সিংগাইরে ইউএনও’র বিরুদ্ধে ৮০ মে.টন খাদ্যশস্য আত্মসাতের অভিযোগ
মুহ. মিজানুর রহমান বাদল, বার্তাপ্রেরক:
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পে মাটি ভরাট, সিংগাইরে ইউএনও’র বিরুদ্ধে ৮০ মে.টন খাদ্যশস্য আত্মসাতের অভিযোগ মুহ. মিজানুর রহমান বাদল,সিংগাইর: মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ—২ প্রকল্পের আওতায় মানিকগঞ্জের সিংগাইরে ৬ টি প্রকল্পে একক গৃহ নির্মাণস্থলে মাটি ভরাট বাবদ ৭৯.১৯৮ মে. টন খাদ্যশস্য (গম) আত্মসাতের অভিযোগ ওঠেছে সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিপন
দেবনাথের বিরুদ্ধে।
যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ ও উত্তোলনকৃত খাদ্য শস্যের ব্যাপারে কিছুই জানেন না সভাপতিরা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,২০২২-২৩ অর্থ বছরে উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে ৯২ টি ঘরের মধ্যে বায়রার চাড়াভাঙ্গা মৌজায় ১৬টি, তালেবপুর ইউনিয়নের বারতালুক গোলড়া মৌজায় ১১ টি, সায়েস্তা ইউনিয়নের লক্ষীপুর মোৗজায় ১০ টি, বলধারা ইউনিয়নের ব্রী-কালিয়াকৈর মৌজায় ৮ টি, জামসা ইউনিয়নের পশ্চিম জামসা মৌজায় ৮ টি ও চারিগ্রাম ইউনিয়নের বড় চারিগাঁও মৌজায় ৩৯ টি একক গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহন করেন সরকার। আর ওই প্রকল্পগুলোতে মাটি ভরাট বাবদ ৮৭.১৯৮ মে. টন খাদ্যশস্য বরাদ্দ দেয়া হয়।
৬ টি প্রকল্পের ৫ টিতে ওয়ার্ড মেম্বার ও একটিতে চেয়ারম্যানকে সভাপতি করা হয়। ইউএনও’র অনুমতি সাপেক্ষে ৩ টি প্রকল্পের সভাপতি কালিগঙ্গা ও ধলেশ^রী নদী থেকে বালু উত্তোলন করে ভরাট করেন। পাশাপাশি বাকি ৩ টি প্রকল্পে সংলগ্ন জমি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে ভরাট করা হয়। ৬ টি প্রকল্পেই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. আহাদী হোসেনের যোগসাজসে বিল-ভাউচার তৈরি করে প্রকল্প সভাপতিদের সই-স্বাক্ষর নিয়ে ৮৭.১৯৮ মে.টন খাদ্যশস্যের স্থলে ৭৯.১৯৮ মে.টন বিক্রি করে সামান্য কিছু খরচ দেখিয়ে পুরো টাকাই লোপাট করা হয়। বাকী ৮ মে.টন অনুত্তোলিত দেখানো হয়।
এ থেকে প্রকল্প সভাপতিরা কোনো টাকা পয়সা পায়নি বলে তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। দক্ষিণ চারিগ্রামে একক গৃহ নির্মাণস্থলে মাটি ভরাট প্রকল্পের সভাপতি ও চারিগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান দেওয়ান মো. রিপন হোসেন বলেন, আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এ প্রকল্পে কত মে.টন গম বরাদ্দ ছিল তা কিছুই জানি না। ইউএনও স্যার কিছু টাকা দিয়েছিলেন, নদী পাড়ের আমার নিজের জমি থেকে ও কালিগঙ্গা নদীতে ড্রেজার বসিয়ে ওই জায়গা ভরাট করে দিয়েছি। বলধারা ইউনিয়নের ব্রী-কালিয়াকৈর মৌজায় একক গৃহনির্মাণ স্থলে মাটি ভরাট প্রকল্পের সভাপতি ও ৮নং ওয়ার্ডের সদস্য হায়দার আলী ওরফে তারা মেম্বার বলেন, এটা ইউএনও স্যার আমার নামে সাড়ে ৭ মে.টন গমের একটি প্রজেক্ট দিয়ে তিনি নিজ দায়িত্বে কাজটি করেছেন।
