কোটা সংস্কার আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই (শুক্রবার) দ্বিতীয় দিনের মতো পালিত ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে রূপ নেয় মারাত্মক সহিংসতায়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, হামলা, গুলি, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং প্রাণহানির ঘটনায় গোটা দেশজুড়ে চরম অস্থিরতা তৈরি হয়।
নিউ এইজের তথ্য অনুযায়ী, এদিন সারাদেশে অন্তত ৬৭ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ঢাকায় নিহত হন ৬২ জন। ঢাকার বাইরে রংপুরে ২ জন, সাভার, সিলেট ও নরসিংদীতে একজন করে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে, দৈনিক সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজধানীর বাইরে ১২ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে রংপুরে ৫ জন, এবং গাজীপুর, বগুড়া, ময়মনসিংহ, সিলেট ও মাদারীপুরে একজন করে প্রাণ হারান।
সারা দিনজুড়ে রাজধানীর ধানমন্ডি, রামপুরা, যাত্রাবাড়ী, বাড্ডা, মোহাম্মদপুর, উত্তরা ও মহাখালী এলাকায় শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়।
রাস্তায় নির্বিচারে গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল, বিশেষ করে ঢাকা মেডিকেল, বারডেম ও পপুলার মেডিকেলে গুলিবিদ্ধ ও আহত মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
সংশ্লিষ্ট দিনটিতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে:
- রামপুরা থানা ও ফাঁড়ি
- মিরপুর-১০ থেকে পুরবী পর্যন্ত ৫টি পুলিশ বক্স
- বিআরটিএ সদর কার্যালয় (বনানী) ও মেট্রো-১ অফিস (মিরপুর)
- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুরনো ভবন (মহাখালী)
- মিরপুর বিআরটিএ অফিসে রাখা সরকারি গাড়িগুলোতে অগ্নিসংযোগ
- মেট্রোরেলের কাজীপাড়া স্টেশনে ভাঙচুর, পরে মেট্রোরেল চলাচল স্থগিত ঘোষণা
ঢাকা ছাড়াও খুলনা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও নরসিংদীতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
বিশেষভাবে, নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালিয়ে কারারক্ষীদের জিম্মি করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা সারা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
রাতে গণভবনে জরুরি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি, বিজিবির ডিজি ও ডিএমপি কমিশনার বৈঠক করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েন করা হয়।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম মধ্যরাতে গ্রেফতার হন।
তবে আন্দোলনকারীরা সরকারের সংলাপ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নতুন ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেন এবং ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ চলমান রাখার ঘোষণা দেন।
শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে রাজধানীর শাহবাগে ‘সন্তানের পাশে অভিভাবক’ ব্যানারে মানববন্ধন করেন অভিভাবকরা।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আন্দোলনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আন্দোলনে ‘বিএনপি-জামায়াতের মদদ’ রয়েছে দাবি করে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে।
তবে র্যাব এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, তারা আকাশ থেকে শুধু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।