অন্তিম যাত্রায় রানি
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় বেলা এগারোটা নাগাদ দিনের প্রথম শোক যাত্রা শুরু হয়। ওয়েস্টমিনস্টার হল থেকে রানির কফিন রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্যানুষ্ঠানের জন্য ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে নিয়ে যাওয়া হয়। গ্যারিসন সার্জেন্ট মেজর অ্যান্ড্রু স্ট্রোক শোকযাত্রা শুরু করেন।
এর আগে স্থানীয় সময় সকাল ৮টা নাগাদ ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের দরজা খুলে দেওয়ার পর অতিথিরা প্রবেশ করতে শুরু করেন। এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে পার্লামেন্ট স্কয়ার এবং ভিক্টোরিয়া স্ট্রিটের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
ওয়েস্টমিনস্টারের ডিন ডেভিড হোয়েলের নেতৃত্বে রানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়েছে বলে জানায় বিবিসি।
উইন্ডসর ক্যাসেলে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মরদেহ পৌঁছালে রাস্তার দুইপাশে ভিড় করে হাজার হাজার মানুষ।
ওয়েলিংটন আর্চে আনুষ্ঠানিকতা শেষে রানির কফিন তোলা হয় রাষ্ট্রীয় শবযানে। গ্রেনেডিয়ের গার্ড বাহিনীর সদস্যরা রানির কফিন তুলে এই শবযানে রাখেন।
এর আগে ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে থেকে প্রায় ৪৫ মিনিট পর শোকমিছিল রানির কফিন নিয়ে এর প্রথম গন্তব্য ওয়েলিংটন আর্চে পৌঁছায়।
ওয়েলিংটন আর্চ প্রথম তৈরি করা হয়েছিল ১৮২০ সালে বাকিংহাম প্রাসাদের ঢোকার একটি ফটক হিসাবে। ছয় দশক পরে এটি সরিয়ে বর্তমান অবস্থানে নিয়ে আসা হয়। ফ্রান্সের নেপোলিয়নকে যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন ব্রিটেনের ডিউক অব ওয়েলিংটন, সেই ঘটনার স্মরণে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
এটি লন্ডনের বিখ্যাত স্থাপনাগুলোর একটি, এর ওপরে স্থাপন করা শান্তির দূতের ভাস্কর্যটি ইউরোপের সবচেয়ে বড় ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য।
শেষকৃত্যের আনুষ্ঠানিকতার শুরুতে ১৯৪৭ সালে তৎকালীন প্রিন্সেস এলিজাবেথ এবং প্রয়াত প্রিন্স ফিলিপ মাউন্টব্যাটেনের বিয়ের অনুষ্ঠানে যে স্তবগান করা হয়েছিল, সেটি গাওয়া হয়। রানি তার স্বামীকে হারান গত বছরের এপ্রিলে। তারা ৭০ বছর ধরে বিবাহিত ছিলেন।
এর আগে রানির জন্য ধর্মগ্রন্থ থেকে বাণী পাঠ করে শোনান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারনেস স্কটল্যান্ড।
যে গান ক্যারেজে করে রানির কফিন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে নিয়ে আসা হয়েছে তার সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে। বুধবার বাকিংহাম প্যালেসের শোকযাত্রায় যে গান ক্যারেজ ব্যবহার করা হয়েছিল, এটি তার তুলনায় আলাদা।
১৯০১ সাল থেকে এটিকে আবদ্ধ করে রেখেছিল রাজকীয় নৌবাহিনী। সেই বছর রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মাতামহী রানি ভিক্টোরিয়ার শেষকৃত্যানুষ্ঠানের পর থেকে এটিকে সার্ভিস থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল
এর আগে রানির পিতা রাজা ষষ্ঠ জর্জ এবং রানি এলিজাবেথের প্রথম প্রধানমন্ত্রী উইনস্টল চার্চিলের শেষকৃত্যেও এই কামানটি ব্যবহার করা হয়েছিল
১৪২ জন নাবিক মিলে এটি বহন করে। উইন্ডসর থেকে এটিকে বের করে আনতে ৩ হাজার কেজির দড়ি ব্যবহার করে নাবিকরা।
সারা বিশ্ব হতে প্রায় পাঁচশ রাষ্ট্রনেতা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে এই শেষকৃত্যানুষ্ঠান যোগ দিয়েছেন। বিভিন্ন দেশের রাজপরিবারের সদস্যরা অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের কাছাকাছি বসেছেন।
ডেনমার্কের রানি দ্বিতীয় মার্গারিট বসেছেন ঠিক রাজা চার্লসের উল্টোদিকে। রানি মার্গারিট এবং রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ পরস্পরকে খুব পছন্দ করতেন। ডেনমার্কের রানি এ বছর তার সিংহাসনে আরোহণের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছেন
অন্য যেসব বিদেশি রাজন্যবর্গ এসেছেন, তাদের মধ্যে আছেন ভুটান, জাপান, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস এবং স্পেনের রাজা এবং রানি।
আড়ম্বরপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতায় লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে সম্পন্ন হলো রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য। সোমবার স্থানীয় সময় ১১টায় শুরু হওয়া ঘণ্টাব্যাপী শেষকৃত্যে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ প্রায় ২ হাজার অতিথি।
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রানির মরদেহ বহনকারী কফিন নিয়ে শুরু হয় রাজকীয় শোকযাত্রা। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা প্রদক্ষিণ করে উইন্ডসরের সেইন্ট জর্জেস চ্যাপেলে শেষ হবে এ যাত্রা।
সেখানে স্বামী প্রয়াত ডিউক অব এডিনবরার পাশে রাজকীয় ভল্টে সমাহিত করা হবে ৭০ বছর ধরে যুক্তরাজ্যকে শাসন করা রানি এলিজাবেথকে।