জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা মামুনুলদের ‘দখলমুক্ত’

গত ১৮ এপ্রিল মামুনুল হককে মোহাম্মদপুরের জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
ঢাকার মোহাম্মদপুরে হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হক ও তার ভাই মাহফুজুল হকের নিয়ন্ত্রণে থাকা মাদ্রাসার তালা ভেঙে তা ওয়াকফ এস্টেটকে বুঝিয়ে দিয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন।
সোমবার দুপুর ১২টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার ভেতরে ঢোকেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী হাকিম আব্দুল আওয়াল।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ বলেন, “জেলা প্রশাসকের লোকজন তালা ভেঙে মামলার আদেশে যে পক্ষ পেয়েছে, তাদের বুঝিয়ে দিয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”
গত ২৯ জুন বাংলাদেশ জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া সাত মসজিদ মাদ্রাসার ওয়াকফ এস্টেটের সম্পত্তি অনুমোদিত কমিটির কাছে বুঝিয়ে দিতে ঢাকা জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় ওয়াকফ প্রশাসন।
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক ও তার বড় ভাই মাহফুজুল হক এতদিন মাদ্রাসাটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। তারা এই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন।
২০২০ সালের নাশকতার এক মামলায় গত ১৮ এপ্রিল এই মাদ্রাসা থেকে মামুনুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
দখলের অভিযোগের বিষয়ে মাওলানা মাহফুজুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, “এটা ওয়াকফ সম্পত্তি। এতদিন কমিটি গঠন করে চালানো হয়েছে। কোনো অবৈধভাবে দখল করে রাখা হয়নি।”
তালা কেন দিয়েছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গতরাতে আমাকে প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, তালা দিয়ে মাদ্রাসার চাবি কওমি শিক্ষা বোর্ড আল হাইআতুল উলিয়ার চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসানের কাছে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য।
“তাই আমি তালা দিয়ে চাবি মাহমুদুল হাসানকে দিতে যাই। কিন্তু তিনি চাবি গ্রহণ করেননি।”
তিনি জানান, এই পাঁচতলা বিশিষ্ট মাদ্রাসায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী, ৫২ জন শিক্ষক ও ২৮ জন কর্মী ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে সবাই যার যার বাড়িতে ছিল। শুধু ৫০ জন শিক্ষার্থী দেখভাল করার জন্য ছিল।
“যেহেতু ওই ওয়াকফ সম্পত্তি প্রশাসন অন্য কারও কাছে দিচ্ছেন, তাই আমি চলে গেছি….।”
শফিক সালমান নামে একজন মাওলানা বলেন, “এই কাওমি মাদ্রাসাটি ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি মসজিদ ও মাদ্রাসাভিত্তিক ওয়াকফ এস্টেট।
“দলিল অনুযায়ী দুই ভাই হাজী মোহাম্মদ আলী ও হাজী মো. নূর হোসেন জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার নামে সাত মসজিদ মোহাম্মদপুরে আলী অ্যান্ড নূর রিয়েল এস্টেটের মধ্যে ১০ কাঠা জায়গা ওয়াকফ করেন।”
পরিচালনা কমিটি ও জনগণের সহযোগিতায় পরবর্তীতে সেখানে একটি ৫ তলা ভবন তৈরি করা হয়। সেখানে এক হাজার শিক্ষার্থী নিয়ে জামিয়া রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসার কার্যক্রম শুরু হয় বলে জানান তিনি।
শফিক সালমান জানান, মাওলানা মাহফুজুল হকের বাবা মাওলানা আজীজুল হক প্রথমে এই মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন, পরে ১৯৯২ সালে তিনি এর অধ্যক্ষ হন।
তিনি বলেন, “অধ্যক্ষ হওয়ার পর থেকে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করতে থাকেন। মাঝখানে ওই মাদ্রাসায় অন্য একজন অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দিলেও আজীজুল হকের ষড়যন্ত্রে টিকতে পারেনি।
“এভাবেই ওয়াকফ সম্পত্তিটি আজীজুল হক ও তার সন্তানরা দখল করে রাখেন। প্রশাসনের মাধ্যমে মাদ্রাসাটি অবৈধ দখল থেকে উদ্ধার হল।”