দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে আশা জোগাচ্ছে নিউ হোপ লিউহো
খোন্দকার এরফান আলী বিপ্লব
গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের ভাংনাহাটীতে এক নান্দনিক পরিবেশে গড়ে উঠা গবাদিপশু, পোল্ট্রি ও মাছের ফিড উৎপাদনকারী চীনা কোম্পানি নিউ হোপ ফিড মিল বাংলাদেশ লিমিটেড দেশের কৃষি খাতে এনেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।যা বিশ্বের বৃহত্তম ও
স্বনামধন্য ফিড উৎপাদনকারী চীনা কোম্পানি নিউ হোপ লিউহোর বিনিয়োগ করা আধুনিক ফিড মিল। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত ফিড মিলটির উৎপাদিত ফিডের উৎকৃষ্ট গুণমানের কারণে দেশের জনগণের কাছে ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে। একদল চীনা
বিশেষজ্ঞ দলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে দক্ষ প্রশিক্ষিত কর্মীবাহিনী কর্তৃক মান সম্পন্ন কাঁচামাল ও উন্নত আধুনিক প্রযুক্তিতে উৎপাদিত ফিড গবাদিপশু, পোল্ট্রি ও মৎস্য সেক্টরে যুগিয়েছে আশার আলো।দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রেখে চলেছে
গুরুত্বপূর্ণ অবদান।মূলত নিউ হোপ লিউহো ১৯৮২ সালে (তালিকাভুক্ত ১৯৯৮) প্রতিষ্ঠার পর কৃষি ও পশুপালনে চীনের বৃহৎ তালিকাভুক্ত কোম্পানিটি বাংলাদেশ, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর,মিশরসহ বিশ্বের ২০টির অধিক
দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে।তাদের সর্বমোট কর্মীবাহিনীর সংখ্যা ৮২ হাজার।এর মধ্যে বেশ কিছু দেশ নিয়ে ৭টি অঞ্চলে ফিড উৎপাদন ও ব্যবসার সাথে জড়িত নিউ হোপ।বাংলাদেশ অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে নিউ হোপ ফিড মিল
বাংলাদেশ লি:,নিউ হোপ এনিমেল নিউট্রেশন বাংলাদেশ কোং লি:,নিউ হোপ এগ্ৰো বিজনেস নেপাল প্রাইভেট লি: এবং নিউ হোপ লংকা লি:।
এছাড়াও নিউ হোপ ফার্মস বাংলাদেশ লি: নামে ময়মনসিংহের ভালুকায় রয়েছে বহিঃবিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ইনকিউবেশন এবং পাঁচটি ব্রিডার ফার্ম।নিউ হোপ বাংলাদেশ অঞ্চলে মোট ৫০জন চীনা কর্মী এবং ৭০০ জনেরও বেশি স্থানীয় কর্মী রয়েছে।বাংলাদেশ অঞ্চলের (বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা) প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন চীনা বিশেষজ্ঞ হিকোয়ান শুই (He Quan Shui)।বাংলাদেশ অঞ্চলের অধীন গাজীপুরে নিউ হোপ ফিড মিল বাংলাদেশ লি:-এ মানবসম্পদ ও প্রশাসন বিভাগে উপমহাব্যবস্থাপক হিসেবে ঝাউ ইউশেন(Zhou Yushen) এবং বিভাগ প্রধান সিউয়ান লি (Siyuan Li) সহ একটি চৌকস পেশাদার চীনা ব্যবস্থাপনা দল রয়েছে।যারা ব্যবহারিক ফিড উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনায় সুদক্ষ।তাঁরা এখানে ২৫০জনেরও বেশি বাংলাদেশী কর্মীকে নেতৃত্ব দিয়ে গুণগত মানসম্পন্ন ফিড উৎপাদনে তৎপর রয়েছেন।২০০৬ সালে কারখানাটি প্রতিষ্ঠিত হলেও উৎপাদন শুরু হয় ২০০৮ সালে।৮.২৩ একর এলাকা বিস্তৃত ফিড মিলটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৭৬ হাজার মেট্রিক টন।বিনিয়োগের পরিমাণ ১২.৩৩ মিলিয়ন ডলার।সম্প্রতি ফিড মিলটির কারখানা পরিদর্শনে যেয়ে দেখা যায় কাঁচামাল সংগ্ৰহসহ উৎপাদনের প্রতিটি স্তরেই যথাযথভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সম্পূর্ণরূপে পরিবেশবান্ধব কারখানাটিতে শ্রমিকদের জন্য রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ও অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা।এখানকার প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীই বন্ধুত্বসুলভ।তাঁরা প্রত্যেকেই নিরাপদ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে কাজ করে চলেছেন।কারখানাটিতে রয়েছে একটি সমৃদ্ধ কেমিক্যাল ল্যাবরেটরী ও বায়ো- ল্যাব।নিউ হোপের কারখানায় উৎপাদিত ৩০ টির অধিক পণ্যের গুণমান উৎকৃষ্ট ও
