জনদুর্ভোগ; শরণখোলায় অর্ধশত ব্রিজ-কালভার্ট-পুল ঝুঁকিপূর্ণ!
আবু-হানিফ, বাগেরহাট অফিসঃ
বাগেরহাটের শরণখোলার সাউথখালী ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ডেই ৫টি ¯িøপার ব্রিজ সম্পূর্ণ অকেঁজো। অন্যদিকে খোন্তাকাট ইউনিয়নের মাত্র তিন কিলোমিটার সড়কে ৫টি বক্স কালভার্ট ও একটি গার্ডার ব্রিজ চলাচলের অনুপযোগী। এনিয়ে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় অর্ধশত ব্রিজ, কালভার্ট ও লোহার পুল (উডেন-আয়রণ) চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যুগ যুগ ধরে এসব অবকাঠামোর উন্নয়ন না হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরম পর্যায় পৌছেছে। মানুষের মাঝে ক্ষোভ বাড়ছে দিন দিন।
এসব ব্রিজ-কালভার্টের মধ্যে বেশ কয়েকটি ২০০৭ সালের সিডরে বিধ্বস্ত হওয়ার পর আর কোনো ব্রিজ নির্মাণ হয়নি। আবার কোনোটি ভেঙে যাওয়ার পর চিহ্নিও নেই সেখানে। কোনোটিতে নির্মাণের ২৩বছরেও মেরাতের হাত পড়েনি। ভাঙাচোরা এসব ব্রিজ-কালভাট এখন মরন ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, এলজিইডি সূত্র জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এসব ব্রিজ-কালভার্টের অধিকাংশই আইডি এবং ডিপিপি তালিকাভুক্ত না হওয়ায় নির্মাণ করা যাচ্ছে না। উডেন-আয়রণ পুলগুলো স্থানীয়ভাবে মেরামত করা হয়। আর যেগুলো বড় বাজেটের সেগুলো এলজিইডির ঢাকা অফিসে প্রস্তাব পাঠানোর পর বারদ্দ সাপেক্ষে নির্মাণ করা হয়ে থাকে।
শরণখোলা উপজেলা প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, খোন্তাকাটা ইউনিয়নের নলবুনিয়া-জানেরপাড় তিন কিলোমিটার সড়কে ৬টি বক্স কালভার্ট একটি সেতু রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি বক্স কালভার্ট ভেঙে মরন ফাঁদে পরিনত হয়েছে। এছাড়া, বি জানের পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন খালের সেতুটি বহু পুরনো এবং অপ্রস্ত হওয়ায় মানুষ ও যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। একই ইউনিয়নের রাজৈর-বানিয়াখালী জিসি সড়কে ১টি গার্ডার ব্রিজ, ১টি বক্স কালভার্ট, জীবনদুয়ারী-রাজাপুর সড়কে ১টি গার্ডার ব্রিজ, পশ্চিম খোন্তাকাটা-জেবিকে প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়কে ১টি, উপজেলা পরিষদ-রাজৈর খেয়াঘাট সড়কে ১টি, দেলোয়ার হাওলাদারের বাড়িসংলগ্ন খালে ১টি, মধ্য খোন্তাকাটা হাশেম মুন্সীর বাড়িসংলগ্ন খালে ১টি, আমতলী খালে ২টি, জীবন দুয়ারী গাজীপাড়া জানের খালে ১টি লোহার পুল (উডেন-আয়রণ) চরম ঝুঁকিপূর্ণ।
ধানসাগর ইউনয়িনের আমড়াগাছিয়া-রাজাপুর সড়কে ১টি গার্ডার ব্রিজ, ১টি কালভার্ট, রাজাপুর-বান্দাঘাটা সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কে ২টি বক্স কালভার্ট, ১টি গার্ডার ব্রিজ, রাজাপুর বাজার থেকে আমড়াগাছিয়া সড়কের চিনির খালের ১টি আরসিসি গার্ডার ব্রিজ এবং ছুটুখার হাট থেকে জমাদ্দার বাড়ি বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্র সড়কে ১টি লোহার পুল ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অপরদিকে, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার সীমানার ধানসাগর গ্রাম এবং বানিয়াখালী সংযোগ খালের ওপর ¯িøপার ব্রিজটি নির্মাণ হয় ১৯৯৮ সালে। দুই উপজেলার টানাটানিতে ব্রিজটি একবারও মেরামত করা হয়নি। বর্তমানে ব্রিজের ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরী করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ।
উপজেলা সদর রায়েন্দা খালের ওপর ব্রিজটি গত ১৭ আগস্ট ভেঙে যায়। সেই থেকে প্রায় তিন মাস ধরে ভাঙা ব্রিজটি খালে পড়ে আছে। সেটি অপসারণ না করায় নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। জনগণের চলাচলের জন্য এর পাশেই নির্মিত প্রায় ১০০মিটার দীর্ঘ কাঠের পুলটি এখন নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। হাজার হাজার মানুষ এটি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলছে। এছাড়া, খাদা-দীপর সংযোগ খালে প্রায় প্রায় ১০০ফুট আয়রণ ব্রিজটি কয়েক বছর ধরে ভেঙে পড়ে আছে। লাকুড়তলা-উত্তর তাফালবাড়ী সড়কে ১টি, মৌরাশী-উত্তর তাফালবাড়ী সংযোগ খালে ১টি, জিলবুনিয়া খালের ফকির বাড়িসংলগ্ন ১টি, মালিয়া গ্রামে খলিল মাষ্টারের বাড়িসংলগ্ন খালে ১টি এবং মালিয়া হিন্দুপাড়া খালে ১টি লোহার পুল (উডেন-আয়রণ) সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত।
