জলাবদ্ধতা নিরসনে সাতক্ষীরায় ২টি নদী ও ৭১টি খাল খনন
শহীদুজ্জামান শিমুল
সাতক্ষীরা প্রতিনিথিঃ
সাতক্ষীরা সদর উপজেলাসহ ৪টি উপজেলাকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে নদী ও খান খননের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। প্রকল্পগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন হলে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে ৪টি উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন,খাল খননের পাশাপাশি বেতনা নদীর পুরোটা খনন করতে পারলেই জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পাবে জেলার মানুষ।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র থেকে জানা যায়, সাতক্ষীরায় জলাবদ্ধতা নিরসনে শালুকা,শালিকাসহ খনন করা হচ্ছে ৭১টি খাল। এ ছাড়া সমাপ্ত হয়েছে বেতনা ও মরিচ্চাপ নদ খনন। পুরো প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৪শ’ ৭৫ কোটি টাকা।
সরেজমিনে জানা যায়, বেতনা ও মরিচ্চাপ নদ ভরাট হয়ে গিয়েছিল একযুগেরও আগে। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় গতিহীন হয়ে পড়ে ৭০টিরও বেশি সংযোগ খাল। ফলে এক যুগেরও বেশি সময় জলাবদ্ধতায় নাকাল সাতক্ষীরার কলারোয়া,সদর,তালা ও আশাশুনি উপজেলার কয়েক লক্ষধিক মানুষ।
এমনকি সাতক্ষীরা পৌরসভার অর্ধেকেরও বেশি অংশ জলমগ্ন থাকে বছরের ছয় মাস। তায় এসব জলবদ্ধতা থেকে সাতক্ষীরাবাসীকে মুক্তি দিতে একযোগে শুরু হয় বেতনা, মরিচ্চাপ নদ খননসহ ৭০টিরও বেশি সংযোগ খাল।
তবে স্থানীয়দের দাবী যথাযথভাবে নদী ও খাল খনন হলে জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পাবেন তারা।
সদর উপজেলার মাটিয়াডাঙ্গা গ্রামের ইউসুফ আলী বলেন, জেলা শহরের নিকটবর্তী এলাকায় বাস করেও আমরা জলাবদ্ধতায় নিমজ্জিত থাকি বছরের ৬ মাস। শালুক খালের ধারে আমার বাড়ি। শালুক খাল খনন হচ্ছে। এবার আশা করছি,বর্ষাকালে আমরা জলাবদ্ধ থাকবেনা। তবে নকশা অনুযায়ী খাল খননের দাবী তোলেন তিনি।
শহরের বদ্দীপুর কলোনী এলাকার মো. আলমগীর বলেন, পৌরসভার মধ্যে বাস করে আমরা আধুনিক জীবন-যাপন করতে পারিনা। কারণ একটাই, জলাবদ্ধতা। জলাবদ্ধতার কারণে বাচ্চারা ঠিকমত স্কুলে যেতে পারেনা। বেতনা খনন হয়েছে। দেখি, এবার আমাদের এলাকা জলমগ্ন থাকে কিনা।
মাছখোলা এলাকার কলেজ ছাত্র সাকিবুল হাসান বলেন, জলবদ্ধতার কারনে আমাদের মোছখোলর প্রধান সড়ক বছরে ৬-৮ মাস ঢুবে থাকায় আমরা ঠিক মত লেখা পড়া করতে পারিনা আমাদের ভোগান্তি শেষ থাকেনা রান্না খাওয়া করতে কষ্ট হয়! তবে এবার বেতনা নদী খননে আশা করি কিছু দূর্ভোগ করবে। তবে শুধু খনন করলে হবে না ঠিক মতন খনন কাজের তদারকি রক্ষণাবেক্ষণ করা দরকার।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের দাবি, ঠিকমত
নজরদারিতে ঠিকাদারের কাজ থেকে বুঝে নেওয়া হচ্ছে খনন কাজ। বেতনার বাকি ২৩ কি.মি.খনন হলে জলাবদ্ধতার হাত থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাবে সাতক্ষীরার কয়েক লাখ মানুষ।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর উপ-প্রকৌশলী গোকুল রায় জানান, ২০১৪ সালে জলাবদ্ধতা নিরসনে সমীক্ষা করা হয়। তার প্রেক্ষিতে ১,২,৬,৮ পোল্ডারে এই খাল ও নদী খনন করা হচ্ছে। মোট ৭১টি খাল খনন করা হচ্ছে। পাশাপাশি বেতনা ও মরিচ্চাপ খনন করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, মোট ২৯.৩৯৬ কিলোমিটার নদী খনন হচ্ছে। সাতক্ষীরার বাঁকাল ব্রিজ থেকে নৈয়কাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত পওর-১ এর অধীনে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত মরিচ্চাপ নদী খননের জন্য ১৭ কটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুলনার শামীম আহসান, যশোরের নূর হোসেন, ঢাকার রাব্বানী কন্সটাকশন লি. ও পটুয়াখালীর ওটিবিএল এমকে ইকেএ। এই চার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে খননকাজ শেষ করার কথা রযেছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। পুরোপুরি খনন হলে সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি কৃষি ও মৎস্য ক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হবে।