শরণখোলায় ঝুঁকিপূর্ণ সাবরেজিস্ট্রি অফিস অরক্ষিত হাজার হাজার দলিল-নথিপত্র
আবু-হানিফ, বাগেরহাট অফিসঃ
বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের ভবনটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ছাদ ও বিমের পলেস্তরা খসে খসে পড়ছে। শুধু ছাদ-বিম নয়, পুরো ভনটিই এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। প্রাণ হাতের মুঠোয় নিয়ে জরাজীর্ণ সেই ভবনের মধ্যেই কাজ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সামান্য বৃষ্টি হলেই ছাদ চুয়ে পানি পড়ে। রেকর্ড রুমসহ অফিসের মধ্যে পানিতে তলিয়ে যায়। যার ফলে সবসময় স্যাঁতস্যাঁতে থাকে ভবনটি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দলিল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজপত্র। এছাড়া, পুরো ভবনের দেয়ালে বড় বড় ফাটল ধরেছে। দরজা-জানালার অবস্থাও দুর্বল। সবমিলিয়ে অবহেলিত ও অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে রাস্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এই শাখাটি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৎতকালিন জাতীয় পার্টি (এরশাদ) সরকারের আমলে ১৯৮৪ সালে আদালত ভবন হিসেবে নির্মিত হয় এই ভনটি। উপজেলা পরিষদ চালু হওয়ার পর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পরিচালনা হতো এই ভবনে। ৯০এর গণআন্দেলনে সৈর শাসকের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে গঠন হয় নতুন সরকার। এর পর আদালত তুলে নেওয়া হয় শরণখোলা থেকে। পরবর্তীতে সেই আদালত ভবনের এক পাশের ৫টি কক্ষ সাবরেজিস্ট্রি অফিস হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। অন্য পাশের ৫টি কক্ষে রয়েছে সেটেলমেন্ট অফিস। কিন্তু ৩৯ বছর আগে নির্মাণ হওয় সেই ভবনে এ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো সংস্কার বা আধুনিকায়ন না হওয়ায় ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে ভবনটি।
সরেজিমন সাবরেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, পুরো ভবনটিই জরাজীর্ণ। ছাদ ও দেয়ালে বট গাছসহ অন্যান্য আগাছা জন্মেছে। দরজা-জানালা ভাঙাচোরা। দেয়ালে ফাটল। এজলাস কক্ষের ছাদ ও বিম থেকে পলেস্তরার বড় বড় অংশ খসে রড বের হয়ে গেছে। ছাদ চুয়ে পানি পড়ায় রেকর্ড রুমের দলিল পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। অফিস কক্ষেও গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, নথিপত্র ঢাকা রয়েছে। এজলাস কক্ষে ফ্যান ঝোলানো রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ একটি রডের সঙ্গে। টয়লেটের অবস্থাও খুব খারাপ। তার মধ্যেই কাজ করছেন অফিসের লোকজন।
অফিস সহকারী মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়বে এটি। অফিস চলাকালে ছাদের পলেস্তরা খসে পড়ে। বৃষ্টির সময়তো বসাই যায় না। তার মধ্যে আমরা ১৮-১৯ জন স্টাফ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি। প্রতি সপ্তাহের বুধবার ও বৃহস্পতিবার দলিল রেজিস্ট্রি হয়। তখন লোকজনের চাপ বেশি থাকে। জায়গা সংকটের কারণে দাপ্তরিক কাজও ব্যাহত হয়। তাই সরকারের কাছে রেজিস্ট্রি অফিসের জন্য নতুন ভবনের দাবি জানাই।
শরণখোলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জালাল আহমেদ রুমি বলেন, রেজিস্ট্রি অফিসে ঢুকলে আমরা আতঙ্কে থাকি। কখন যানি ছাদ ভেঙে মাথায় পড়ে। ভবনের যা অবস্থা, দেখে কোনো অফিস মনে হয় না। এটি যেনো একটি ভুতুড়ে বাড়ি। এর মধ্যে দলিল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র রাখা নিরাপদ নয়। দ্রæত ভবন নির্মাণ না হলে এলাকার হাজার হাজার দলিল, নথিপত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।
উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার মো. আবু রায়হান বলেন, কয়েকদিন আগে অফিস চলাকালে সেবাগ্রহীতাদের সামনেই ছাদ থেকে বিশাল একটি অংশ ভেঙে এজলাসে পড়ে। অল্পের জন্য আমার মাথায় পড়েনি। এভাবে প্রতিনিয়ত ছাদ ভেঙে ভেঙে পড়ছে। এমন জীর্ণ ভবনে কোনো মানুষ কাজ করতে পারে না। দলিলপত্র সংরক্ষণের জন্য নিরাপদ কক্ষ নেই। রেকর্ড রুমের গুরুত্বপূর্ণ নথি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
সাবরেজিস্ট্রার আবু রায়হান আরো বলেন, ভবনের যা অবস্থা তাতে উপর থেকে প্রলেপ দিলে কোনো কাজ হবে না। কয়েক বছর আগে মেরাত করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন পরই তা আবার খসে পড়েছে। ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে নতুন ভবন নির্মাণ অথবা অন্যকনো ভাড়া বাড়িতে অফিস স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে দেড় বছর আগে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ##