রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা রোগী রাখার জায়গা নেই

 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৪০। তাঁদের মধ্যে ৭৭ জনেরই আইসিইউ প্রয়োজন। ১৭টি আইসিইউ বেড, কেবিন ও ৮টি ওয়ার্ড মিলে হাসপাতালে মোট ২৩২টি করোনা শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে। এই অবস্থায় রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।

একজন রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন স্বাভাবিক পর্যায়ে এলেই তাঁকে সাধারণ করোনা ওয়ার্ডে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু রোগীর এতই চাপ যে সেই রোগী ফিরে এসে করোনা ওয়ার্ডে আর শয্যা পাচ্ছেন না। সেই অবস্থাই হয়েছে আবদুল মতিনের রোগী চম্পা বেগমের ক্ষেত্রে।

হাসপাতালে ৫ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন করোনা রোগী সৈকত হাসান (৩০)। তাঁর অবস্থার উন্নতি হওয়ায় আজ সকালে তাঁকেও আইসিইউ থেকে সাধারণ ওয়ার্ডে দেওয়া হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তাঁর মা শুকলা হাসান জানান, তাঁর ছেলে ঠিকমতো অক্সিজেন পাচ্ছেন না। তাঁর ছেলেকে আবার আইসিইউতে নিতে হবে।
এদিকে হাসপাতালে গুরুতর রোগী ছাড়া কোনো করোনা রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না। অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে গেলেই শুধু তাঁদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। অন্যদের বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিতে বলা হচ্ছে। বাসায় চিকিৎসা নিয়েও যাঁরা সুস্থ হচ্ছেন না, অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে, তাঁরাই শেষ সময়ে হাসপাতালে আসছেন। এ জন্য এবার হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যাই বেশি।

এদিকে গত বছর এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ১৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের একটি দল গঠন করা হয়েছিল। তাঁরা অনলাইনে রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এবার পরিস্থিতি গত বছরের চেয়ে বেশি খারাপ হলেও এই বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে না। ফলে রোগীরা এই সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। এই বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান ছিলেন মেডিসিন বিভাগের প্রধান আজিজুল হক আজাদ। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এবার সেই বিশেষজ্ঞ দল আর গঠন করা হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে তাঁদের কিছু বলেনি। এ জন্য তাঁরা অনলাইনে চিকিৎসা দিচ্ছেন না। তবে জটিল রোগীদের তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন।

হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, এবার করোনা রোগীদের ধরন একটু অন্য রকম। যে রোগী আসছেন, তাঁরই অক্সিজেনের প্রয়োজন, তাঁরই আইসিইউ প্রয়োজন। পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ করোনা রোগীর ফুসফুসে সমস্যা। তাঁরা করোনা থেকে রেহাই পেলেও ফুসফুসের অসুখ থেকেই যাবে। তিনি বলেন, আজ সকালে সুব্রত নামের ২৫ বছর বয়সী এক তরুণ মারা গেছেন। দুই দিন আগে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এত কম বয়সী ছেলেটাকে বাঁচানো গেল না! ওই তরুণ মাস্ক পরতেন না। মোস্তফা কামাল বললেন, মাস্ক পরার ব্যাপারে সবারই সচেতন হওয়া উচিত। হাসপাতালে আর করোনা রোগী রাখার জায়গা নেই। এখন মেঝেতে রাখতে হবে। মাল্টিপোস্ট ব্যবহার করে একটি পয়েন্ট থেকেই পাঁচজনকে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

আইসিইউ ওয়ার্ডের পেছনে দেখা গেল, তিনটা অক্সিজেন সিলিন্ডার, দুজন রোগীর স্বজন অপেক্ষায় আছেন। তাঁদের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর এলাকায়। দুই স্বজনের একজনের নাম মো. নাইম। তিনি বলেন, তাঁর রোগী ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে আছেন। তাঁদের আইসিইউ দরকার। কিন্তু সেখানে শয্যা খালি নেই। এখন সাধারণ ওয়ার্ডে আছেন। গতকাল বুধবার বিকেলে ঠিকমতো অক্সিজেন পাচ্ছিল না। তাই সিলিন্ডার কিনে নিয়ে প্রস্তুত হয়ে আছেন।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম ইয়াজদানী প্রথম আলোকে বলেন, দিনেই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি করোনা রোগী চলে এসেছেন। রাত এখনো বাকি। তবে বিভাগীয় কমিশনার রাজশাহী সদর হাসপাতালে ১ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানান্তর করার উদ্যোগ নিয়েছেন। আজ দুপুরে তাঁরা সেটা পরিদর্শন করেছেন। গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা মেরামতের একটা বাজেট করবেন। বাজেট এলে তখন সেটা করা যাবে। আপাতত অতিরিক্ত করোনা রোগীদের মেঝেতে রাখতে হবে। তাঁদের অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে। প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে।

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন