বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দীর্ঘ ৩১ বছরের বেশি সময় সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষকতা করে সদ্য অবসর গ্রহণ করেছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী ৫৩ নম্বর লক্ষীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবু বক্কর সিদ্দিক। তার বিদায়কে কেন্দ্র করে বুধবার বিকেলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এক ব্যতিক্রমী ও বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শিক্ষার্থী, অভিভাবক, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিদায় সংবর্ধনা পরিণত হয় এক আবেগঘন মিলনমেলায়। বিদ্যালয় চত্বর ছিল কান্না, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসার এক অনন্য চিত্রপটে।
ফুলেল শুভেচ্ছা ও মাল্যদান শেষে বিদ্যালয় থেকে ছাদখোলা গাড়িতে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে ‘রাজকীয় শোভাযাত্রা’তে শিক্ষক আবু বক্কর সিদ্দিককে তার বাড়ি পৌঁছে দেন সহকর্মী, শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। শতাধিক মোটরসাইকেলের বহরসহ এই আয়োজন এলাকার মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। বিদায়ের এই সম্মান দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে অশ্রুসিক্ত হন তিনি।
বিদায়ী বক্তব্যে আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন—
“৩১ বছর ৭ মাস ১৫ দিন পর যখন শেষবারের মতো অফিসের খাতায় সই করলাম, এক অন্যরকম অনুভূতি হলো। শিক্ষার্থী, সহকর্মী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর ভালোবাসায় আমি কৃতজ্ঞ। আসুন আমরা হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলি— তাহলেই দেশ এগিয়ে যাবে।”
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা গীতা রানী সরকার। সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি কামিনি কান্ত রায় এবং সঞ্চালনা করেন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব সাইদুর রহমান সোহাগ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোপাল চন্দ্র দেব শর্মা, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমিতির আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান বাবু, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লিপিকা রায়, সহকারী শিক্ষক খাদিজা শাপলা, আফসানা নাহারসহ বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক ও অভিভাবকগণ।
শিক্ষার্থীরা একে একে তাদের স্মৃতিচারণে বলেন, “স্যার ছিলেন আমাদের পথপ্রদর্শক, অভিভাবকসুলভ ও অনুপ্রেরণার উৎস।”
আবু বক্কর সিদ্দিকের অবদান:
১৯৯৩ সালে পলাশবাড়ী-১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি। ২০১০ সালে লক্ষীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে তিনি শিক্ষার মানোন্নয়ন ও বিদ্যালয়ের পরিবেশে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনেন।
শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি সাহিত্য, সমাজ ও ধর্মীয় কর্মকাণ্ডেও ছিলেন সক্রিয়। তিনি ‘লক্ষীপুর মিতালী সংঘ’-এর প্রতিষ্ঠাতা, ‘বীরগঞ্জ সাহিত্য সংসদ’-এর সহ-সভাপতি এবং ‘লক্ষীপুর জামে মসজিদ কমিটি’-র সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার প্রকাশিত ছড়াগ্রন্থ “ছন্দে ছন্দে শিখি আনন্দে” শিশু-কিশোরদের কাছে ব্যাপক সমাদৃত।