সৈয়দপুরে পৌর মেয়রের হস্তক্ষেপে ২০ বছর পর রাস্তা পেলো ৫শ’ মানুষ
শাহজাহান আলী মনন, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
পৌর মেয়রের হস্তক্ষেপে ২০ বছর পর রাস্তা পেলো ৭০টি পরিবার। দীর্ঘদিনের দূর্ভোগের পরিসমাপ্তি ঘটলো প্রায় ৫ শতাধিক মানুষের। চলাচলের পথ সুগম হওয়ার এই সুবিধা পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের ক্যান্টবাজার সংলগ্ন খাটিয়া মহল্লাবাসী।
রবিবার (৩০ অক্টোবর) সকালে সৈয়দপুর পৌর মেয়র রাফিকা আকতার জাহান ওই রাস্তার সংষ্কার কাজ উদ্বোধন করেন। এসময় তাঁর সাথে ছিলেন পরিষদের সকল কাউন্সিলর, কর্মকর্তা কর্মচারী, এলাকাবাসী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। অত্যন্ত উৎসব মুখর পরিবেশে সম্মিলিত অংশগ্রহণে সম্পন্ন হয় এই কার্যক্রম।
এলাকার বাসিন্দা বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী ও কার মাইক্রোবাস ব্যবসায়ী জান্নাতুল ইসলাম কবির বলেন, এই এলাকাকে বলা হয় বালুবাড়ী। কারণ এখানে বিশাল জায়গাজুড়ে কয়েকটি বালুময় পুকুর আর জঙ্গল ছিল। এখন এখানে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনসহ অর্ধ শতাধিক বাড়ি।
এগুলোতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ টি পরিবারের বসবাস। সবদিক দিয়ে আমরা ভালো থাকলেও চলাচলের ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তির মধ্যে ছিলাম। কারণ হলো, এলাকাবাসীর চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি ছিল খুবই বেহাল। বাড়িঘর সব পাকা হলেও রাস্তা কাঁচা তথা মাটির হওয়ায় যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল।
এমতাবস্থায় এলাকার লোকজন তৎকালীন পৌর মেয়র মরহুম আখতার হোসেন বাদলকে রাস্তাটি সংষ্কারের অনুরোধ জানায়। এতে তিনি উদ্যোগী হয়ে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন। কিন্তু কাজ শুরু করে যেতে পারেননি। পরে সাবেক এমপি মরহুম অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকার মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি জনস্বার্থ বিবেচনায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেন্ডার দেন।
সে অনুযায়ী ঠিকাদার কাজ শুরু করলে রাস্তার প্রশস্ততা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। বালুয়ারীতে যারা বাড়ি করেছি, তারা রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়লেও প্রবেশ মুখেই ছিল একেবারেই সংকীর্ণ। সেখানে ক্যান্টনমেন্ট সড়কের সাথে সরকারী খাস জমি (পরিত্যক্ত) ৫৪ শতক জমি জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লিজ নিয়ে বসবাস করছেন।
এরমধ্যে বেলাল ও দুলাল আমাদের রাস্তার উত্তরপাশের ১২ শতক করে ২৪ শতক নিলাম প্রক্রিয়ায় দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে কিনে নিয়েছেন। বাকি ৩০ শতক শহিদ মিয়া ও মৃত এস এ খানের দখলে। অথচ তাদেরও ১২ শতক করেই লিজ বরাদ্দ। অতিরিক্ত জমি দখলে রাখায় তাদের দলিল সম্পাদন আজও হয়নি।
সাবেক রেলওয়ে চাকুরীজীবী আমানুল্লাহ খান বলেন, রাস্তার কাজ করার সময় এস এ খানের পরিবার জায়গা ছাড়তে অপারগতা প্রকাশ করে বাধা দেন। মেয়র আমজাদ স্বয়ং উপস্থিত হয়ে রাস্তার জন্য জমি দেয়ার অনুরোধ জানালেও তারা রাজি হয়নি। বরং ওই পরিবারের মহিলারা রাস্তায় বের অশ্লীল গালিগালাজ করাসহ উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করে।
