আসাম বিজিপির দখলেই

 

ভারতের উত্তর-পূর্ব ও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্য আসামের বিধানসভায় টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রইল মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের বিজেপিই। কংগ্রেসের ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।

এদিকে কেরালায় টানা দ্বিতীয় মেয়াদে বড় জয় পেল মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের বাম জোট এলডিএফ। এখানে কংগ্রেস এবারও ব্যর্থ হলো। তবে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ূ রাজ্যে কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে জয় নিশ্চিত করেছে এম কে স্ট্যালিনের দল ডিএমকে নেতৃত্বাধীন জোট। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পদুচেরিতে এনআরসি জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে বিজেপি।

রোববার এসব রাজ্যের নিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন।

আসামে এবারের নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর ছিল জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)। কয়েক লাখ মানুষ নাগরিকত্ব হারানোর শঙ্কায় রয়েছে সেখানে। ভারতের প্রথম রাজ্য হিসেবে আসামে এনআরসি বাস্তবায়ন শুরু করে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। এ নিয়ে রাজ্যের একাংশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও তা চাপা দিয়ে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখল বিজেপি। ২০১৬ সালে এখানে প্রথমবারের মতো সরকার গঠন করে বিজেপি জোট।

আসাম বিধানসভায় মোট আসন ১২৬টি। এখানে তিন ধাপে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এ রাজ্যে ভোট পড়েছে ৮২ দশমিক শতাংশ।
বেসরকারি ফলাফলে দেখা গেছে, বিজেপি, আসাম গণপরিষদ ও বোড়ো জনগোষ্ঠীর দল ইউপিপিএল জোট পেয়েছে ৭৬টি আসন। কংগ্রেস, এআইইউডিএফ ও বাম জোট পেয়েছে ৪৮ আসন।

আসামে এনআরসির বিরুদ্ধে জড় তুলেছিল কংগ্রেস। দেশজুড়েই বিতর্কিত এই নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবি ওঠে। কংগ্রেসও শুরু থেকে এর বিরোধিতায় সরব ছিল। এনআরসি বাতিলের প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্থানীয় কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। তবে আসামে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের এই লড়াই এবারও ব্যর্থ হলো। বিপরীতে বন্দিশালা বাড়াতে থাকা বিজেপির নেতৃত্বাধীন জোটকেই আবার ক্ষমতায় বসাল আসামের মানুষ। অবশ্য এই জয়ে আসাম গণপরিষদ ও এআইইউডিএফ বড় ভূমিকা রেখেছে। স্থানীয় মানুষের মধ্যে অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ে যে ভীতি ছিল, তাকেই মূলত কাজে লাগিয়েছে তারা।

আসাম বিজেপির বড় মুখ মুখ্যমন্ত্রী সনোয়াল জিতেছেন মাজাউলি আসনে এবং অর্থ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্বশর্মা জিতেছেন জালুকবাড়ি আসনে। এবারের নির্বাচনে আলোচিত প্রার্থী ছিলেন অখিল গগৈ। কারাবন্দি অবস্থায় ভোটের লড়াই করেছিলেন। শিবসাগর আসন থেকে জিতেছেন তিনিও।

কেরালা: ৪০ বছর ধরে কেরালায় পরপর দু’বার ক্ষমতায় আসতে পারেনি কোনো দল। কংগ্রেস ও বাম জোট ঘুরেফিরে ক্ষমতায় এসেছে। তবে এবার সেই প্রথা ভেঙে গেল। কেরালায় এবারও সিপিএমের নেতৃত্বাধীন এলডিএফ জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখল। এ রাজ্যের বিধানসভায় মোট আসন ১৪০টি। জয়ের জন্য প্রয়োজন ৭১টি আসন। সেখানে বামজোট (এলডিএফ) পেয়েছে ৯৭টি ও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ ৪৩টি। বিজেপি একটি আসনও পায়নি। কান্নুর জেলার ধর্মাদম আসনে মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন জিতেছেন।

কেরালায় এলডিএফের জয়ের নেপথ্যে করোনা মোকাবিলা ও মহামারিতে জনগণের পাশে থাকা বড় ভূমিকা রেখেছে। ভারতের অন্যান্য রাজ্য যেখানে দ্বিতীয় ঢেউয়ে পর্যুদস্তু, সেখানে কেরালার অবস্থা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

তামিলনাড়ূ: ভারতের দক্ষিণের এ রাজ্যে ডিএমকে-কংগ্রেস জোট বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছে। এ রাজ্যের বিধানসভা মোট আসন ২৩৪টি। জয়ের জন্য প্রয়োজন ১১৮টি আসন। সেখানে ডিএমকে জোট পেয়েছে ১৪৯ আসন। প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার দল এডিএমকের সঙ্গে জোট বেঁধেছিল বিজেপি। এ জোট পেয়েছে ৮৫ আসন।

পদুচেরি: পদুচেরি ভারতের কেন্দ্রশাসিত একটি অঞ্চল। অপেক্ষাকৃত কম জনসংখ্যার এই অঞ্চলের বিধানসভায় রয়েছে ৩০টি আসন। জয়ের জন্য প্রয়োজন ১৬টি। এখানে এবার আঞ্চলিক দল এনআরসির সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করেছে বিজেপি। এই জোট পেয়েছে ১৫টি আসন। তাদের বিরুদ্ধে কংগ্রেস জোট পেয়েছে ৮টি। সূত্র: এনডিটিভি ও হিন্দুস্তান টাইমস।

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

লাইভ রেডিও
সর্বশেষ সংবাদ