তরুণদের এখনই জেগে উঠার কথা বললেন মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকার চরম দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এই করোনাভাইরাসে যখন মানুষের জীবন চলে যাচ্ছে, তখন দেখুন স্বাস্থ্যখাতে কেমন দুর্নীতি চলছে। আজকে এই জাতিকে বাঁচানোর জন্য, তাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোতে নিয়ে আসার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কখনোই কোনো আন্দোলন সফল হয় না যদি আমরা ত্যাগ স্বীকার না করতে পারি। আমি অনুরোধ জানাবো, তরুণদের এখনই জেগে উঠতে হবে, এই ঘোরতর অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে উঠে দাঁড়াতে হবে।’
রোববার ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) উদ্যোগে ‘মহান স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তী: গণমাধ্যমের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা পাকাপোক্ত করার চেষ্টা চলছে- এমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখনকার সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র না থাকলে গণমাধ্যমও ভালো থাকে না। সাংবাদিক আজ ভালো নেই। ৪২ জন সাংবাদিক খুন হয়েছেন বর্তমান সরকারের আমলে। আবুল আসাদের মতো প্রবীণ সাংবাদিককেও তারা শুধু জেলে পোড়েননি, রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছেন। এটা ফ্যাসিজমের নিয়ম। প্রথমে তারা রাজনীতিকদের ধরেছে, এখন সাংবাদিকসহ ভিন্নমত দমন শুরু করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশকে বলা হচ্ছে একটা হাইব্রিড রেজিমের দেশ। আমাদের এখানে সবই আছে- এখানে সরকার আছে, জাতীয় সংসদ আছে, বুরোক্রেসি আছে, কিন্তু মানুষের অধিকার নেই। বাংলাদেশের জনগণ তাদের অধিকার ফিরে পেতে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে পরাজিত করে জনগণের সরকার, জনগণের সংসদ, জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে।’ এই অধিকার আদায়ের জন্য গণমাধ্যমকে অতীতের মতো সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী কী নির্লজ্জ একজন ব্যক্তি যে পার্লামেন্টে তার বিরুদ্ধে তার দলের লোকেরাই কথা বলছেন, বিরোধী দলের কয়েকজন কথা বলেছেন, সারাদেশের মানুষ কথা বলছেন, তারপরেও তিনি পদত্যাগ করছেন না।’
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন একাংশের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, বর্তমান সভাপতি এম আবদুল্লাহ, কবি আবদুল হাই শিকদার, বিএফইউজে একাংশের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডিইউজে একাংশের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন, বাসির জামাল, রাশেদুল হক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোরসালিন নোমানী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
শওকত মাহমুদ বলেন, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হলেও আমাদের দেশে গণমাধ্যমের ক্রান্তিকাল চলছে। ক্ষমতার প্রভাব বলয় থেকেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সবকিছু। যতটুকু স্বাধীনতা দিলে ক্ষমতবানদের সমস্যা হয় না ততটুকুই স্বাধীনতাই ভোগ করছে সংবাদমাধ্যম।
এম আবদুল্লাহ বলেন, গণমাধ্যম সরকার ও জনগণের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে। অসহায় মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, যন্ত্রণা, হতাশা, দুর্দশা, অধিকার, অসাম্য প্রভৃতি বিষয় তুলে ধরে সমাধানের পথ ত্বরান্বিত করবে গণমাধ্যম। আবার দুর্নীতি, অপরাধ, অনাচার, অবিচার তথা সমাজের নেতিবাচক দিকগুলোর বিরুদ্ধেও হবে সোচ্চার।
কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, গণতন্ত্র ও গণমাধ্যম একে অপরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতাও অপরিহার্য।
এম এ আজিজ বলেন, গণমাধ্যম মানুষের জন্য তথ্যের বৃহত্তর প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। সরকারের সমালোচনার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যায়। এতে গণমাধ্যমের ভূমিকাই সর্বাধিক।
ইলিয়াস খান বলেন, অন্যের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা গণতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। মত প্রকাশের স্বাধীনতা জনগণের একটি মৌলিক অধিকার। আলোচনা, মতপ্রকাশ হলো গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ সিঁড়ি। যেখানে গণমাধ্যম যত বেশি শক্তিশালী সেখানে গণতন্ত্র ততো বেশি শক্তিশালী।
মুরসালিন নোমানী বলেন, গণমাধ্যমের সঠিক চর্চা যেমন গণতন্ত্র রক্ষা করতে পারে, তেমনি প্রকৃত গণতন্ত্র পারে গণমাধ্যমকে স্বাধীন রাখতে। স্বাধীন গণমাধ্যম যে কোনো সরকারের সেরা বন্ধু।
সভাপতির বক্তব্যে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম স্বপ্ন ছিল বাক ও চিন্তার স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বর্তমানে এর কোনোটিই কার্যকর নেই। মিডিয়ার স্বাধীনতা ততটুকু আছে যতটুকু সরকারের পক্ষে যায়।