এমনকি এস এ খানের বড় মেয়ে সরকারী প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা শিল্পী লোকজনের সামনেই নিজের জামা ছিড়ে ফেলে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। এতে মেয়র বিড়ম্বনায় পড়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন। ফলে প্রায় ১০০ ফুট রাস্তার কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই ঠিকাদার চলে যায়।
একারণে রাস্তা তৈরী হলেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় জেলা প্রশাসনের কাছে রাস্তার জন্য জমি বরাদ্দের আবেদন করি আমরা। এতে দুই শতক জমি বরাদ্দ পাওয়া যায়। এরফলে পূর্বের ওই ঘটনার জের ধরে জমি দখল, শ্লীলতাহানীর মামলা করে শিল্পীর মা দেলোয়ারা বেগম লায়লা। মামলায় জেলা প্রশাসক, ইউএনও, এসিল্যান্ড, মেয়র, কাউন্সিলর এবং আমাকেসহ মশিউর ও ওহাবকেও আসামী করে।
সেই মামলায় তারা তিন বার আপিল করেও হেরে যায়। বার বার আমরাই রায় পাই। তবুও জায়গা ছেড়ে না দিয়ে এলাকাবাসীর সাথে অসদাচরণ অব্যাহত রাখে। তাদের কাছে এলাকার প্রায় সবাই অন্যায়ভাবে হেনস্তার শিকার। কথায় কথায় ঝগড়া, মামলা, অর্থ ও লোকবলের দাপটে লোকজনকে হয়রানী করতে পটু ওই পরিবার।
সম্প্রতি বর্তমান মেয়র রাফিকা আখতার জাহান বিষয়টি জানতে পেরে তাঁর প্রয়াত স্বামীর অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে উদ্যোগ নেন। রবিবার তিনি পরিষদের সকলকে নিয়ে উপস্থিত হয়ে রাস্তার কাজ শুরু করেন। তাঁর বদান্যতায় আজ আমরা দীর্ঘ ২০ বছরের জটিলতা ও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পেলাম বলে মন্তব্য করেন শতাধিক নারী।
এলাকাবাসীর অভিযোগ পরিবারটি যেমন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। তেমনি বেশ অহংকারী ও লোভী। তাই কারো সাথেই সৎ ভাব নেই। কারো তোয়াক্কা করেনা। কাউকে মানেও না। বরং সবসময়ই চরম অমানবিক ও অসামাজিক মনোভাব প্রদর্শন করে।
নিজেদেরকেই শুধু বড় বলে ভাবার মত অনর্থক ও অগ্রহণযোগ্য অবিবেচনার কারণেই তাদের এমন অধঃপতন। এখন জায়গাও হারালো, আবার ইতোপূর্বে আমরা টাকা দিয়ে রাস্তার জন্য জমি কিনে নিতে চেয়েছিলাম সেই টাকা পাওয়ার সুযোগও হারালো।
সাবেক সেনা সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এস এ খানের স্ত্রী লায়লা বেগম, মেয়ে শাহনাজ বেগম শিল্পী ও ছেলের বউ পারুল বেগম বলেন, আমরা রাস্তার জন্য জমি দিতে অসম্মত নই। কিন্তু আগে আমাদের ১২ শতক জমি বুঝিয়ে দিন। শহিদ মিয়া জাতীয় পার্টির নেতা হওয়ায় সেই দাপটে অতিরিক্ত জমি দখল করে রেখেছে। ফলে রাস্তায় জায়গা দিলে আমাদের অংশ কমে যাচ্ছে। সেটা কেন করা হচ্ছে? এই অন্যায়ের বিচার চাই।
তাছাড়া কোন রকম নোটিশ না দিয়েই হঠাৎ করে মেয়র দলবল নিয়ে এসে একেবারে সন্ত্রাসী কায়দায় আমাদেরকে একপ্রকার অবরুদ্ধ করে জোরপূর্বক রাস্তা তৈরী করলো কেন? মেয়রের লোকজন ধুম ধারাক্কা আমাদের গাছ কেটে সাবার করেছে। প্রতিবাদ করায় মোমিনুল নামে আমাদের একজনকে ইট দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়া হয়েছে। এগুলো কি ধরণের কাজ? এর তীব্র নিন্দা জানান তাঁরা।
এব্যাপারে মেয়র রাফিকা আখতার জাহান বলেন, পাঁচ শতাধিক মানুষ দীর্ঘ দিন থেকে রাস্তার জন্য কষ্ট করছে। মাত্র একটা পরিবারের অহেতুক হটকারীতার কারণে এটা হতে পারেনা। জনপ্রতিনিধি হিসেবে অধিকাংশ জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবীর প্রতি সম্মান দেখিয়ে আদালতের রায়ের আলোকে কাজটি করেছি। এমন জনহিতকর কাজের জন্যই লোকজন আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। এটাই আমার দায়িত্ব। সেই দায়িত্বই পালন করেছি।