বদলগাছী হাসপাতালে ডাক্তাররা চলেন খেয়াল খুশি মতো, দেখার কেউ নেই
সৈকত সোবহান, প্রতিনিধি, বদলগাছী, নওগাঁ:
হাসপাতালে ডাক্তাররা চলেন তাদের খেয়াল খুশি মতো। মানেন না তাঁরা সরকারি আদশে-নিষেধ। সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
এমন চিত্র হরহামেশাই দেখা যায় নওগঁার বদলগাছী হাসপাতালে। কয়েকদিনের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তাররা হাসপাতালে আসেন সরকার নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। বর্তমানে সরকারি অফিস সময় সকাল ৮ টা হতে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত হলেও এই হাসপাতালের ডাক্তাররা আসেন সকাল ১০ টার পরে।
দেশে বিদ্যুত ঘাটতি কমাতে এবং বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সরকার কয়েকমাস যাবত দেশের সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত অফিস সময় সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টার পরিবর্তে সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত নির্ধারণ করেছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সকাল ৮টা থেকে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম শুরু হওয়ার নিয়ম থাকলেও চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী কেউই তা মানছেন না।
নির্ধারিত সময়ের দেড় ঘণ্টা কিংবা দুই ঘন্টা পর শুরু হয় এখানকার যাবতীয় কার্যক্রম। যা সরকারি সিদ্ধান্ত এবং নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখানোর সমতুল্য।
অথচ উপজেলার দূর-দূরান্ত থেকে অনেক আগেই চিকিৎসা সেবার জন্য এখানে এসে ভীড় করেন রোগীরা। দুপুরের পর থেকে অনেক চিকিৎসককে আর নিজেদের কক্ষে পাওয়া যায় না। অফিস ফাঁকি দিয়ে এ সময় বিভিন্ন ক্লিনিক ও প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসে রোগী দেখে সময় কাটান তাঁরা।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ছানাউল, সোবহান, হাসান, রশিদা, সেতু, দেলেজানসহ অনেকে ক্ষোভ নিয়ে বলেন, এ হাসপাতাল শুধু নামেই। এখানে ঠিক সময়ে ডাক্তারদের যেমন পাওয়া যায় না তেমনি প্যারাসিটামল আর এন্টাসিড ট্যাবলেট ছাড়া অন্য কোনো ওষুধও দেওয়া হয় না। বাইরে থেকে টাকা দিয়েই সব ওষুধ কিনতে হয়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯ টা থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের চিকিৎসকদের কক্ষে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অবস্থান করার নিয়ম না থাকলেও এক্ষেত্রেও ব্যত্যয় ঘটছে প্রতিনিয়তই।
সকালেই এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে এসব প্রতিনিধিরা দলবেঁধে কারণে-অকারণে ভীড় জমান চিকিৎসকদের কক্ষে। ওষুধ কোম্পানীর লোকজনের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিকিট হাতে অপেক্ষায় থাকতে হয় রোগীদের, অভিযোগ সহ নামের রোগীরা। এতে সেবা নিতে আসা রোগিরা বঞ্চিত হচ্ছেন সঠিক চিকিৎসা সেবা থেকে। সকাল ৮ টা থেকে রোগী দেখার কথা থাকলেও বুধবার (২ নভেম্বর) সরেজমিনে সকাল ৮টা থেকে সকাল ১০ টা ২০ মিনিট পর্যন্ত বহির্বিভাগের দরজা খোলা থাকলেও নির্ধারিত সময় পর্যন্ত কোনো ডাক্তারকে দেখা যায়নি।
অপরদিকে দেখা যায়, জরুরী বিভাগে চিকিৎসক না থাকায় তার স্থলে দায়িত্বপালন করছেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার সাদ্দাম হোসেন। আর ওয়ার্ড বয় হিসেবে ছিলেন হারুনুর রশিদ। স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনের বেলায় জরুরি বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিতে গেলে ডাক্তারকে চেম্বারে পাওয়া যায় না। ডাক্তার তঁার নির্দিষ্ট রুমের মধ্যে থাকেন। রোগি আসলে ডাকা হয় নয়তো পাশে বসা সহকারী দিয়েই চলে চিকিৎসা সেবা। রাতের বেলায় অনেক সময় কোনো চিকিৎসক পাওয়া যায় না। ডিউটির বেশিরভাগ সময় নির্দিষ্ট রুমে থাকেন তাঁরা। বেশিরভাগ সময় হাসপাতালের ব্রাদাররাই সামলান এ বিভাগ। কিছু রোগীদের নামমাত্র চিকিৎসা দিলেও বেশিরভাগ রোগীকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নওগাঁসহ অন্যান্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
এ বিষয়ে বদলগাছী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কানিজ ফারহানার কার্যালয়ে দুপুর পৌণে ২ টার সময় গিয়ে তাঁকে না পেয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, সকাল ১০ টায় আমি হাসপাতালে ডাক্তারদের দেখেছি। সকাল ১০ টা ১০ মিনিটে আপনি যখন হাসপাতালে ঢোকেন তখন অন্য কোনও ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন না। ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত কোনও ডাক্তারকে পাওয়া যায়নি আর সরকারি নির্দেশনা মতে কয়টার সময় অফিসে ঢোকার নিয়ম আছে এবং সময়মতো ডাক্তাররা উপস্থিত হয়না কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আপনি আগামীকাল অফিসে আসেন সাক্ষাতে কথা বলবো বলে ফোন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আবু হেনা মোঃ রায়হানুজ্জামান সরকার বলেন, সরকারি নির্দেশনা মতে সকাল ৮ টা থেকে অফিস সময়। আর এইসব দেখার দায়িত্ব ওখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার। যদি নির্দিষ্ট সময়ে কেউ অফিসে না আসেন তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।