মাটি ফেলার সময় ভেকু মালিককে নিজের পকেট থেকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছি। দীর্ঘদিন ঘুরেও সে টাকা পাইনি। তিনি আরো বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে ডিসি স্যারের কাছে অভিযোগ দিতে চেয়েছিলাম। জলে বাস করে কুমিরের সাথে লড়াই চলে না বিধায় আমাদের ইউপি চেয়ারম্যানের অনুরোধে তা দেইনি। তালেবপুর ইউনিয়নের বারতালুক-গোলড়া মৌজার প্রকল্প সভাপতি ও ৩ নং ওয়ার্ড মেম্বার ইদ্রিস আলী বলেন, আমি সভাপতি ছিলাম ঠিকই পুরো কাজটি করেছেন নায়েব সাহেব ও ইউএনও স্যারের দায়িত্বে। আমি দেখাশুনায় ছিলাম এবং স্বাক্ষর করেছি মাত্র।
এছাড়া ওখানে আমাদের কোনো মাতাব্বরি ছিলো না। সায়েস্তার লক্ষীপুর মৌজার প্রকল্প সভাপতি এবং সংরক্ষিত ৭,৮ ও ৯ নং ওয়ার্ড মেম্বার ঝর্না আক্তার বলেন,ওটা ইউএনও স্যার করেছেন আমাকে নামে মাত্র সভাপতি দিয়েছিলেন। আমাদের চেয়ারম্যান পিআইও অফিসে গিয়ে সই—স্বাক্ষর দিতে বলেছিলেন, দিয়েছি। এছাড়া আমাকে কিছুই জানাননি। চাড়াভাঙ্গা মৌজার প্রকল্প সভাপতি এবং সংরক্ষিত ৪,৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বার শাহানাজ বেগম বলেন, মাটি ভরাট প্রকল্পে আমি সভাপতি ছিলাম এবং ঘর ওঠানোর কাজেও ডিউটি করেছি, কিন্তু আমাকে কিছুই দেননি।
এটা ইউএনও স্যারের কাজ জানতে পেরে পিআইও স্যারের অফিসে গিয়ে বিল- ভাউচারে সই-স্বাক্ষর দিয়ে এসেছি। মাটি ব্যবসায়ি ও ভেকু মালিক মিজানুর রহমান বলেন, ব্রী—কালিয়াকৈর মৌজায় মাটি ভরাটের কাজটি গৃহ নির্মাণস্থলের পাশ থেকেই করে দিয়েছি। লাখ খানেক টাকার মতো বিল হয়েছিলো, তার মধ্যে তারা মেম্বারের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা পেয়েছি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. আহাদী হোসেন তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বাস্তবে সব জায়গাতেই মাটি ভরাটের কাজ হয়েছে। এ কাজে মেম্বার সাহেবদের দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। দু’একজন কারো উস্কানিতে প্রশ্নবিদ্ধ কথাবার্তা বলতে পারেন। আর প্রকল্প সভাপতিরা বিষয়টি না জানলে এটাও তাদের একটা অপরাধ। সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিপন দেবনাথ বলেন, মাটি ভরাটের বিষয়ে প্রকল্প যেভাবে হয় সেভাবেই হয়েছে এবং প্রকল্পের ডিও দেয়া হয়েছে। কাজগুলো হয় প্রকল্প সভাপতিদের মাধ্যমে, তারা যদি না জানেন তাহলে আমিও জানবো না। অফিসিয়ালিতো না বলার সুযোগ নাই । কাজ করার টাকা দেয়া হয়েছে, কাজ ও হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সরকারি প্রজেক্টের ক্ষেত্রে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে ভরাটের বিধান রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো কিছু করার সুযোগ নাই। এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জের সদ্য যোগদানকৃত জেলা প্রশাসক রেহেনা আক্তার বলেন, যিনি প্রকল্প সভাপতি তিনি জানবেন না কেন? এটা তার ব্যক্তিগত দায়। না জেনে সাইন দিবেন কেন? এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন বিষয়। আমার সাথে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তাদের সাথে বসে কোথাও কোনো গ্যাপ থাকলে অচিরেই তা সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে হয়ে যাবে।