ইউনাইটেড হাসপাতাল ঘেরাও করার হুঁশিয়ারি দেয় সংগঠনটি। রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব ঘোষণা দেওয়া হয়।