মৃত্যু বরণ করলেন যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী শাসক রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ

 

 

নিজস্ব প্রতিবেধকঃ

৭০ বছর রাজত্ব করার পর যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী শাসক রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ৯৬ বছর বয়সে বালমোরালে মারা গেছেন। তার পুত্র রাজা চার্লস তৃতীয় বলেছেন যে, তার প্রিয় মায়ের মৃত্যু তার এবং তার পরিবারের জন্য একটি বড় দুঃখের মুহূর্ত এবং এই ক্ষতি সারা দেশ, রাজ্য, কমনওয়েলথ এবং সারা বিশ্বের অসংখ্য মানুষ গভীরভাবে অনুভব করবে। বৃহস্পতিবার রাণীর স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ার পরে রাজপরিবারের সিনিয়র সদস্যরা তাঁর স্কটিশ এস্টেটে জড়ো হয়েছিলেন। ডাক্তাররা রাণীকে চিকিৎসা তত্ত¡াবধানে রাখার পর রাণীর সমস্ত সন্তান অ্যাবারডিনের কাছে বালমোরালে আসে। তাঁর নাতি এবং এখন সিংহাসনের উত্তরাধিকারী, প্রিন্স উইলিয়াম, তার ভাই প্রিন্স হ্যারিও সেখানে আসেন।

১৯৫২ সালের ফেব্রæয়ারিতে তাঁর বাবা রাজা জর্জ মারা গেলে এলিজাবেথ কমনওয়েলথের প্রধান হন এবং সাতটি কমনওয়েলথভুক্ত দেশের রেজিমেন্টের প্রধান হন। দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিÍান এবং সিলন (বর্তমান নাম শ্রীলঙ্কা)। যুদ্ধ থেকে যুক্তরাজ্য পুনর্গঠন, একটি সাম্রাজ্য হারানো, এর অর্থনীতিতে রূপান্তর এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ ও ত্যাগ উভয়ই করার সময় রানী সিংহাসনে সাত দশক অতিবাহিত করেছিলেন।

তিনিই একমাত্র সম্রাট যাকে বেশিরভাগ ব্রিটিশরা চেনেন। তিনি সম্ভবত ইতিহাসের যে কারোর চেয়ে বেশি লোকের সাথে দেখা করেছিলেন এবং তাঁর ছবি যেগুলো স্ট্যাম্প, মুদ্রা এবং ব্যাঙ্কনোটগুলিতে ছাপা হয়েছিল, সেগুলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পুর্নমুদ্রিত ছিল। সিংহাসনে আরোহনের সময় তিনি কেনিয়া সফরে ছিলেন। তিনি ১৯৫৩ সালের ২ জুন ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবেতে রাজকীয় মুকুট পরেছিলেন। রাজ্যাভিষেকের এই অনুষ্ঠানটি টেলিভিশনে প্রথম রাজ্যাভিষেক হিসেবে সম্প্রচার হয়েছিল। তিনি যে সময় ক্ষমতায় আরোহন করেছিলেন সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে জোসেফ স্ট্যালিন, চীনে মাও সেতুং এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব ছিলেন হ্যারি ট্রুম্যান। সে সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন উইনস্টন চার্চিল। তার শাসনামলে ১৪ জন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এ বছরের ৬ ফেব্রæয়ারি তাঁর প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী অর্থাৎ রাজ্যভিষেকের ৭০ বছর উদযাপন করেছেন। এর আগে ১৯৭৭, ২০০২ এবং ২০১২ সালে যথাক্রমে তাঁর রৌপ্য, স্বর্ণ এবং হীরক জয়ন্তী উদযাপন করেছেন।

তিনি ছিলেন রাজা জর্জ এবং রানি এলিজাবেথের প্রথম সন্তান। রাজা অষ্টম এডওয়ার্ডের পরে সিংহাসনে তার বাবা জর্জ বসলে তখন থেকেই সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে গণ্য হতেন তিনি। তিনি বাড়িতে পারিবারিকভাবে শিক্ষিত হয়েছিলেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ স্থলসেনাবাহিনীর নারী বিভাগ অগজিলিয়ারি টেরটোরিয়াল সার্ভিসে কর্মরত থেকে জনসাধারণের দায়িত্ব পালন শুরু করেছিলেন। তিনি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হন যখন তার চাচা এডওয়ার্ড অষ্টম ১১ ডিসেম্বর, ১৯৩৬ সালে পদত্যাগ করেন এবং তার পিতা রাজা ষষ্ঠ জর্জ হন। তার বয়স সে সময় ছিল ১০ বছর।

১৯৪৭ সালে তিনি গ্রিক ও ডেনমার্কের প্রাক্তন রাজপুত্র ডিউক অফ এডিনবরা ফিলিপকে বিয়ে করেন। এলিজাবেথ-ফিলিপ দম্পতির চারটি সন্তান রয়েছে। তারা হলেন ওয়েলসের যুবরাজ চার্লস (জন্ম ১৯৪৮), রাজকুমারী অ্যান (১৯৫০), ইয়র্কের ডিউক যুবরাজ অ্যান্ড্রু (১৯৬০) এবং ওয়েসেক্সের আর্ল যুবরাজ এডওয়ার্ড (১৯৬৪)। ফিলিপ ২০২১ সালের এপ্রিলে ৯৯ বছর বয়সে মারা যান।

রাণী এলিজাবেথ মারা যাওয়ার আগে ছিলেন বিশ্বের ইতিহাসের দীর্ঘতম শাসনকারী নারী রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত রাজ্যশাসক, বর্তমানে জীবিত রাজা-রাণীদের মধ্যে সর্বাধিক দীর্ঘকাল ধরে শাসনকারী রাজ্যশাসক এবং বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে সর্বাধিক প্রবীণ ও দীর্ঘকালীন রাষ্ট্রপ্রধান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

বিষয়: * যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী শাসক * রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ
লাইভ রেডিও
সর্বশেষ সংবাদ