করোনার মহামারীতে কুড়িগ্রামের মফস্বল বই বিক্রেতা চরম ভোগান্তিতে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ কুড়িগ্রামে করোনার মহামারীতে শহরের তুলনায় মফস্বল এলাকার বই বিক্রেতা পড়েছেন ভোগান্তিতে। দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ কিংবা অনিয়মিত পাঠদানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন এসব ব্যবসায়ী। সরকারি বেসরকারি সহতায় না পেয়ে অনেক বই ব্যবসায়ী ঋণগ্রস্থ হয়ে গুটিয়েছেন ব্যবসা। পাঠ্যপুস্তক বিক্রেতা করোনার মহামারীতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা না থাকায় জোটেনি কোন প্রণোদনা। দ্রব্যমুল্যের উর্দ্ধগতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এসব বই ব্যবসায়ীরা।
রাজারহাট উপজেলার কলেজ রোডে মুক্তা লাইব্রেরির মালিক মশিউর রহমান দোকান খুলে বসে আছেন। দোকানের সাজানো বই,খাতা-কলমের উপর ধুলোর আস্তরণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেই কাটছে সময়। মশিউর এই লাইব্রেরির ব্যবসা করছেন প্রায় ২০বছর থেকে। এই লাইব্রেরির ব্যবসা দিয়েই চলে সংসারের ৭সদস্যের ভরণ পোষণ। করোনার মহামারীর পূর্বে এনজিও এবং ধারদেনা করে দোকানে করেছেন পাঠ্যপুস্তক। কিন্তু দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং অনিয়মিত থাকায় বেচাবিক্রি না হওয়ায় মশিউরের সংসার চালানই দায়। ঋণ শোধ করা যেন স্বপ্ন হয়ে দ্বঁাড়িয়েছে। এমন দু:সহ কষ্টে জীবন-যাপন করছেন জেলার অসংখ্য পাঠ্যপুস্তক ব্যবসায়ী। অনেকেই ঋণে জর্জরিত হয়ে ব্যবসাই বন্ধ করে ফেলেছেন।
মশিউর রহমান বলেন, একদিকে সৃজনশীল অন্য দিকে করোনা। এই কারণে গ্রামাঞ্চলে বইয়ের ব্যবসা একদম চলে না। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাথর্ীরা সৃজনশীল বোঝে না। আর করোনার কারণে স্কুল-কলেজে অনিয়মিত থাকায় শহরের তুলনায় গ্রামের সন্তানরা পড়াশোনা বিমুখ থাকে। তাই আগের মতো লাইব্রেরি আর চলে না। বইয়ের ব্যবসা করতে গিয়ে মহাজন এবং এনজিও’র কাছ থেকে ঋণ করেছি। এনজিও’র ঋণ এক এনজিও থেকে নিয়ে অন্য এনজিওকে পরিশোধ করলেও মহাজনের ঋণ পরিশোধ হচ্ছে না। সরকার যদি আমাদের সুদ মুক্ত ঋণ সহায়তা দিতো আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়মিত চালু রাখতো তাহলে করোনার ধাক্কা সামলিয়ে ওঠা যেত।
আল হেরা লাইব্রেরি ফজলুল হক বলেন,করোনাকালিন সময়ে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা ঋণ নিয়ে বিভিন্ন ভাবে কোন রকমে ব্যবসাটাকে টিকিয়ে রেখেছি। কিন্তু আবার যদি শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধ হয়ে যায়। তাহলে আমাদেরও ব্যবসা গুটাতে হবে।
শহীদ বুক ডিপো মোশাররফ হোসেন বলেন,বর্তমানে দিনে ৫ থেকে ১০হাজার টাকায় বিক্রি হয় না। ঘর ভাড়া, বিদ্যুত বিল,মহাজনের ও এনজিও ঋণ দিতে হয়। এতে করে সংসার চালাই না ধারদেনা শোধ করি? যে হারে দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়ছে তাতে এই ব্যবসা দিয়ে সংসার চলে না। এই বিপদের সময় সরকার পাশে না দ্বাঁড়ালে আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীরা ঘুরে দ্বঁাড়াতে পারব না।
দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষাথর্ী রফিকুল ইসলাম বলেন,আগে পড়াশোনার পিছনে অনেক খরচ হতো। প্রাইভেট,খাতা-কলম, বই,যাতায়াতসহ ইত্যাদি অনেক খরচ ছিল। কিন্তু করোনার মহামারির পর থেকে সেই ব্যয়টা অনেক কমেছে। এখন ক্লাস চললেও আগের মতো কলম,খাতা ইত্যাদি কিনতে খরচ কম হচ্ছে।
দশম শ্রেণীর ছাত্রী রোকসানা আকতার বলেন,বিগত দিনে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে ব্যয়টা হতো তা করোনার পেন্ডামিক সময়ে শিক্ষা সরঞ্জামাদী ক্রয় কমেছে।
কুড়িগ্রাম পাঠ্যপুস্তক সমিতির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আল আমিন বলেন,করোনার মহামারীতে জেলায় প্রায় শতাধিক লাইব্রেরি বন্ধ হয়ে গেছে। আর বেশ কিছু লাইব্রেরি বন্ধ হবার উপক্রম পর্যায় রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রায় হাজার কোটি টাকা প্রণোদনার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। সেটাও এখন পাওয়া যায়নি। সরকারের প্রণোদনার পাশাপাশি সুদমুক্ত বা স্বপ্ল সুদের ঋণ সহায়তা দিতে আমাদের এই আদি ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখা স্বম্ভব হতো।
রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরে তাসনিম বলেন,দীর্ঘ লকডাউন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষা উপকরণের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা ক্ষতি সম্মুখিন হয়েছেন। ব্যবসায়ীদের জন্য সহায়তার যে স্কিম ছিল সেখানে আবেদন করলে প্রণোদনা সহায়তা দেয়া সম্ভব হতো। তবে ভবিষ্যতে তারা যদি আবেদন করেন সেই বিষয়টি উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।