ডিজিটাল হচ্ছে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহ
সদরুল আইন, সিনিয়র সংবাদদাতাঃ
প্রাথমিকে শিক্ষক সহায়িকা ও শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে নতুন অ্যাপস বানানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। ফলে নতুন শিক্ষাক্রমের প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে আসবে পরিবর্তন।
ইতোমধ্যে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এই অ্যাপস ডেভেলপ করবে এটুআই।ফলে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা ডিজিটালে রূপান্তরিত হবে।
এনসিটিবি সদস্য (প্রাথমিক) রিয়াজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও নতুন শিক্ষাক্রমের অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে পাইলটিং প্রকল্পের আওতায় ৬৫ বিদ্যালয়ে এ কার্যক্রম চলবে। যা শুরু হবে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে। এরপর সারাদেশের ৬৫ হাজার ৬২০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই অ্যাপস ব্যবহার করে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ও তাদের রেকর্ড সংরক্ষণ করবেন শিক্ষকরা।
আগামী জানুয়ারিতে প্রাক্-প্রাথমিক পর্যায়ে ৬৫ বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাক্রম চালু করা হবে।
অ্যাপসের ফিচারগুলোতে বিদ্যালয়ের নাম, শিক্ষকের আইডি থাকবে। সেখানে শিক্ষকের পড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ থাকবে। একজন শিক্ষক যে বিষয়ে শিক্ষা দেবেন তার কর্মপরিকল্পনা এই অ্যাপসের মধ্যে যুক্ত করা হবে।
জানা যায়, প্রতিটি পাঠের ভেতর শিখন পরিকল্পনা দেওয়া আছে অ্যাপসটিতে। মূলত শিক্ষক সহায়িকাতে যা আছে একজন শিক্ষক এর মধ্যেও তা খুঁজে পাবেন।
এছাড়াও এটি ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর শিখন রেকর্ড সংরক্ষণ করা যাবে। ফলে শিক্ষকদের পাঠদান ও শিখন কার্যক্রম সহজ হবে। শ্রেণিকক্ষে যত শিক্ষার্থী পড়বে, তারা কি শিখল আর কি শিখতে পারেনি তাও এখানে সংরক্ষণ থাকবে। সময় বাঁচাতে শিক্ষকদের এই অ্যাপসের সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানান, নতুন শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে এই অ্যাপসটি অপরিহার্য। অ্যাপসটি এমনভাবে তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যেখানে অল্প কিছু বাটন চাপ দিলেই শিক্ষার্থীর শিখন কার্যক্রম দেখা যাবে।
আরও প্রযুক্তিগত সুবিধা ব্যবহার করে শিক্ষার্থী কি শিখল তার রেকর্ড রাখা সম্ভব। কোন শিক্ষার্থী ওই সময় শিখতে ব্যর্থ হলে পরবর্তীতে শিখতে পারলে তা এডিট করার সুযোগ থাকছে শিক্ষকদের। ফলে শিক্ষার্থীর অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে তার শিখন রেকর্ডও আপডেট হবে।
এভাবে চার মাস পর্যন্ত শিক্ষার্থী কি শিখেছে কি অগ্রগতি হয়েছে তা পরিবর্তনযোগ্য হিসেবে রেকর্ড করতে পারবেন শিক্ষকরা। কিন্তু চার মাস পর শিক্ষার্থীদের এই ডেটা রেকর্ড হিসেবেই থেকে যাবে। তা আর পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে না।
অ্যাপস বানানোর জন্য স্ট্রাকচার তৈরি করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে কতটাকা লাগবে তা নির্ধারণ না করা হলেও এ বিষয়ে আর্থিক সহযোগিতা করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এনসিটিবি সদস্য (প্রাথমিক) রিয়াজুল হাসান বলেন, এখানে আর্থিক কোন সমস্যা নেই। এই কাজের পুরো টাকা অনুদান হিসেবে ইইউ দেবে আমাদের। পিইডিপি৪ প্রকল্পের অধীনে এই আশ্বাস আমাদের তারা দিয়েছে।
সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয়ের এ টু আই (এসপায়ার টু ইনোভেশন) আমাদের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেবে। এই অ্যাপসটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের তথ্য ন্যাশনাল ডাটাবেজে নিয়ে আসার পরিকল্পনাও আছে। পাইলটিং না করে কোন কিছুই শিক্ষকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না।
যে কারণে প্রথমে পাইলটিং পরে তা সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান মোঃ ফরহাদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এই অ্যাপসের মডেল তৈরি হয়েছে। এটি ডেভেলপ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এটি তৈরি হলে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন হবে।
এবছর মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬২ বিদ্যালয়ে চলতি বছর শুরু হয় নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং প্রকল্প। যথা সময়ে বরাদ্দ না থাকায় প্রাথমিকের নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু করা যায়নি।
এ বিষয়ে এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল। অনুমোদন হতে দেরি হওয়ায় তা শুরু হয়নি। আগামী বছরের শুরুতেই পাইলট প্রকল্পটি শুরু করা হবে।
পাইলটিংয়ের পাশাপাশি চলছে নতুন শিক্ষাক্রমের বই ছাপানোর কাজ। কিছুদিন আগেই নতুন কারিকুলাম ও বই অনুমোদন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, বইয়ে অল্প কিছু ভুল থাকায় সংশোধন করতে দেওয়া হয়েছে। বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই বিতরণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষার জন্য ২ কোটি ৪৮ লাখ ৩৫ হাজার ৯৯০ কপি পাঠ্যপুস্তক কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ জন্য খরচ ধরা হয়েছে ৭৮ কোটি ৬৮ লাখ ১৩ হাজার ৯১০ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মাধ্যমে ২৪টি দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রমে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মূল্যায়ন করা হবে। এই মূল্যায়নের উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীকে শারীরিক বা মানসিক চাপ না দিয়ে তাকে শেখানোর সুযোগ দেওয়া।
যেহেতু প্রাথমিক স্তরে প্রথম-তৃতীয় শ্রেণীর কোন পরীক্ষা ব্যবস্থা থাকছে না। সেকারণে অ্যাপসের মাধ্যমে মূল্যায়নের কোন বিকল্পও নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই পর্যায়ে ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের উন্নতির সুযোগ দেওয়া হবে। শিখন কার্যক্রম আরও উন্নত হবে। কোন শিক্ষার্থী শিখতে না পারলে শিক্ষকদের কাজ হবে তাকে আরও প্র্যাকটিস করানোর পরে শিক্ষার্থী কি শিখল তা দেখে শিক্ষকের ফিডব্যাক দেওয়া।
২০২৩ সালেই শিক্ষাক্রমের প্রস্তুতি হিসেবে কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবি। ধারাবাহিক মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীকে তার শিখনেও সহায়তা করা যাবে। নতুন শিক্ষাক্রমে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর কোন ধরনের পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে না। তবে প্রাথমিক স্তরে মোট তিনটি প্রান্তিক থাকবে।