আফগান সরকারের রিজার্ভ আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকে আফগান সরকারের সাড়ে ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের রিজার্ভ আটকে দিয়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসন। রোববার (১৫ আগস্ট) তালেবানের হাতে আফগান রাজধানী কাবুলের পতনের পর এমন খবর এসেছে।

মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) ওয়াশিংটন পোস্ট এই অঘোষিত পদক্ষেপের খবর দিয়েছে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী জানেট ইয়ালেন ও দ্য ট্রেজারিস অফিস অব ফরেন অ্যাসেট কন্ট্রোল এই হিসাব জব্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আফগান সরকারের রাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো সম্পদ তালেবানকে দেওয়া হবে না। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হোয়াইট হাউসের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়েছে। তালেবানকে চাপে রাখতে আরও বিভিন্ন পদক্ষেপের দিকে নজর দিচ্ছে বাইডেন প্রশাসন।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর তালেবানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার নির্বাহী আদেশ থাকায় সম্পদ জব্দে বাইডেন প্রশাসনকে নতুন করে কোনো অনুমোদন নিতে হবে না।
তালেবান-নেতৃত্বাধীন সরকারের কাছে যাতে অর্থ না পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করতে কাবুলে নগদ অর্থের চালানও বন্ধ করে দিয়েছে ওয়াাশিংটন।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে এক টুইটবার্তায় ডা আফগানিস্তান ব্যাংকের (ডিএবি) ভারপ্রাপ্ত প্রধান আজমল আহমাদি বলেন, শুক্রবার তিনি জানতে পেরেছেন যে তালেবানের হাতে তহবিল সরবরাহ করতে চায় না ওয়াশিংটন। যে কারণে ডলারের চালান বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ব্লুমবার্গের খবর অনুসারে, নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ও যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাড়ে ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারের সম্পদ রয়েছে।
এদিকে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর প্রধান নিক কার্টার বলেছেন, আফগানিস্তানে তালেবানকে নতুন সরকার গঠন করার সুযোগ দেওয়া উচিত। পশ্চিমারা কয়েক দশক ধরে বিদ্রোহীদের জঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করে আসলেও এবার তাদের আরও যৌক্তিক হিসেবে পাওয়া যেতে পারে।
ইসলামি আন্দোলনটির এক কর্মকর্তা বলেন, গত কুড়ি বছরের ছাঁচের বাইরে এসে তালেবান নেতারা বিশ্বের কাছে নিজেদের তুলে ধরবে। এই দুদশকে তালেবান নেতারা অনেকটা গোপনীয়তার সঙ্গে বসবাস করে আসছিলেন।-খবর রয়টার্সের
বুধবার (১৮ আগস্ট) সাবেক আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন নিক কার্টার। এদিন কারজাইয়ের সঙ্গে তালেবানের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা কর্মীদের প্রধান আরও বলেন, আমাদের ধৈর্য ধারণ করতে হবে। বর্তমান কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের শান্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে। তালেবানকে সরকার গঠনের সুযোগ দিতে হবে, যাতে তারা নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারেন।
১৯৯০-এর দশক থেকে মানুষ যে তালেবানের কথা স্মরণ করে আসছেন, বর্তমানের তালেবান তাদের থেকে ভিন্ন হতে পারে বলে ধারণার কথা জানিয়েছেন নিক কার্টার। ব্রিটিশ শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা বলেন, যদি আমরা তাদের কোনো সুযোগ করে দিই, তবে সম্ভবত এক যৌক্তিক তালেবানকে আবিষ্কার করতে পারবো।
এই ব্রিটিশ সেনা কর্মকর্তা বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, তারা কোনো সমগোত্রীয় লোকজনের সংস্থা না। তারা বিভিন্ন উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর একটি গ্রুপ। বিভিন্ন গ্রামীণ অঞ্চল থেকে তাদের আবির্ভাব। তারা সত্যিকার অর্থে ‘পাড়ার ছেলে’ বলতে যা বোঝায়, তা। তার পশতুন উপজাতীয় সংস্কৃতির মধ্যে বেঁচে থাকেন। তাদের জীবনের সবকিছুই পশতু সংস্কৃতির।
তার মতে, এখনকার তালেবান অনেক বেশি যৌক্তিক; কম নিপীড়নমূলক। তাদের দিকে খেয়াল করলে এখন যেসব আভাস পাবেন, তাতে তারা অনেক বেশি যৌক্তিক।
যদিও বেশ কিছু ব্রিটিশ সামরিক কর্মকর্তার মধ্যে এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আফগানিস্তানে ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর সাবেক মেজর জেনারেল ও ন্যাটোর উপদেষ্টা শার্লি হাবার্ট বলেন, তালেবানের মধুর কথাবার্তায় মুগ্ধ হওয়ার কিছু নেই। তালেবান গায়ের জোরে ক্ষমতার দখল করেছে। তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দরকার। চীন, রাশিয়াসহ পশ্চিমা বিশ্বের সমর্থন পেতে তারা এখন মরিয়া। কাজেই নারীর সমঅধিকারের ক্ষেত্রে তারা আকর্ষণীয় শব্দ আওড়াবে, এটিই স্বাভাবিক।