দামে সহজলভ্য হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী, খামারী ও প্রান্তিক কৃষকদের কাছে নিউ হোপ ব্রান্ড ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ী, খামারী ও কৃষকদেরকে নিউ হোপ কর্তৃপক্ষ প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা দিয়ে আসছেন।ফলে গবাদিপশু, পোল্ট্রি ও মৎস চাষে অধিক লাভের মুখ দেখছেন কৃষক।স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এসব কৃষিপণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছেন তারা।নিউ হোপের ফিড অধিক লাভজনক হওয়ায় অনেক অসচ্ছল পরিবারে ফিরে এসেছ
সচ্ছলতা।কেউ কেউ পতিত জমিতে গড়ে তুলেছেন গবাদিপশু, পোল্ট্রি খামার ও মাছ চাষের পুকুর।ফলে কৃষি ক্ষেত্রে সাধিত হয়েছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।অন্যদিকে চীনা কোম্পানি নিউ হোপ বাংলাদেশেও তাদের উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করে সফলভাবে এগিয়ে চলেছে।নিউ হোপের বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা অঞ্চলের প্রেসিডেন্ট হি কোয়ান শুই( He Quan Shui) একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, নিউ হোপ ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে এবং ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশে আমার কর্মজীবন শুরু করেছি।বর্তমানে বাংলাদেশে আমাদের চারটি কোম্পানি রয়েছে যেগুলো ভালোভাবে চলছে এবং সরকার,দূতাবাস ও স্থানীয় জনগণের সহায়তায় একটি উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে।আমরা এর জন্য আমাদের মহান কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই।বর্তমানে বাংলাদেশে আমাদের ফিড উৎপাদন ক্ষমতা বছরে ৪৮০,০০০ হাজার মেট্রিক টন।যার গুণমান বাংলাদেশের স্থানীয় জনগণের কাছে ব্যাপক স্বীকৃতি পেয়েছে।ইতিমধ্যে আমরা আমাদের স্থানীয় কর্মচারীদের জন্য ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা করেছি,ইএমবিএ কোর্স শেখার জন্য কর্মীকে চীনে পাঠিয়েছি। আমরা উৎপাদন প্রক্রিয়া পরিচালনার মাধ্যমে পণ্যের গুণমানের উপর জোর দিই। তাই আমাদের পণ্যগুলি বাজার এবং বিশেষ করে কৃষকদের কাছ থেকে ভালো এবং দুর্দান্ত প্রতিক্রিয়া পেয়েছে।আমি বিশ্বাস করি উপরের ফলাফল আমাদের উন্নত ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি থেকে এসেছে।তিনি আরো বলেন, আরেকটি বিষয় হলো সামাজিক দায়বদ্ধতায় আমাদের অবদান।
গত দুই বছরে মহামারী চলাকালীন আমরা কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম, মাস্ক এবং কিছু ঔষধ সমাজকে দান করেছি।একইসঙ্গে কিছু স্কুলকেও কিছু সাহায্য দিয়েছি।উপরন্তু আমরা আমাদের কিছু কৃষকদের সাহায্য করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছি।তিনি বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB) এর সাথে এই প্রশিক্ষণটি পরিচালনা করছি এবং স্থানীয় কৃষকদের একসাথে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। ২ হাজার ৪১৫ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো ৭ হাজার ২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া।তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, কৃষকদের জন্য আমাদের পরিষেবা এবং পণ্যের গুণমানের মাধ্যমে স্থানীয় ফিড শিল্পের বিকাশ বা সাহায্য করতে পারব।অন্যদিকে আমারা সক্রিয়ভাবে সামাজিক দায়িত্ব গ্ৰহণ করি এবং সমাজে অবদান রাখি।