সাউথখালী ইউনিয়নের ৮নম্বর চালিতাবুনিয়া ওয়ার্ডেই ৫টি ¯িøপার ব্রিজ অকেঁজো। এগুলো হচ্ছে চালিতাবুনিয়া বাজার সংলগ্ন খালের ১টি ¯িøপার ব্রিজ, কদম আলীর বাড়ি সংলগ্ন খালের ১টি ¯িøপার ব্রিজ, নজরুল ইসলাম আকনের বাড়ি সংলগ্ন খালের ১টি ¯িøপার ব্রিজ, আবুল কালামের বাড়ি সংলগ্ন খালের ১টি ¯িøপার ব্রিজ এবং জামাল চৌকিদারের বাড়ি সংলগ্ন খালের ১টি। এগুলো যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ৬নম্বর দক্ষিণ সাউথখালী ওয়ার্ডের গাবতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন খালের ¯িøপার ব্রিজ এবং ১নম্বর সোনাতলা ওয়ার্ডের সাইক্লোন শেল্টার সড়কের ১টি বক্স কালভার্ট, র্প্বূ সোনাতলা লতিফ মেম্বারের বাড়িসংলগ্ন খালে ১টি এবং ধীরেন চৌকিদারের বাড়ির পাশে ১টি লোহার পুল ঝুঁািকপূর্ণ। এছাড়া, তাফালাবাড়ী বাজার-দক্ষিণ তাফালবাড়ী সংযোগ খালের ¯িøপার ব্রিজটি ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরে বিধ্বস্ত হয়। সেখানে একটি আরসিসি গার্ডার ব্রিজটি নির্মাণের জন্য ২৮অক্টোবর বিকেলে বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন।
অপরদিকে, শরণখোলা উপজেলা পরিষদের সামনের খালের ওপর একসময় ছিলো ৮০মিটার দীর্ঘ একটি ¯িøপার ব্রিজ। ৬-৭বছর আগে সেটি ভেঙে যাওয়ার পর দড়ি টানা খেয়ায় পারাপার হয় মানুষ। এই খালের উত্তর পারে উপজেলা পরিষদ এবং দক্ষিণ পারে রয়েছে প্রাণি সম্পদ অফিস, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মহিলা মাদরাসা। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত শত কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ শত শত মানুষ প্রতিদিন এই দড়ি টানা নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে। সম্প্রতি সেখানে একটি কাঠের পুল নির্মান করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই খালে একটি আরসিসি ব্রিজ করার দাবি স্থানীয়দের।
যুগ যুগ ধরে এসব অবকাঠামো নির্মাণ না হওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। চালিতাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক নজরুল ইসলাম আকন, উত্তর রাজাপুর গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী আসিফ খান, বগী দশঘর গ্রামের ব্যবসায়ী আ. রাজ্জাক, ধানসাগর গ্রামের বিনয় সিংহসহ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এলাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টের যা অবস্থা, তা দেখে নিজেদের লজ্জা পেতে হয়। বর্তমান ডিজিটার সরকারের এই সময়ে সারা দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। কিন্তু আমাদের এখনো বাঁশের সাঁকো পার হতে হয়! যোগাযোগ উন্নয়ন খাতে প্রতিবছর সরকারের কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ সঠিকভাবে ব্যবহার হলে এমন অবস্থা থাকার কথা নয়।
এব্যাপারে শরণখোলা উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল মতিন বলেন, এলজিইডি আইডি এবং ডিপিপিভুক্ত না হলে সেগুলো নির্মাণের প্রক্রিয়া অনেক জিটল। তাছাড়া স্থানীয়ভাবে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিভিন্ন বরাদ্দের মাধ্যমে ছোট উডেন-আয়রণ ব্রিজগুলো প্রতিবছর নির্মাণ বা সংস্কার করা হয়ে থাকে। যেসব ব্রিজ-কালভার্ট আইডিভুক্ত রয়েছে সেগুলো নির্মাণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।
এলজিইডির এই প্রকৌশলী জানান, তাফালবাড়ী বাজার সংলগ্ন খালের ব্রিজটি অল্পদিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে। উপজেলা পরিষদের সামনের খালের ব্রিজটিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। রায়েন্দা খালের ভেঙে যাওয়া ব্রিজটি অপসারণ করে সেখানে একটি আরসিসি ব্রিজ নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে মাটি পরীক্ষা (সয়েল টেষ্ট) সম্পন্ন করা হয়েছে। ##