সাংসদ লিটন হত্যাকারিদের ফাঁসি দ্রুত কার্যকরের দাবি পরিবারের
হযরত বেল্লাল, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি:
গাইবান্ধার-১ সুন্দরগঞ্জ আসনের সরকার দলীয় সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের হত্যাকারিদের ফাঁসির আদেশ দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীগণ। গতকাল শুক্রবার বিকালে প্রয়াত সাংসদ লিটনের স্বরণে সুন্দরগঞ্জ ডি ডব্লিউ সরকারি কলেজ মাঠে আলোচনা সভায় তাঁর সহ-ধর্মীনি ও বড় বোনসহ স্থানীয় আ’লীগ নেতারা বিচারের দাবি জানান।
উপজেলা আওয়ামীলীগ ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ও লিটনের বড় বোন আফরুজা বারীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক। আর বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, রংপুর জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, জেলা সভাপতি এ্যাডভোকেট সৈয়দ শামস উল আলম হিরু, সাধারণ সম্পাদক আবু বক্কর সিদ্দিক, জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আসিফ সরকার, উপজেলা আ’লীগ যুগ্ম আহবায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম সরকার লেবু, সাংসদ লিটনের সহধর্মীনি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক সৈয়দা খুরশীদ জাহান স্মৃতির, যুগ্ম আহবায়ক সাজেদুল ইসলাম, রেজাউল আলম রেজা, আব্দুল হান্নান সরকার, আব্দুল্লাহ আল মামুন, হাফিজা বেগম কাকলী, আহসান আজিজার সরদার মিন্টু, আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু, মেহেদি মোস্তফা মাসুম, পৌর আ’লীগ সভাপতি আহসানুল করিম চাঁদ, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার, শ্রমিক লীগ আহবায়ক গণেশ শীল, উপজেলা ছাত্রলীগ আহবায়ক রুহুল আমিন প্রামানিকসহ জেলা, উপজেলা আ’লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীগণ।
বক্তাগণ বলেন, নিম্ন আদালতে দেয়া এমপি লিটনের হত্যা মামলায় আসামিদের ফাঁসির রায় উচ্চ আদালতেও বহাল থাকবে। তারা আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের দাবি জানান।
প্রয়াত এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের বড় বোন আফরুজা বারী এবং সুন্দরগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ এই হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসির রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানিয়েছেন।
তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন ২০১২ সালে সাংসদ কাদের খানের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দেন। তদন্তের পর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে তিনি রাজনীতিতে যেমন কোনঠাসা হতে থাকেন, তেমনি জনসম্পৃক্ততা কমে যাওয়ায় তিনি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে থাকেন। পরবর্তীতে তিনি ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের কাছে পরাজিত হন। এরপর থেকে তিনি এলাকায় আসা ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে নিজ এলাকা সুন্দরগঞ্জে ব্যাপক রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করলে কর্নেল (অব.) কাদের খান আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তিনি লিটন ও শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনে করতে থাকেন।
জাতীয় পার্টির এই সাবেক এমপি আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার স্বপ্নে এতটাই বিভোর ছিলেন যে, তিনি এমপি লিটনকে পথের কাঁটা ভেবে তাঁকে দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দেয়ার ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় উপজেলার বামনডাঙ্গার মাস্টারপাড়ার নিজ বাড়িতে এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে কাদের খানের লালিত-পালিত খুনীরা। কিন্তু প্রথমে সন্দেহের দৃষ্টি থেকে দুরত্বেই ছিল ঘাতক চক্র কাদের খান ও তার সহযোগীরা। এমপি লিটন হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে মাঠে নামে গোয়েন্দারা। সন্দেহভাজন অনেকে গ্রেপ্তার হন। একপর্যায়ে উপজেলার ধোপাডাঙ্গায় একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ছিনতাইকারীদের প্রেপ্তার করার পর লিটন হত্যার প্রকৃত রহস্য উন্মোচন হতে থাকে। ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার বাসা থেকে কাদের খানকে প্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর তদন্ত শেষে কাদের খানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এরমধ্যে সুবল কসাই নামের এক আসামির কারাগারেই মৃত্যু হয়।
জেলা দায়রা ও জজ আদালত ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর এমপি লিটন হত্যাকান্ডে জড়িত সাত আসামির ফাঁসির রায় ঘোষণা করেন। দন্ডিতরা হলো- সাবেক সাংসদ আব্দুল কাদের খান ও তার পিএস শামছুজ্জোহা, হান্নান, মেহেদী, শাহীন, রানা ও চন্দন কুমার রায়। দন্ডপ্রাপ্ত আসামি চন্দ্রন কুমার রায় পলাতক রয়েছে। যেদিন তাকে গ্রেপ্তার করা হবে সেদিন থেকে তার রায় কার্যকর হবে কিন্তু এখন পর্যন্ত আদেশ কার্যকর করা হয়নি।
এমপি লিটন হত্যার ঘটনায় পুলিশ দুটি মামলা দায়ের করে। একটি অস্ত্র মামলা ও অপরটি হত্যা মামলা। অস্ত্র মামলার রায়েও একমাত্র আসামি আব্দুল কাদের খানের ১২ বছরের কারাদন্ড হয়েছে।
প্রয়াত সাংসদ মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। ১৯৯৮ সালে তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মনোনীত হন। জামায়াত অধ্যাষিত সুন্দরগঞ্জে তিনি ২০০০ সালে রাজাকার গোলাম আজমের জনসভা পন্ড করে দেন ও তার আগমন প্রতিহত করেন। তিনি ২০০৩ সালে ব্যালটের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন।
শুক্রবার সকালে উপজেলার সবার্নন্দ ইউনিয়নের উত্তর সাহাবাজ মাষ্টার পাড়া গ্রামে সাংসদ লিটনের কবরে পুস্পমাল্য অর্পণ করবেন পরিবারের সদস্যরা, কেন্দ্রীয়, জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ এবং তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীগণ। এছাড়া দোয়া মাহ্ফিল ও তবারক বিতরণ করা হয়।