এছাড়াও মহামারী কোভিট সময়কালে হাসপাতালে চিকিৎসা ডিভাইস, মাস্ক এবং ঔষধ দান ও স্কুলগুলোর জন্য সহায়তা প্রদান করেছেন বলেও জানান।তিনি বলেন আমি পনের বছর ধরে বাংলাদেশে আছি।সত্যি কথা বলতে কি, বাংলাদেশ আমার দ্বিতীয় শহর এবং আমি প্রায় একজন বাংলাদেশী।তার ভিত্তিতে আমি মনে করি বর্তমানে সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটি আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে তাহলো বাংলাদেশে প্রজননে অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ।ইন্দোনেশিয়া এবং অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় অনেক মানুষের মুরগির ঘর বা প্রজনন পরিস্থিতি এখনও পশ্চাদপদ।এই পশ্চাৎপদতা রোগ প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনায় অসুবিধা সৃষ্টি করবে।এই দিকটিকে আমাদের আরও উন্নত করতে হবে।তাঁর মতে,২০২৩ বার্ড ফ্লু এর মতোই একবার এলে কৃষকদের পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ
করা বেশ কঠিন।যাইহোক চীন বা অন্যান্য উন্নত দেশগুলোর মুরগির খামারগুলোতে ফ্লু নিয়ন্ত্রণে অনেক শক্তিশালী ক্ষমতা রয়েছে।বাংলাদেশের বর্তমান প্রজনন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন করে তুলেছে।আমরা অনেক পদ্ধতি চিন্তা
করেছি এবং আমাদের চারটি কোম্পানি থেকে কয়েক ডজন পশু চিকিৎসককে ফ্রন্ট লাইনে পাঠিয়েছি।তা সত্বেও আমরা এখনও কৃষকদের দ্বারা সৃষ্ট সমস্ত সমস্যা বা ঝুঁকির সমাধান করতে পারিনি।এটি প্রথম সমস্যা।দ্বিতীয়ত, আমরা সম্প্রতি কিছু
চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি।মার্কিন ডলারে সুদের হার বৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক মুদ্রা তুলনামূলকভাবে আটসাট এবং আমরা এখনও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং কাঁচামাল কেনার ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা রয়েছে।যখন আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামাল কেনার কথা আসে তখন আমাদের নিউ হোপের একটি সুস্পষ্ট সুবিধা রয়েছে।কিন্তু মার্কিন ডলার ছাড়াই (ব্যক্তিগত কাঁচামাল) শুধুমাত্র স্থানীয়ভাবে কেনা যায় এবং দাম বাড়াতে হবে।তাই খরচ হবে উর্ধহারে।আর তৃতীয় দিকটি হলো গত দুই বছরে নির্দিষ্ট কিছু এলাকা ও ব্যক্তিগত পণ্যে কিছু লোকসান হয়েছে এবং সাধারণ মানুষ তাদের পুঁজি নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে।কিছু অসুবিধা আছে তাই এই ক্ষেত্রে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। তিনি উল্লেখ করেন, নিউ হোপ গ্ৰাহকদের অর্থায়ন এবং কিছু তহবিল দিয়ে সাহায্য করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে।আর্থিকভাবে সহায়তাসহ গ্ৰাহকদের ভালোভাবে মুরগি লালন-পালন করতে সহায়তা করুন যাতে তারা ক্ষতি কমাতে পারে। অন্যদিকে তিনি আরও বলেন, ২০০৬ সালে নিউ হোপ বাংলাদেশে আসার পর থেকে আমরা আমাদের কিছু ট্যাক্সসহ ব্যবস্থাপনা এবং প্রয়োজনীয়তার জন্য বাংলাদেশের আইন ও প্রবিধানগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করছি।আমরা আন্তর্জাতিক কর আইন ব্যবস্থার সাথে সম্পূর্ণরূপে অডিট পরিচালনা করি।