ঠাকুরগাঁওয়ে নতুন আলু এখন প্রতিকেজি ৫ টাকা, লোকষানে চাষিরা
নাজমুল হোসেন, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ॥ উত্তরের কৃষি প্রধান জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে গম ও আমন ধানের লোকসানের পর এবার আগাম জাতের আলু চাষ করে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হয়েছে জেলার আলু চাষিদের। মৌসুমের শুরুতে কিছুটা দাম মিললেও ডিসেম্বর মাষের শেষ নাগাদ দাম প্রয়োজনের তুলনায় নিচে নামতে থাকায় এখন কেজি প্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা পাইকারী দরে। এতে আলু চাষ করে বড় অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের আলু চাষিদের। বর্তমানে বাজারে পুরনো আলুর সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকায় নতুন আলুতে চাহিদা কম দেখাচ্ছেন ক্রেতারা। আর এ কারণেই ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি এলাকার চাষিদের।
এ অঞ্চলের লাভজনক ফসল হিসেবে আলু বেশ পরিচিতি আছে। জেলার বালিয়াডাঙ্গি, পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল, হরিপুর ও সদর উপজেলার মাটি আলু চাষের উপযোগী হওয়ায় প্রতি বছর বেশি লাভের আশায় ২ ধাপে আলু চাষ করেন এ এলাকার চাষিরা। প্রথম ধাপের আলু চাষ শুরু হয় আশ্বিন মাসের প্রথম সপ্তাহেই। অনেকে আবার আশ্বিন মাসে আলু চাষ করে লোকসানে পড়েছে অসময়ে বৃষ্টির পানির জন্য।
আগাম জাতের ধান কাটার অল্প সময় ব্যবধানেই আগাম জাতের আলু আবাদ করা হয় সেসব জমিতে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ২৬ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। যার লক্ষ্য মাত্রা ছিল ২৮ হাজার ৫শ হেক্টর। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিতে অনেক জমির আলু নষ্ট হলেও আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে দাবি করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
সদর উপজেলার আলুচাষি হেলাল উদ্দিন জানান, দুই একর জমিতে আলু চাষ করতে দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের এক একর জমির আলু বিক্রি করেছেন ৭০ হাজার টাকায়। দিন দিন আলুর দাম কমতে শুরু করেছে। শেষ পর্যন্ত পুঁজিটুকুও উঠবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
রাণীশংকৈল উপজেলার কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, এবার পাচ একর জমিতে আলু চাষ করেছি। প্রতি একরে প্রায় দের লক্ষ্য টাকা খরচ হয়েছে। আশা করেছিলাম একর প্রতি দুই লাখ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারব। এখন বাজারে আলু ৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এই অবস্থায় একর প্রতি দাম লাগবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা যা খরচ করেছি তার তিন ভাগের এক ভাগও আসবে না।
পীরগঞ্জ উপজেলার আলুচাষি মোতালেব জানান, বাজারে এখনো পুরনো আলুর সরবরাহ পর্যাপ্ত রয়েছে। পুরনো আলুর দাম কম হওয়ায় ক্রেতারা পুরনো আলুর দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। সে কারণে নতুন আলুর চাহিদা কমেছে বাজারগুলোতে। এ জন্য আলু চাষিদের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।
বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সপ্তাহে আগাম বিদেশী জাতের আলু প্রতি মণ ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতি মণ ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেখানে প্রতি বছরই আগাম আলু এক হাজার টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা বিক্রি হতো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক শামিমা নাজনিন বলেন, এই জেলার জন্য আলু একটি লাভজনক ফসল। যার ফলে অধিকাংশ চাষিরা এই ফসলের দিকে ঝুকে পরছে। আমরা চাইলেও এর বিকল্প হিসেবে অন্য কোন ফসলের কথা বলতে পারি না। এটা যেহেতু কাচামাল তাই এর দাম উঠা নামা করবে। সামনে হয়ত কয়েকদিন পর এর দাম বাড়তে পারে। ভালো ফলন হয়েছে আলুর। আমরা আশাবাদী আলুর দাম কিছুটা বাড়লেই চাষিদের লোকসানের মুখ দেখতে হবে না।