আমাদের (বাংলাদেশ) পশুপালন ব্যবস্থা, বিশেষ করে পশুপালন ব্যুরো আমাদের সাহায্য করার জন্য আমাদেরকে প্রচুর প্রশিক্ষণ এবং নির্দেশনা দিয়েছে, যা আমাদের নিজেদেরকে এবং সমগ্ৰ শিল্পকে কঠোরভাবে আইন অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করার অনুমতি দিয়েছে।দেশে যাতে আমরা দীর্ঘমেয়াদে আরও ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারি।তিনি বলেন, আমরা আইন ও প্রবিধান পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকারকে সম্পূর্ণরূপে মেনে চলি। নিউ হোপ বাংলাদেশের প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান সিউয়ান লি(Siyuan Li) কোম্পানিটির উল্লেখযোগ্য অবদান তুলে ধরে বলেন,২০০৬ সালে নিউ হোপ বাংলাদেশে প্রবেশের পর ছয়টি কোম্পানির একটি বৃহৎ শক্তিশালী গ্ৰুপে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা জুড়ে ।আমরা সবসময় কোম্পানির করপোরেট সংস্কৃতির কথা মাথায় রেখে ক্রমাগত প্রোডাক্ট ফর্মুলা আপগ্ৰেড করি,প্রোডাক্ট কোয়ালিটি বিবেচনা করি।কৃষি ও পশুপালন শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।আমাদের শ্লোগান হলো-"চাষীদের লাভ,খাওয়ার জন্য লাভ"।আমরা পণ্যের গুণমানকে জীবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করি।কোম্পানিটি স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, নিউ হোপ উৎপাদিত ফিড এবং ডে- ওল্ড চিকস (ডিওসি) পণ্যের নিরাপত্তা এবং গুণমান বাংলাদেশের কৃষিখাতে মানদণ্ড স্থাপন করেছে যা সামগ্ৰিক গুণমানের উন্নতির দিকে পরিচালিত করেছে। নিউ হোপ বাংলাদেশে শিল্পের মান উন্নীতকরণ এবং দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।তিনি বলেন, কোম্পানিটি শিল্পের উৎকর্ষের প্রতি তার অঙ্গীকারকে আরও এগিয়ে নিয়ে দেশের অসংখ্য কৃষি পেশাজীবীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।বাংলাদেশে একটি বিস্তৃত মাংস ও খাদ্য কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা যা টেকসই ব্যবসায়িক উন্নয়নের জন্য একটি সমন্বিত শিল্প চেইন গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে।তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, নিউ হোপ বাংলাদেশ তার প্রবৃদ্ধি এবং সহযোগিতার যাত্রা অব্যাহত রেখে গুণমান, নিরাপত্তা এবং ব্যপক শিল্প সম্পৃক্ততা প্রচেষ্টা বাংলাদেশের কৃষি ল্যান্ডস্কোপের গতিপথকে রূপ দিতে প্রস্তুত।নিউ হোপ ফিড মিলের সরবরাহ ও বিপনন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট চীনা বিশেষজ্ঞ দলের প্রশংসা করে বলেন, তাঁদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও বন্ধুত্বসুলভ আন্তরিকতায় নিউ হোপ এমন একটি জায়গায় পৌছেছে যে,পণ্যের গুণগতমান ও সেবায় আমরা নাম্বার ওয়ান পজিশনে আছি এবং আগামীতেও গ্নোবালী আমরা নাম্বার ওয়ান পজিশনে যাব।
ফিড মিলের উপব্যবস্থাপক মোঃ রিয়াদ মিয়া বলেন, বিশ্বের মধ্যে স্বনামধন্য কোম্পানি নিউ হোপের চীনাকর্মীগণ বাংলাদেশের কালচার ও পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে চলেছে।ফলে গবাদিপশু, পোল্ট্রি ও মৎস শিল্পের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে নিউ হোপ অগ্ৰণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।অন্যদিকে নিউ হোপ ফিড মিলের প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক মোঃ রাজিবুল হক বলেন, আন্তর্জাতিকমানের শতভাগ বিনিয়োগকারী চীনা কোম্পানি নিউ হোপ সবসময়ই সর্বোচ্চ গুণগতমানের প্রোডাক্ট উৎপাদন, কর্মীদের নিরাপত্তা বিধান ও লক্ষ্য অর্জনে বিশ্বাসী।
নিউ হোপ ফিড মিলে রয়েছে একটি কেমিক্যাল ও একটি বায়ো-ল্যাব।কেমিক্যাল ল্যাবে কর্মরত ফয়জার রহমান গণমাধ্যমকে জানান, আমরা ভালো গুণগতমানের কাঁচামাল গ্ৰহণ করার চেষ্টা করি।এই ল্যাবে সারাদিন কাঁচামাল পরীক্ষা করে দেখা হয়,
প্রোডাকশন ফিডের গুণমান অক্ষুন্ন আছে কিনা এবং বাজারজাত উপযোগী কিনা। এসব নানা কারণে নিউ হোপ থেকে ভালো মানের ফিড উৎপাদিত হয়ে থাকে। অপরদিকে বেসরকারি সেক্টরে প্রথম স্থাপিত কোম্পানির বায়ো-ল্যাবে কর্মরত রয়েছেন দুইজন চিকিৎসক ও একজন ল্যাব সহকারী।বাংলাদেশের পশু স্বাস্থ্যের উন্নতি,হাঁস-মুরগির রোগ নির্ণয়ের মতো সেবা প্রদান করে বায়ো-ল্যাবটি।ল্যাবে কর্মরত ডা: রাবেয়া সুলতানা সোমা বলেন, খামারীদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করে মাইক্রোবায়োলজিক্যাল ল্যাব টেষ্টসহ যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগের প্রাদুর্ভাব ও দ্রুত প্রতিকারের পরামর্শ প্রদান করা হয়ে থাকে।ফলে উপযুক্ত সেবা পেয়ে তারা লাভবান হচ্ছেন। এমনই ইতিবাচক অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরলেন পার্শ্ববর্তী লোহাগাছ এলাকায় অবস্থিত রাফিন পোল্ট্রি ফিডের মালিক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান।বর্তমানে তাঁর ফার্মে রয়েছে ৪০ হাজার মুরগি।মুরগি পালন ও প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে রোগ- বালাই প্রতিরোধ সবক্ষেত্রেই তিনি নিউ হোপের সহযোগিতা পেয়ে আসছেন।২০ বছর আগে তিনি নিউ হোপের ডিলারশীপ নেবার পর আশানুরূপ উন্নতি করেছেন।প্রতিমাসে ২০০ টন পণ্য বিক্রিসহ মুরগি ও মুরগির ডিম বিক্রি এবং মুরগির বিষ্টা থেকে উৎপাদিত বায়ো-গ্যাস সরবরাহ করে এলাকায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।আর এটা সম্ভব হয়েছে নিউ হোপ ফিড মিলের কল্যণে।শুধু মোস্তাফিজুর রহমানই নন,ময়মনসিংহের ত্রিশাল অঞ্চলের ডিলার রাশেদ কবির রোহেল ও ভালুকা অঞ্চলের ডিলার মো মাজহারুল ইসলামও তুলে ধরেছেন নিউ হোপের ইতিবাচক দিকগুলো। তাঁদের মতে, ভালো প্রোডাক্ট ও ভালো সার্ভিস দিচ্ছে চীনা কোম্পানি নিউ হোপ।যা দেশি অনেক কোম্পানি থেকে পাওয়া সম্ভব নয়।এতে একদিকে তাঁরা ব্যাবসায়িক উন্নতি করছেন অপরদিকে পোল্ট্রি ও মাছ চাষীরাও যথেষ্ট লাভের মুখ দেখছেন ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। নিউ হোপ দেশের কৃষিখাতসহ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রেখে চলেছে তা এইসব সফলতার গল্প থেকে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। চীনা কোম্পানি নিউ হোপ ফিড উৎপাদন, প্রজনন,মাংস পণ্য, আর্থিক বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যসহ বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়নের প্রতি জোর দিয়ে আসছে।
মার্চ ১৯৯৮-এ সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত নিউ হোপ লিউহো কোম্পানি কৃষি ও পশুপালন শিল্পে একটি গতিশীল উদ্যোগ।ইতিমধ্যে বাংলাদেশের কৃষিখাত ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সুনাম অর্জন ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে
কোম্পানিটি।একদল নিবেদিত কর্মীবাহিনী নিয়ে ৫০০ টিরও বেশি সহায়ক সংস্থার একটি বিশাল নেটওয়ার্কে পরিণত হয়েছে।কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে নিউ হোপ লিউহো।
লেখক: সাংবাদিক, গবেষক ও চলচ্চিত্রকর্মী